শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
বৃহস্পতিবার ● ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৪ লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত
প্রচ্ছদ » জাতীয় » প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৪ লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত
২৭৭ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৪ লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত

---

বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস উদযাপন

রোগাক্রান্ত শিশুর বেশির ভাগই ব্লাড ক্যানসরে আক্রান্ত

রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকার পরামর্শ

উন্নত চিকিৎসায় ৭০ ভাগ রোগী ভালো হয়

শাহনাজ পারভীন এলিস

বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। প্রতিবছরই বাড়ছে শিশু ক্যানসার রোগীর সংখ্যা। তবে আক্রান্ত শিশুদের বেশিভাগই ব্লাড ক্যানসার বা লিউকোমিয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত হলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে শতকরা ৭০ ভাগ রোগী ভালো হয়। উন্নত দেশগুলোতে ক্যানসার ভাল হওয়া রোগীর হার শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ।

এমনই প্রেক্ষাপটে বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে পালিত হয় শিশু ক্যানসার দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিলো- ‘বেটার সারভাইভ্যাল ইজ অ্যাচিভেবল’; যার অর্থ হচ্ছে- ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুর ভালোভাবে বেঁচে থাকাটাও অর্জনযোগ্য।

বিএসএমইউ এর শিশু হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এ টি এম আতিকুর রহমান স্বদেশভূমিকে বলেছেন, ‘শিশুদের অনেক ক্যানসারই নিরাময়যোগ্য। সময়মতো চিকিৎসা করা হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেশ ভালো। তিনি জানান, শিশুদের যেসব ক্যানসার হয়, তার মধ্যে রক্তের ক্যানসার বা লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, ব্রেন টিউমার, নিউরো ব্লাসটোমা, উইলমস টিউমার অন্যতম। নানা কারণেই হতে পারে শিশুদের ক্যানসার, তার মধ্যে একটি হলো জেনেটিক মিউটেশন। যেমন- রেটিনো ব্লাসটোমা এমন একটি চোখের ক্যানসার, যা শিশুর জেনেটিক মিউটেশনের কারণে হয়ে থাকে। এই জেনেটিক মিউটেশন শিশু তার বাবা অথবা মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে থাকে। অন্যদিকে কিডনির ক্যানসার উইলমস টিউমারের জেনেটিক মিউটেশন গর্ভাবস্থাতেই শুরু হয়। অনেক সময় নানা ধরনের জীবাণু যেমন এপস্টিন-বার ভাইরাস সংক্রমণ থেকে লিম্ফোমা হতে পারে। অন্যদিকে নানা ধরনের রেডিয়েশন বা বিকিরণের কারণেও ক্যানসার হতে পারে।’

শিশুর কী ধরনের সমস্যাগুলো দেখা দিলে ক্যানসার সন্দেহ করবেন সে বিষয়ে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক রাহনুমা আমিন বলেছেন, সঠিক সময়ে রোগ সনাক্ত এবং আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার আওতায় আনতে এই রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। তা নাহলে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়ে যায় এবং আক্রান্ত ওই শিশু সুস্থ হয়ে উঠার সম্ভাবনা কমে যায়। ক্যানসার সচেতনতায় তাই নিম্নোক্ত ৪টি লক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।

১. শিশুর ঘন ঘন সর্দি, কাশি, জ্বর বা মূত্রনালির সংক্রমণ হলে।

২. শরীরের যে কোনো স্থানে কোনো ধরনের মাংসপিণ্ড বেড়ে গেলে।

৩. খুব দ্রুত শিশুর ওজন কমে গেলে।

৪. শিশুর রক্তশূন্যতা, শ্বাসকষ্ট, রক্তপাত, চামড়ার নিচে লাল দাগ।

গতকাল বুধবার বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস উপলক্ষে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মিলনায়তনে বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। শিশু হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে ‘বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ইন চিলড্রেন অ্যান্ড ক্যানসার ভ্যাকসিন ইন চাইল্ডহুড ম্যালিগন্যান্সি’ শীর্ষক ওই সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে আলোচকরা জানান, কিছু গুরুতর ক্যানসারের চিকিৎসায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা স্টেম সেল প্রতিস্থাপন একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। উন্নত বিশ্বে এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে সফলতার হার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশেও এ পদ্ধতি ব্যবহার করে চিকিৎসা শুরু হয়েছে; কিন্তু তা পুরোদমে শুরু করা যায়নি। দিবসটি উপলক্ষে সেমিনার ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির ডি-ব্লকের সামনে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ক্যানসার প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। ক্যানসার প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি স্টেম সেল থেরাপি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বাস্তবায়ন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা ৩১ শয্যার ওয়ার্ডে ১০ হাজার শিশু রোগীকে সেবা দিয়েছেন, যা প্রশংসার দাবি রাখে।

সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন মোহাম্মদ হোসেন, প্রক্টর মো. হাবিবুর রহমান, হল প্রভোস্ট এস এম মোস্তফা জামান, শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান মানিক কুমার তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন শিশু হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এ টি এম আতিকুর রহমান।

সেমিনারে ‘বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ইন চিলড্রেন’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের নারায়ণা হেলথ সিটি বেঙ্গালুরুর জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট ডা. সুনীল ভাট। এছাড়া ‘ক্যানসার ভ্যাকসিন ইন চাইল্ডহুড ম্যালিগনেন্সি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক রেনেসা ইসলাম।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ক্যানসারের নানা ধরনের চিকিৎসা বর্তমানে আমাদের দেশেই সহজলভ্য। চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার আক্রান্ত শিশু এবং তার পরিবারের মনোজগতের কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। তারা এ সময় খুবই বিপর্যস্ত থাকেন। তাদের মানসিকভাবে উজ্জীবিত রাখার জন্য পাশে থাকতে হবে। তাই ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের পাশে থাকা এবং সমাজের সামর্থ্যবান মানুষদের তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোর জরুরি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



বিষয়: #



আর্কাইভ