শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
বৃহস্পতিবার ● ২৩ মার্চ ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » রমজানের শুরুতেই অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার
প্রচ্ছদ » জাতীয় » রমজানের শুরুতেই অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার
২৫৫ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২৩ মার্চ ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

রমজানের শুরুতেই অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

---

শাহনাজ পারভীন এলিস

বছর ঘুরে আবারও এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। এই মাসকে ঘিরে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে চলছে সেহরি ও ইফতারের নানা আয়োজন। আর সাধারণ মানুষের এই বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে রমজানের শুরুতেই অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। বিশেষ করে এসময়ে অস্বাভাবিক বেড়েছে চাহিদার শীর্ষে থাকা পণ্য- ছোলা, মসুর ডাল, মটর ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের দাম। অন্যান্য বছর এসব পণ্যের দাম রোজার এক সপ্তাহ আগে বাড়লেও এবার তা বেড়েছে দুই মাস আগেই। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অজুহাত হলো- আমদানি ব্যয়, ডলারের দাম ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ ইত্যাদি। বাজাওে গিয়ে নিত্যপণ্যের চড়া দাম দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ ও দেশের খুচরা ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলার দাম ছিল ৭০-৭৫ টাকা। অথচ এ বছরে একই সময়ে প্রতি কেজি ছোলা ৮৫-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনির দাম ৭৮-৮০ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। গতবছর এক লিটার ভোজ্যতেলের দাম ছিলো ১৫৮-১৬৫ টাকা। এবার তা কিনতে হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এক কেজি মটর ডালের দাম ৫০-৬০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-৭৫ টাকায়। প্রতি কেজি মোটা মসুর ডালের দাম ৯৫-১০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩০-১৩৫ টাকা। গত বছর মানভেদে যে খেজুরের দাম প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা ছিলো, এবার সেই খেজুর কিনতে হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়।

---

নিত্যপণ্যের দামের এই ঊর্ধ্বগতির সাথে তাল মেলাতে পারছে না সাধারণ মানুষ। কারণ বেশিরভাগ পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। ফলে মধ্যবিত্তরা বাজারে গেলেও কিনছে পরিমাণে কম, ফলে এসব পণ্যের বিক্রিও বেশ কমেছে। রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশের বিভিন্ন বাজারে দ্রব্যমূল্যের এমন উচ্চগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ।

বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে কথা হয় জিগাতলা এলাকার বাসিন্দা আরিফ হোসেনের সাথে। তিনি জানান, গত বছর পুরো রমজানের জন্য ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, ব্রয়লার মুরগিসহ বিভিন্ন প্রকার মসলা মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকার পণ্য স্থানীয় বাজার থেকেই কিনেছিলেন। কিন্তু এবার দাম বাড়ায় কিনতে এসেছেন এই পাইকারি বাজারে। তারপরও এবার বাজেট কমিয়ে ব্যয় করছেন ৬ হাজার টাকা। পরিবারের ব্যয়ভার বেড়ে যাওয়ায় তিনি এবার কিছুপণ্য কেনা বাদ দেয়াসহ কম পরিমাণে কিনেছেন।

রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেলো ক্রেতাসাধারণের ভিড়ে বেশ জমজমাট পরিবেশ। কথা হলো কাঁঠালবাগান এলাকার বাসিন্দা মোমেনা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ‘আপা কী আর বলবো গত দুইদনি আগে প্রতিহালি লেবু কিনেছি ৪০ টাকায়, আজ দাম চাচ্ছে ৮০ টাকা। আর ৫০ টাকা কেজি বেগুনের দাম চাচ্ছে ১শ’ থেকে ১শ’২০ টাকা। তাই লেবু ও বেগুন না কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম। এছাড়া বেশির পণ্যের দামই অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে আসতে ইচ্ছা করে না, বাচ্চাদের কথা ভেবে আসতে হয়। প্রথমবারের মতো এবারের রমজানে আমরা ইফতারের আইটেম চেঞ্জ করেছি। ইফতারের সময় লেবুর শরবতের বদলে ঠাণ্ডা পানি, একটি ফল এবং খেজুরের পাশাপাশি ভাত বা খিচুড়ি খাবো।’ এছাড়া গতবছর রমজানের আগে তিনি যে পরিমাণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনেছিলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে এবার তার থেকে ৫০ শতাংশ পণ্য কম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

---

রমজানকে ঘিরে বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে উৎপাদন খরচের চেয়ে দ্বিগুণ দামে। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি দাম ছিলো ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। যা দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম হয়েছে দ্বিগুণ। সরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি দাম ২০০ টাকার বেশি হওয়া অযৌক্তিক। কারণ, খাবারসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। আর প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।

এদিকে সারা বছর দেশে যে পরিমাণ খেজুরের চাহিদা থাকে তার অর্ধেকই বিক্রি হয় রমজান মাসে। আমদানি সংকটে এবছর বেশ আগে থেকেই চড়া খেজুরের বাজার। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে সারা বছর খেজুরের চাহিদা এক লাখ টন। রমজানে ৫০ হাজার টন। কিন্তু এবছর আমদানি বেশি কমেছে। পাইকারি বাজারের ১২০-১৫০ টাকার খেজুর খুচরা বাজারে গিয়ে ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাদামতলীর পাইকারি বাজারে দুই হাজার টাকায় পাঁচ কেজির একটি আজওয়া খেজুরের বক্স কিনে ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি তা বিক্রি করছে ৭০০-৮০০ টাকায়।

বিগত তিন মাসে (নভেম্বর-জানুয়ারি) খেজুর আমদানি হয়েছে ২২ হাজার ৭শ’ টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি ছিল ৪০ হাজার ৮শ’ টনের বেশি। অর্থাৎ এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে এ বছর আমদানি প্রায় ৪৫ শতাংশ কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খেজুরের আমদানি ব্যয় বেশি। সরবরাহ নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে। এবছর পণ্যটি কাক্সিক্ষত পরিমাণে আমদানি হয়নি। রমজানের জন্য খেজুরের এলসি খোলার সময়ও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইরাকি ও আমিরাতের খেজুরে বাড়তি একশ’ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া সৌদি আরব থেকে আজওয়া, আম্বার, কালমি এবং ইরান ও জর্ডান থেকে মরিয়ম খেজুর আসে। মিশর থেকে আসে বড় আকারের খেজুর মেডজুল। এগুলোতে তিনশ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

---

কারওয়ানবাজরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর রোজাকে কেন্দ্র করে শবে বরাতের পর থেকেই পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হতো। অথচ এবার বাজারে সেরকম চাপ নেই। দাম বাড়ার কারণেই গত রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগের বিক্রির সঙ্গে যদি চলতি রমজানের তুলনা করা হয় তাহলে সবমিলিয়ে তাদের বিক্রি ৩০-৪০ শতাংশ কমেছে। আর স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রমজানকেন্দ্রিক নিত্যপণ্যের বিক্রি গত বছরের তুলনায় তাদের এবছর কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়া প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালসহ বিভিন্ন বাজারেও গত রমজানের তুলনায় রমজানে এবার ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।

গত ১৯ মার্চ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, আসন্ন রমজান মাসে দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নিত্যপণ্য মজুদ রয়েছে। এবং রোজায় নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বেশিকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে রোজার শুরুতে চিনির দাম কমারও আভাস দিয়েছিলেন মন্ত্রী। রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকার চেষ্টা করছে জানিয়ে টিপু মুনশি আরও বলেন, দাম বাড়া নিয়ে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। সরকারের কাছে যে মজুত রয়েছে, তাতে কোনভাবেই দাম বাড়বে না। যদি কেউ অবৈধ সুযোগ নেয়, তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মে মাসে দেশে এক ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০৬ টাকা। আমদানিকারকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে দাম কমলেও আমদানি ব্যয় বাড়ায় এর সুফল পাচ্ছে না ক্রেতারা।



বিষয়: #



আর্কাইভ