শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
বৃহস্পতিবার ● ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ
প্রচ্ছদ » জাতীয় » শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ
২৪০ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ

একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন, বাংলাকে জাতিসংঘের 

দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদার দাবি বাঙালি জাতির

শাহনাজ পারভীন এলিস 

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদ হওয়া বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানিয়েছে গোটা বাঙালি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারিতে দিরভর ভাষা শহীদদের স্মরণ আর সর্বস্তরের মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে মঙ্গলবার লাখো মানুষের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতির মিনারে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নানা শ্রেণিপেশার মানুষের পক্ষ থেকে দেয়া শুভেচ্ছায় ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে শহীদ বেদি।

ভাষা শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা 

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে শহীদ হওয়া বীরদের স্মরণে তৈরি হওয়া রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছান রাত ১২টার আগেই। এরপর রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে প্রথমে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাজানো হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে পুনরায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, কামরুল ইসলাম, এ এইচ এম খাইরুজ্জমান লিটন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন,  যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম ও ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ। পরে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরেও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।

আওয়ামী লীগের পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, তিন বাহিনীর প্রধানগণ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষে জাতীয় পার্টির নেতা জি এম কাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারগণ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ, র‌্যাব, বিজিবি, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলমনাই এসোসিয়েশন, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও সিনেট সদস্য, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম, গণফোরাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলা একাডেমি, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, শিল্পকলা একাডেমী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে সেখানে ঢল নামে সর্বস্তরের নানা শ্রেণিপেশার মানুষের। এসময় তারা বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের দাবির তুলে ধরেন। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলাদা করে প্রভাতফেরি সহকারে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজধানীর স্কুল-কলেজ ও পাড়া-মহল্লায়ও ছিল নানা আয়োজন। অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সবাই। এই শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় বেঁচে থাকবে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। এসব আয়োজনে শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ, জারি হয় ১৪৪ ধারা, ভেঙে ফেলা হয় শোষকের শৃঙ্খল। রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। গুলিতে বিদীর্ণ হয় বুক। শহীদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকে। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে ইতিহাস গড়েন তারা। বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরে জন্ম নেয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।

মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের এই দিনটিকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালে। অমর একুশে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের চেতনার প্রতীক ‘শহীদ মিনার’ এখন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ সব মহাদেশের বহুভাষিক চেতনার স্মারক।



বিষয়: #



আর্কাইভ