বুধবার ● ৫ এপ্রিল ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » সংসদের তিনশ’ আসনেই ভোট হবে ব্যালটে
সংসদের তিনশ’ আসনেই ভোট হবে ব্যালটে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
# ইভিএম থেকে পিছু হটলো ইসি
বিশেষ প্রতিনিধি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানের মধ্যে ভোটের অন্তত সাত মাস আগেই ইভিএম থেকে সরে এলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় সংসদের ৩শ’ আসনেই ব্যালট পেপার ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। গতকাল ইসির ১৭তম কমিশন সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সকালে সাড়ে ১০টায় কমিশন সভা শুরু হয়। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান। সভা শেষে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম জানান, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩শ’ আসনে ব্যালট পেপার এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যেও দেড়শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। কিন্তু সরকারের সায় না পাওয়ায় ইসির প্রস্তাবিত প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ইসির হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ করে অন্তত ৫০-৮০টি আসনে ইভিএম ভোট করার সক্ষমতা জানিয়েছিলো ইসি। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশ ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে। এমন পরিস্থিতে ইভিএমে সংসদ নির্বাচনে ভোট করা থেকে সরে এলে কমিশন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম জানান, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে মেশিনগুলো মেরামতের জন্য যে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল সেই অর্থ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তার কারণে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আসন্ন পাঁচ সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার চলমান থাকবে বলে জানান ইসি সচিব।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের ১৩তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশনে যোগ দিয়েই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে সংলাপ শুরু করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের কমিশন। দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ১৩ মার্চ দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রযুক্তিবিদ, সাবেক সিইসি, সুুশিল সমাজ, গণমাধ্যম ও গত ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে সংস্থাটি। এতে বিএনপিসহ ১২টি দল অংশগ্রহণ করেননি।
আলোচনার মূলেই ছিলো ও রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার। এসময় ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলে অনেকেই সরাসরি এ যন্ত্রের বিরোধিতা করেন আবার কেউ কেউ শর্ত সাপেক্ষে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। তবে সব আলোচোনা-সমালোচনাকে পিছনে ফেলে আগামী সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের ঘোষণা দেয় ইসি। এ লক্ষ্যে সরকারের কাছে আট হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সেই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়নি সরকার। এরপর ইসির হাতে থাকা দেড়লাখ ইভিএম দিয়ে ৫০-৮০ আসনে ভোটের কথা জানায় ইসি। সেজন্য দেড় লাখ মেশিন মেরামতের জন্য সরকারের কাছে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা চেয়েছিলো সংস্থাটি। কিন্তু এই অর্থ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তার কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে গেলো কমিশন।
যে কারণে ইভিএম থেকে সরে গেলো ইসি
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩শ’ আসনেই ব্যালট পেপারে ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে ১শ’ ৫০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের কথা জানিয়েছিলো ইসি। তবে হঠাৎ কেন ইভিএম থেকে সড়ে এলো ইসি তার কারণ জানালেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
ইসি’র ইভিএম থেকে সরে যাওয়া কারণ তিনটি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হলেও এবার একটি আসনেও হচ্ছে না। ৩শ’ আসনেই প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোট হবে, থাকবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সও। নির্বাচন কমিশননের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে ইসি সচিব জানান, ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী সর্বোচ্চ দেড়শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এজন্যে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবও নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পটি আর গৃহীত হয়নি।
ইভিএমের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ ১ লাখেরও বেশি ইভিএমের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। কিন্তু আগামী অর্থ বছরে পাওয়া যেতে পারে বলে নিশ্চয়তা দেয়। এ অবস্থায় ইভিএমগুলো কিউসি (কোয়ালিট চেকিং) করে কাজ করার মতো অর্থ ইসির হাতে নেই এবং সময় সাপেক্ষ বিষয়।
রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে বিরোধিতাও কমিশনের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে বলে জানান ইসি সচিব। নির্বাচনের আগে সময় স্বল্পতা ও অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অর্থ পেতে নিশ্চয়তা না পাওয়া এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে যে ঐক্যমতের অভাব রয়েছে- সব বিষয় বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে গতকাল সোমবার ১৭ তম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ‘আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বিষয়ে আলোচনা’-এর এজেন্ডা রাখা হয়।
বিষয়: #তিনশ’ আসনেই ভোট হবে ব্যালটে