শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
Swadeshvumi
রবিবার ● ৩০ এপ্রিল ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না
প্রচ্ছদ » জাতীয় » শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না
২৫৭ বার পঠিত
রবিবার ● ৩০ এপ্রিল ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না

---

বিশিষ্টজনদের মন্তব্য

# শিল্প-কারখানার ব্যাপক বিকাশে শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে

শাহনাজ পারভীন এলিস

স্বাধীনতার পর ৫২ বছর পরও শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা বাস্তবায়ন না হওয়া এবং সংবিধান ও আইএলও কনভেনশন অনুসারে শ্রম আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম অধিকার আন্দোলনের নেতা ও বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর এদেশের বর্তমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূল নায়ক এদেশের কৃষক-শ্রমিক-জনতা। তারপরও শ্রমের ন্যায্য মজুরি, ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে শ্রমজীবী মানুষরা এখনো কেন বঞ্চিত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। অন্যদিকে শ্রম অধিকার রক্ষায় কিছুটা ঘাটতির থাকলেও, দেশের শিল্প-কারখানার ব্যাপক বিকাশ ঘটায় কাজের ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

---

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান বলেছেন, মে দিবসের সংগ্রাম শুধু শ্রমিকদের দাবিতে নয়, সমাজের বিকাশের প্রয়োজনে সংঘটিত হয়েছিল। তবে শোষণমূলক পুঁজিবাদি ব্যবস্থায় শ্রমশোষণ বন্ধ হয় না, বরং নতুন পদ্ধতিতে শ্রমিককে শোষণ করতে থাকে। তাইতো স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও এদেশের শ্রমজীবী মানুষ মজুরি দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পারছে না, ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আইএলও কনভেনশনের সবগুলো ধারা এখনো অনুমোদন করা হয়নি। দ্রব্যমূল্যেও ঊর্ধ্বগতির দাবানল আর শোষণমূলক ব্যবস্থা বহাল রেখে আট ঘণ্টা কর্ম সময় এবং ন্যায্যমজুরি আদায় করা সম্ভব নয়। সমাজের সমৃদ্ধি, ধনীদের বিলাসিতা বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা বেড়েছে, বেড়েছে দারিদ্র্য। জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে ওভারটাইম কাজ করাই শুধু নয়, অনেক পরিবারে নারী ও শিশু কারখানায় কাজে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছে ।

---

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে শ্রমিকরা যে অধিকার অর্জণ করেছিলো পর্যায়ক্রমে তা কেবল খর্বই হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সরকার ঘোষিক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে মালিকরা যে মামলা করেছিলো সরকার কেন সে বিষয়ে আপিল করেনি তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। মালিক-শ্রমিক ঐক্যের নামে শ্রমিকদের নয়, বরং মালিকদেরই স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। বাস্তবায়ন হওয়া সেই মজুরি ইস্যুতে এখনো রাজপথে আন্দোলন করতে হয় শ্রমিকদের। এ অবস্থার দায় কী কী রাষ্ট্র এড়াতে পারে। অন্যদিকে গার্মেট সেক্টরের শ্রমিকরা এখনো ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এছাড়া ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে সরকার ঘোষিত নতুন আইন এদেশের শ্রমিক আন্দোলনকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করি।

---

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রীয় মালিকানার নীতিতে দেশ পরিচালনার কথা থাকলেও লুটেরা পুঁজিপতিরা বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় কল-কারখানাকে বন্ধ করে শ্রমিকদের জীবনে চরম সংকট সৃষ্টি করেছে। নব্য ধনিক গোষ্ঠীকে আরও ধনি করে শোষণ বৈষম্য বাড়িয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে এখনও শ্রম আইন প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, আট ঘণ্টা শ্রম অধিকার, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,সহ মৌলিক মানবিক অধিকারগুলোও রক্ষা করা হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে আর্থিক দৈন্যতা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আট ঘণ্টা কাজ করার কথা থাকলেও, বাড়তি আয়ের জন্য শ্রমিকরা ওভারটাইম শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিকদের সংগঠন করার গণতান্ত্রিক অধিকার সর্বত্র এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। দেশের ৪ হাজারের বেশি গার্মেন্টসের মধ্যে মাত্র ৭শ’ এর মতো শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে, তাও অকার্যকর। সবমিলিয়ে বলতে গেলে শ্রমিকদের শ্রম অধিকার এখনো উপেক্ষিত। তাই এবারের মে দিবসে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, রেশনি ব্যবস্থা চালু, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থানের ব্যবস্থা ও পেনশন সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারি ঘোষণা দাবি করছি।

---

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিসের ভাইস-চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিন বলেছেন, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ পথচলায় বাংলাদেশে শ্রম অধিকার রক্ষায় ঘাটতি যেমন রয়েছে, অন্যদিকে অগ্রগতিও কম হয়নি। যেমন- এদেশের শিল্প-কারখানার ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে বলে মনে করছেন তিনি। তার মধ্যে রয়েছে- ৫ হাজার গার্মেন্টস কারখানায় ৪২ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান, ৮টি ইপিজেডে প্রায় ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া একশটি স্পেশাল ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৫/৬টি জোনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, আরও ১৫টির কার্যক্রম চালু করার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। স্পেশাল ইকোনোমিক জোন এর সবকটি চালু হলে এদশের আরও ৫০ থেকে ৬০ লাখ লোকের কর্ম সর্মসংস্থা হবে বলেও জানান তিনি।

আমিরুল হক আরও বলেন, দেশের শিল্প-কলকারখানায় এতো অগ্রগতি সত্ত্বেও শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি দাবি এখনো বাস্তবায়ন না হওয়া খুবই দু:খজনক। একই সাথে যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থলের নিশ্চয়তা, নারী শ্রমিকদের সমমর্যদা প্রতিষ্ঠা, ট্রেড ইউনিয়ন করা, দাবি বাস্তবায়ন না হলে ধর্মঘট করা, অধিকার যুক্তিসঙ্গত ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের সরকারি পদক্ষেপের দাবি জানান তিনি।

১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কংগ্রেস ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। ১৯১৯ সালে আইএলও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আট ঘণ্টা কর্মদিবস ও ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ঘোষণা করা হয়।



বিষয়: #



আর্কাইভ