শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
রবিবার ● ৮ জানুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে দেশ
প্রচ্ছদ » জাতীয় » প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে দেশ
২৪৯ বার পঠিত
রবিবার ● ৮ জানুয়ারী ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে দেশ

---

# শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস

# ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

# ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে ফেরি, লঞ্চ, বাস ও বিমান চলাচল

শাহনাজ পারভীন এলিস

শনিবার সকাল ৯টা। রাজধানীর ধানমণ্ডির শংকর বাসটার্মিনাল। তখনও সূর্য্যমিামার দেখা নেই, কুয়াশাচ্ছন্ন চারপাশ। সেখানে দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছিলেন চাকরিজীবী এক নারী, কিন্তু রিকশার দেখা নেই। বিশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর আসা এক রিকশাচালককে তিনি বললেন শ্যামলী যাবে? উত্তরে মধ্যবয়সী ওই লোক বললেন, ‘আপা ভোর ৬টায় রিকশা নিয়ে বের হইছি। শীতে এমন অবস্থা যে, এখন আর পায়ে প্যাডেল মারতে পারছি না আপা। তাই বাসায় চলে যাবো আপা।’ কয়েক দিনের টানা শৈত্য প্রবাহে রাজধানী ঢাকার শ্রমজীবী মানুষের যখন এমন অবস্থা, তখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে সারাদেশের শীতে কী ধরনের বিপর্যয় চলছে। হিমেল বাতাস আর কুয়াশার দাপটে হাড় কাঁপানো এই শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে ভাসমান ছিন্নমূল মানুষেরা।

পৌষের মাঝামাঝি এই সময়ে প্রচণ্ড শীত আর ঘন কুয়াশা কাবু হয়ে পড়ছে মানুষ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জন জীবন। শনিবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়, ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই জেলায় গত দুদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করেছে। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শনিবার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এ পর্যন্ত ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ফলে দিনভর সূর্যেও দেখা মেলনি রাজধানীতেও। এছাড়া ঘন কুয়াশার কারণে প্রায়ই বন্ধ রাখতে হচ্ছে ফেরি, লঞ্চ, বাস ও বিমান চলাচল।

নতুন বছরের শুরুতেই ঢাকাসহ সারাদেশে চলমান শৈত্যপ্রবাহে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। রাজধানীতে তীব্র শীতে বেশি দুরবস্থায় পড়েছেন রাস্তায় থাকা ভাসমান মানুষ এবং হতদরিদ্ররা। অনেককে রাস্তার পাশে বা ফুটপাতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, পঞ্চগড় ও যশোর অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ওইসব অঞ্চলে গত দু-তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সন্ধ্যার পর মানুষের বাইরে চলাচল অনেক কমে গেছে।

---

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন সংবাদ সারাবেলাকে জানিয়েছেন, মৌসুমী লঘুচাপের প্রভাবে সারাদেশে চলমান এই শৈত্যপ্রবাহ আরও দুই থেকে তিনদিন অব্যাহত থাকবে। চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও শৈত্যপ্রবাহ বেশি বিরাজ করছে নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও যশোর অঞ্চলে। এরপর শীতের তীব্রতা কিছুটা কমলেও এর প্রভাব বিরাজমান থাকবে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকায় চুয়াডাঙ্গায় বিপর্যস্ত  হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঘন কুয়াশার কারণে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বেলা গড়িয়ে দুপুর হলেও সূর্যের দেখা মিলছে না। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শনিবার (৭ জানুয়ারি) চুয়াডাঙ্গায় সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ হিসাবে শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি কমেছে শনিবারের তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

তীব্র এই শীতে চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া ছিন্নমুল মানুষ। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাহিরে বের হচ্ছে না। ফলে আয় কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে অনেকের। এদিকে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায়, চুয়াডাঙ্গার হাসপাতালগুলোতে শীতজনীত রোগীর সংখ্যা ছিলো চোখে পড়ার মত। তীব্র শীতে শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রায় ৩৫০ জন রোগী শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি। এছাড়া হাসপাতালে বহির্বিভাগে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শীতের তীব্রতায় কাঁপছে দেশের উত্তরের সীমান্ত এলাকার জনপদ পঞ্চগড়। সেখানেও হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে বাড়ছে রোগী চাপ। শীত বাড়ায় করোনার বাড়ন্ত এই সময়ে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্ক ও শিশুরা, হাসপাতালে বেড়েছে রোগীদের ভিড়। স্থানীয়রা জানায়, কদিন ধরেই শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে। বিকেল গড়লেই উত্তর-পূর্বকোণ থেকে বইতে থাকে ঠান্ডা বাতাস। গৃহিণীরা জানান, রাতে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়। ঘরের আসবাবপত্র, বিছানাপত্র থেকে শুরু করে ফ্লোর, দরজা স্পর্শ করলে হাত অবশ হয়ে আসে। রাতে ও সকালে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে হচ্ছে। এদিকে প্রচন্ড কুয়াশার কারণে চা বাগানের চায়ের গাছ কুঁকড়ে যাচ্ছে। ফলে বাগানীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

---

চাঁদপুরেও জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত নৌযান চলাচল। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা। দুপুরে শহরের রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র শীতে ভাসমান জনগোষ্ঠীসহ নিম্নআয়ের মানুষরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তাই অনেকটা অলস সময় পার করছেন সবাই। একই চিত্র চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল ও হরিণা ফেরিঘাটে। অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে।

এছাড়া শীতের তীব্রতা রয়েছে রাজশাহী, পাবনা, নীলফামারী, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। এদিকে আবহাওয়া পূর্বাভাসে আগেই বলা হয়েছিল, চলতি জানুয়ারিতে দেশে দুই থেকে তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।



বিষয়: #



আর্কাইভ