মঙ্গলবার ● ২০ জুন ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে হানাহানি, আতঙ্কে ভোটাররা
কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে হানাহানি, আতঙ্কে ভোটাররা
রাজশাহী সিটি নির্বাচন
# ১৫৫টি কেন্দ্রের ১৪৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ
# অর্ধেকের বেশি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ
শাহনাজ পারভীন এলিস, রাজশাহী থেকে
দরজায় কড়া নাড়ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। আগামী বুধবার অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সামনে হেভিওয়েট কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচন বর্জন করায় তার জয় আরও সহজ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবুও রাসিক নির্বাচনের ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের ১৪৮টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেননা কাউন্সিলর প্রার্থীরা পাড়া-মহল্লায় দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের জন্ম দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ফলে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হানাহানিতে বেশ কিছু ওয়ার্ডে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাসিকের ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের ১৯টিতে কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় এই উত্তাপ আরও বেড়েছে। ফলে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা বিরোধে লিপ্ত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমান পরিষদের ৩০ কাউন্সিলর এবং ১০ সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলরের সবাই আবারও প্রার্থী হয়েছেন। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নবীন প্রার্থীরাও ভোটারদের আকৃষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। যাদের মধ্যে রাসিকের ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের ১৯টিতে কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই পরস্পরের মুখোমুখি। এসব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলীয় সিদ্ধান্ত ভেঙে তাদের ১৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। আবার জামায়াত, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্যান্য দলের নেতারাও কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সাধারণ ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ১১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৩৮ জনের নামে এক থেকে সর্বোচ্চ ২৩টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। অনেকেই হত্যা, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, চোরাচালান এবং নাশকতা মামলার আসামি। ভোটকে কেন্দ্র করে এসব মামলার আসামি কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা সহিংস হয়ে উঠেছেন। ফলে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই এসব প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা বিরোধে লিপ্ত হচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষ, ছুরিকাঘাত, ককটেল হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকাউল ইসলামের সন্তান যুবলীগ নেতা আলি রেজা রাজিব। উভয়েই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।
৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন, হাবিবুর রহমান ও যুবলীগ নেতা শামীম হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এই ওয়ার্ডে তিন প্রার্থীই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় কেউ কাউকে ছাড় দিতে চান না।
৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যুবলীগকর্মী হামিদুল ইসলাম সুজন, আওয়ামী লীগ নেতা কে এম ইফতেখার হামিদ ও বর্তমান কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু।
৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান কাউন্সিলর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান টুকু ও সৈনিক লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম।
তবে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল হক রুবেল ও যুবমৈত্রী নেতা বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি লড়ছেন। শনিবার সন্ধ্যায় মতির নির্বাচনী মিছিলে রুবেলের সমর্থকরা ককটেল হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জহিরুল ইসলাম রুবেল জানান, ‘মতিই শনিবার আমার বাসায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা করে।’
নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রিমুখী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান কাউন্সিলর এস এম মাহবুবুল হক পাভেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জানে আলম খান জনি এবং শাহিদ হাসান বারিক। তারা তিনজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।
১০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. টনি, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক আহমেদ রাজন ও সাবেক যুবলীগ নেতা আব্বাস আলী সরদার।
১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাবেক কাউন্সিলর আবু বাক্কার কিনু এবং বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম তজুর মধ্যেও দ্বন্দ্ব প্রকট। আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে কিনু ও তজুর সমর্থকরা প্রায় মুখোমুখি অবস্থান নেয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
১২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা সরিফুল ইসলাম বাবু, শিহাব চৌধুরী ও তাঁতী লীগ নেতা মোকশেদ উল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল মমিন ও মহানগর যুবলীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানা। এ ওয়ার্ডে মোমিনের বিরুদ্ধে মাসুদ রানার কর্মী-সমর্থককে ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডেও সদ্য সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনারের সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী টুটুলের নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
নগরীর ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডেও আওয়ামী লীগের কয়েকজন করে নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। ফলে তাদের মধ্যেই জোরদার প্রতিযোগিতার পাশাপাশি চলছে শক্তি প্রয়োগের খেলা, অস্থিরতা। এ অবস্থায় ভোটাররাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সার্বিক বিষয়ে রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন।’
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ও মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতেও যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন হয় সেই লক্ষ্যে বাড়ানো হচ্ছে নিরাপত্তাব্যবস্থা। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বৃদ্ধি পাবে। ফলে বিশৃঙ্খলার কোনো সুযোগ নেই।’
বিষয়: #আতঙ্কে ভোটাররা #কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে হানাহানি