বুধবার ● ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আসিফ আত্মগোপনে, ধারণা ইসি’র
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আসিফ আত্মগোপনে, ধারণা ইসি’র
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচন
কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে লুকিয়ে থাকলে, তাকে খুঁজে বের করা কঠিন: ইসি আনিছুর
বিশেষ প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ আহমেদকে উদ্ধারের নির্দেশ দিলেও নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের ধারণা, তিনি নিজেই লুকিয়ে আছেন। একই সাথে আসিফের নিখোঁজের ঘটনায় সরকারি কোন বাহিনী জড়িত নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসি আনিছুর রহমান বলেন, ‘একটা লোক যদি লুকিয়ে থাকে ইচ্ছাকৃতভাবে, তাহলে তো তাকে খুঁজে বের করা কঠিন। আমাদের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত আছে, তাতে আত্মগোপনে আছেন বলেই ধারণা জাগে। আমরা একটা ভিডিও দেখেছি, তাতে মনে হয় আত্মগোপনের পরিকল্পনা আগেই করা ছিল এবং সেটাই ঘটেছে। তাকে খুঁজে পেলে বিষয়টি জানা যাবে। নির্দেশনা দেওয়া আছে যে, তাকে খুঁজে বের করে গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখতে হবে। আমাদের কাছে তথ্য আছে- এ ঘটনায় সরকারি কোন বাহিনীর সম্পৃক্ততা নেই।
তিনি বলেন, ‘তার নিখোঁজের সংবাদ যেহেতু গণমাধ্যমে আসার পর আমরা মাঠ প্রশাসনে কথা বলেছি। এরপর ডিসি, এসপি ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। কী ঘটেছে সে রিপোর্ট চেয়েছি। তারা বলেছেন, ওই ব্যক্তি কোথায় আছে, সেটা একবার চিহ্নিত করা গিয়েছিল। ফোন বন্ধ ছিল বলে পরে আর অবস্থান জানা যায়নি। তাকে খুঁজে বের করতে সব সরকারি সংস্থা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা একটি রেকর্ড পেয়েছি, তাতে তিনি তার স্ত্রীকে বলছেন যে কী কী আনতে হবে। সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দিতে হবে এবং ১০ মিনিট পর উনি বের হলে চালু করতে হবে, তার মানে কী? মানে হচ্ছে যে তারা একটা পরিকল্পনা করেছে, এটাই আমরা অনুমান করছি। হয়তো তার অন্য কোন উদ্দেশ্যে থাকতে পারে বা তার নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য এমনটি করতে পারে। এছাড়া তিনি নিখোঁজ হয়ে থাকলে বিষয়টি থানায় বা রিটার্নিং অফিসারকে কেন পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। থানায় একটা জিডি তো করতে হয়, তারা তা করেননি। কেন করেননি তার স্ত্রীকে এমন প্রশ্ন করা হলে উত্তর ছিলো সময় পাননি। রিটার্নিং অফিসার আমাদের কাছে একটা জিনিস পাঠিয়েছেন। সেখানে তারা স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে সুস্পষ্ট কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি উদ্ঘাটনে দায়িত্বরতদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা তাকে লোকেট করা মাত্রই মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসা হবে।
নিখোঁজ ওই প্রার্থীর ভিডিওয়ের বিষয়ে ইসি আনিছুর বলেন, যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে এবং গণমাধ্যমে যে নিউজ এসেছে তাতে মনে হয় এটি তার আগের পরিকল্পনা ছিল। পুরোটা জানা যাবে তাকে খুঁজে পাওয়ার পর। এ বিষয়ে আরেক নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা গত সোমবার বলেছিলেন, ওই নিখোঁজ প্রার্থীর আসলে কী ঘটেছে তা জানতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন অফিসারকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ঘটনার সত্যতা কতটুকু তা স্পষ্ট হবে।
আবু আসিফ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী। পরিবারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার রাত থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে গত ১০ ডিসেম্বর সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আবদুস সাত্তার। তার পদত্যাগের পর ওই শূন্য আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আসিফ। তিনি আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন, উপজেলা পরিষদেরও সাবেক চেয়ারম্যান তিনি। ভোটে দাঁড়ানোয় তাকেও বিএনপি দল থেকে বহিষ্কার করে।
এদিকে, কাগজে-কলমে এই উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ জন প্রার্থী। জাতীয় পার্টির দু’বারের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা এর আগে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে চার প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে বিএনপি থেকে সদ্য পদত্যাগী সংসদ সদস্য ও দলটি থেকে বহিষ্কৃত উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল হামিদ (ভাসানী), জাকের পার্টির মো. জহিরুল হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ।
বিষয়: #ধারণা ইসি’র #ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আসিফ আত্মগোপনে