বুধবার ● ২১ জুন ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোটগ্রহণ চলছে
রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোটগ্রহণ চলছে
# ভোটের জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় ভোটাররা
# প্রথমবার সবকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে ইভিএম
শাহনাজ পারভীন এলিস (রাজশাহী থেকে)
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোট একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। দুই সিটিতেই এবার ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। এদিকে ভোট শুরুর আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
দুই সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ উপলক্ষে মাঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে । ভোটারদের সুবিধার জন্য দুই সিটিতেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজশাহী সিটিতে ভোট
রাজশাহী সিটিতে ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৫৩টি ভোটকক্ষে চলছে ভোট গ্রহণ। এই সিটির মোট ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন পুরুষ, ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন নারী এবং ছয়জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।
এই সিটির ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রর মধ্যে এবার ১৪৮ কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোট ৩০টি মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডের একটি করে মোট ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রতি থানায় একটি করে মোট ছয়টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য একটি করে মোট ১৬টি র্যাবের টিম রয়েছে।
এছাড়া পাঁচটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য এক প্লাটুন করে মোট সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের মাঠে রয়েছে।
রাজশাহীতে এবার মেয়র পদে চারজন, ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১১ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন, আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুরশিদ আলম এবং জাকের পার্টির মো. লতিফ আনোয়ার।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, ‘ভোটের দিন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ছয় থেকে সাতজন পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া আনসার সদস্যরাও কেন্দ্রে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন।’
র্যাব-৫-এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে আজ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ২৫০ জন র্যাব সদস্য মাঠে নেমেছেন। কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে র্যাব সদস্যরা সেখানে যাবেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। এর পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন।
সিলেট সিটিতে ভোট
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মেয়র প্রার্থী ছিলেন আট জন। এর মধ্যে বরিশালের ঘটনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে ভোটের মাঠে আজ প্রার্থী মূলত সাতজন।
মেয়রপ্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান, আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাকের পার্টির মো. জরিহুল আলম, স্বতন্ত্র মো. আব্দুল হানিফ, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মো. শাহজাহান মিয়া এবং মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও লাঙলের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে- মনে করছে নগরবাসী। এছাড়া ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সিলেট সিটিতে মোট ভোটার চার লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। নির্বাচনি এলাকায় ভোটের জন্য যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। ভোটের মাঠে আছে নিজস্ব পর্যবেক্ষক টিমও। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ রয়েছে এক হাজার ৩৬৪টি। ভোটকেন্দ্রের ১৩২টিই গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ। নগরের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮টির সব কটি ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সব ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে রয়েছে সিসি ক্যামেরা।
সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোট ৪২টি মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডের একটি করে মোট ১৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রতি থানায় একটি করে মোট ছয়টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য একটি করে মোট ২২টি র্যাবের টিম ও পাঁচটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য এক প্লাটুন করে মোট ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বুধবার পর্যন্ত ৪২ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের মাঠে থাকবেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের স্বার্থে সকাল থেকেই সব ভোটকেন্দ্রেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।
নির্বাচনি দুই সিটি এলাকায় সোমবার রাত ১২টার পর থেকেই মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে আগামী বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে আজ বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার ও ইজি বাইক চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হবে।
এদিকে ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। আর সেসব সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি পর্যবেক্ষণে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অফিসে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং সেল। ক্যামেরার মাধ্যমে সেখান থেকে ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করছেন সিইসিসহ নির্বচান কমিশরাররা।
এই দুই সিটির নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন ধাপে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচন শেষ হচ্ছে। এর আগে প্রথম ধাপে গত ২৫ মে গাজীপুর এবং দ্বিতীয় ধাপে গত ১২ জুন বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এসব নির্বাচনের মধ্যে মেয়র পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন হয়েছে গাজীপুরে। বরিশাল ও খুলনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সে ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি।
বিষয়: #রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট কাল