বৃহস্পতিবার ● ৫ জানুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » দেশে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ অনিরাপদ গর্ভপাত
দেশে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ অনিরাপদ গর্ভপাত
নিজস্ব প্রতিবেদক
অনিরাপদ গর্ভপাতের কারণে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ উইমেন্স হেলথ কোয়ালিশনের (বিডব্লিউএইচসি)। সংস্থাটির চেয়ারপারসন নাসিমনু আরা হক মিনু বলেছেন, অনিরাপদ গর্ভপাত মাতৃমৃত্যুও রোধের পথে প্রধান অন্তরায়। বাংলাদেশে এ ধরনের মাতৃমৃত্যু কমানোর জন্য ‘মাসিক নিয়মিতকরণ’- (মিনিস্ট্রুয়াল রেগুলেশন সংক্ষেপে এম. আর.) ব্যাপাওে নারীদেও সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ বিষয়ে শুধু নারীই নয়, পুরুষদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংস্থাটির গত ৪০ বছরের সফলতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করতে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গণমাধ্যকর্মীদের নিয়ে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নাসিমনু আরা হক বলেন, মাতৃমৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অনিরাপদ এমআর বা গর্ভপাত। তাই একজন গর্ভবতীকে মাসিক নিয়মিতকরণের আগে অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। মাসিক নিয়মিতকরণের ফলোআপ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন জটিলতা বা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারীদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। নারীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে।
সংস্থাটির ভাইস চেয়ারপারসন জাহানারা সাদেক বলেন, ‘১৯৯০ সালে আমরা ‘এম আর’ কর্মসূচি শুরু করেছিলাম। তখন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছি বলে আজ কথা বলতে পারছি। সেই সময়ে ট্যাবু (সামজিকভাবে যেটি প্রকাশ্যে বলা মানা) ভাঙাই ছিলো চ্যালেঞ্জ। আজ অনেকটাই এগিয়েছি বলতে হবে, আমরা এখন মেয়েদের মাসিক নিয়ে কথা বলতে পারছি। তবে এই কথা বলাতেই আমরা সীমাবদ্ধ নই। এখন আমরা কাজ করছি প্রত্যন্ত অঞ্চলে দরিদ্র নারীদের নিয়ে।’
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শরীফ হেলাল বলেন, ‘দেশের বিভন্ন স্থানে স্যাটেলাইট স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করে বিপুল সংখ্যক জনগণকে নিরাপদ এমআর, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, শিশু স্বাস্থ্য, টিকাদান কর্মসূচিসহ সাধারণ স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আনতে পেরেছি। এমনকি নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, বাল্যবিয়ে রোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে সচেতন করে তুলতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমরা চা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছি। এখন কাজ করবো চরাঞ্চলের মানুষদের নিয়ে। তাদের নিয়ে কাজ করাটা এখনো চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে আমরা গ্রহণ করেছি মূলত আগামীর বাংলাদেশকে সুন্দর করার জন্য।
অনুষ্ঠানে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৯৮০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিডব্লিউএইচসি নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট ৭ কোটি ৮৮ লাখ ২২ হাজার ৩৫৯ জনকে স্বাস্থ্যসেবাসহ স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করেছে। তার মধ্যে এমআর সেবাগ্রহিতা নারী ৫ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯ জন এবং এমআর পরবর্তীসেবা দিয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৪ জন নারীকে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি প্রদান করা হয়েছে ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩৫ জনকে, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ১০ লাখ ৬৩ হাজার ০৯৮৭, টিকা প্রদান করেছে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৩৬৯ জনকে, মাতৃত্বকালীন সেবা দেয়া হয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার ৫০২ জনকে, কাউন্সেলিং সেবা নিয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ ১৭ হাজার ১০২ জন। এভাবে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সমাজের নানা শ্রেণিপেশার সুবিধাবঞ্চিত নারীর স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখায় সংস্থাটি দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছে।
বিষয়: #দেশে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ অনিরাপদ গর্ভপাত