শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
বুধবার ● ৪ অক্টোবর ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » নির্বাচনে বৈধতা নয়, আইনি দিকটা দেখবে ইসি: সিইসি
প্রচ্ছদ » জাতীয় » নির্বাচনে বৈধতা নয়, আইনি দিকটা দেখবে ইসি: সিইসি
১৫২ বার পঠিত
বুধবার ● ৪ অক্টোবর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নির্বাচনে বৈধতা নয়, আইনি দিকটা দেখবে ইসি: সিইসি

---

# সব দল না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না: বিশ্লেষকদের মন্তব্য

# নির্বাচনকালীন সময়ে প্রার্থীর এজেন্টেরদের গ্রেপ্তার চায় না ইসি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আইনগত দিক বজায় রাখতে কাজ করবে, নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। যে কোন নির্বাচনে ব্যাপকসংখ্যক ভোটার যদি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন তাহলে সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক। অন্যদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, ভোটের সমতল পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ সব দলকে ভোটের মাঠে আনতে না পারলে সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না।

গতকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে ‘অবাধ ভোটাধিকার, প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা’ শীর্ষক বৈঠকের সমাপনী বক্তব্যে তারা এসব কথা বলেন। নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, ইসির সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট যদি এক শতাংশ পড়ে এবং ৯৯ শতাংশ নাও পড়ে, আইনগতভাবে নির্বাচন সঠিক হবে। আমরা নির্বাচনের লিগ্যালিটি (আইনগত দিক) দেখবো। নির্বাচনের লেজিটেমেসি (বৈধতা) বিষয়টি নিয়ে ফাইট করবো না। নির্বাচনে লেজিটেমেসির বিষয়টি নিয়ে ফাইট করবে রাজনৈতিক সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব। ভোটে কে নির্বাচনে এলো বা কে এলো না, সেটা নিয়েও ইসি মাথা ঘামাবে না, ব্যাপকসংখ্যক ভোটার যদি ভোট দেন, তাহলে সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে। আমাদের দায়িত্ব নয় কাউকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। তবু আমরা নৈতিকতার অবস্থান থেকে অনেকবার দাওয়াত দিয়েছি। আসুন, আমাদের সঙ্গে চা খান। ডিইও লেটার পর্যন্ত লিখেছি। এর বেশি আমরা করতে পারছি না।’’

কার্যকরভাবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে ইসির দায়িত্ব কমে যায় উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে আমাদের অল্প একটু রেফারির ভূমিকা থাকবে। কনটেস্ট হবে রাজনৈতিক দলের মধ্যে। ওরাই ওদের অবস্থানটাকে সুদৃঢ় রাখবে। ইফেকটিভ কনটেস্ট হলে ভোটকেন্দ্রের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি হয়ে যায়। তখন আমাদের দায়িত্ব কমে আসে। আমরা দেখতে চাই- নির্বাচনের দিন ভোটাররা এসেছেন, তারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন, ভোটকেন্দ্রে ঢুকছেন। ভোটটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে, ভোটারদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি, তাদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে, তারা নির্বিঘ্ন ও স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন কিনা।

---

ভোটের সময় প্রার্থীর এজেন্টদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘পোলিং এজেন্টের নাম প্রার্থীরা সাধারণত গোপন রাখেন। সকালবেলা দেওয়া হয়, যাতে তারা নিরাপদে ওখানে পৌঁছাতে পারেন। আমাদের কাছে তারা একশ’জনের তালিকা দেবেন, দেড়শ’ জনের নাম দিলেন। দিলে পরে যদি আমরা দেখি দেড়শ’ জনই অ্যারেস্ট হয়ে গেছেন তখন আমাদের একটি নেগেটিভ ইমপ্রেশন নিতে হবে। কেন তারা একমাস আগে অ্যারেস্ট হলেন না। কেন তারা দু’মাস আগে অ্যারেস্ট হলেন না। ভোটের আগের দিনই সবাই উধাও হয়ে গেল কেন। যেহেতু আমরা নির্বাচন করি, আমরা সৎভাবে করতে চাচ্ছি, আন্তরিকভাবে করতে চাচ্ছি। কোনো দলের পক্ষপাতিত্ব করার জন্য কিন্তু আমরা এ দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। এটিও হতে পারে একটি লিস্ট যদি আগেই দেওয়া হলো আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেবো। আমরা সরকারকে এটি জানাবো, যদি তাদের অ্যারেস্ট করতে হয় ছ’মাস আগেই অ্যারেস্ট করে ফেলেন সবাইকে। নয়তো নির্বাচনের পরে গিয়ে অ্যারেস্ট করেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত হবে না। আামরাও কলঙ্কিত হবো সেই ক্ষেত্রে, এটি আমি আন্তরিকভাবে মনে করি। এটিই সবাই বলবেন, পোলিং এজেন্ট যদি না থাকে, নির্বাচন তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে নেতিবাচক জনমত তৈরি হবে।’

সংলাপ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবাই বলে থাকেন সংলাপের মাধ্যমে একটা সমঝোতার প্রয়োজনীয়তার কথা। আমরাও বলেছি, সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা করে যদি একটি অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠতো। তাহলে আমাদের জন্য কাজটা সহজসাধ্য হতো।’ একাধিক দিনে ভোটগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৪২ হাজার কেন্দ্রে একদিনে ভোট করা খুবই কঠিন। আপনারা যারা আছেন, তারা যদি মনে করেন নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের চিন্তা করতে পারেন। এই চিন্তার বিষয়টি আপনাদের। এটা হলে আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।’

এদেশের নির্বাচন প্রশ্নে বিদেশিদের অবস্থান প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা মানি বা না মানি, বিদেশের কিছু লোক এখানে এসে কথা বলেন। অথচ আমরা আমেরিকা গিয়ে কিন্তু কথা বলতে পারছি না। এটার একটা কারণ হতে পারে- আমেরিকা হয়তো শক্তিতে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এটা হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। আমি সেটা জানি না। ওরা আসছে আমাদের দেশে কথা বলতে। এই সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ওরা আমাদের সঙ্গে কথা বললে- আমি খুব গর্ববোধ করি না।’

আলোচনায় আস্থার সংকট প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমরা কী এমন করেছি যে আমাদের ওপর আস্থা আনা যাচ্ছে না। অনেককে বলতে শুনেছি আমরা নাকি লোক দেখানো কাজ করছি। আমাদের কাজ হচ্ছে জাল ভোটার থাকবে না। অবাধ ও উৎসমুখর ভোট করা। জনগণ যাকে ভোট দেবে সে নির্বাচিত হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করছি। তারপরও আমাদের ওপর অনেকে আস্থা রাখতে পারছে না। সবাইকে এক করা আমাদের কাজ নয়। তারপরও সবাইকে নিয়ে বসেছি। জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কাজ করছি। সংলাপ করেছি। দুই দলকে সিইসি চিঠি দিয়েছে তারপরও আসেনি। যারা বলছে সুষ্ঠু ভোট করতে আমাদের সদিচ্ছা নেই এটা অমূলক। আমরা নাকি লোক দেখানো কাজ করছি, এরও ভিত্তি নেই।’

---

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার তাগিদ 

নির্বাচন কমিশনের বুধবারের বৈঠকে অংশ নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, যে কোন মূল্যে  ইসিকে ভোটের সমতল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সব দলকে ভোটের মাঠে আনতে না পারলে সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ ঠিক করতে হবে। ভোট অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। তবে প্রধান বিরোধী দল না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। আমরা দেখছি বিরোধী দলও ইসিকে সহায়তা করছে না। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে মূল ভূমিকা রাখতে হবে। নির্বাচনে শুধু কমিশন নয়, অনেকে রয়েছে। অথচ কোনো সমস্যা হলে নির্বাচন কমিশন আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক কথাবার্তা রয়েছে, অনেক প্রার্থীর অভিযোগ ছিল তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কমিশন কোন তদন্ত করেনি, কারা তুলে নিয়েছে, কেন নিয়েছিল। ঘটনা আসলে কী ছিল? নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যদি গাফিলতি থাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অগাধ ক্ষমতা আছে- এটা নিয়ে আরগুমেন্ট আছে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিকে কমিটমেন্ট করতে হবে ভালো নির্বাচনের। পোলিং এজেন্ট দেওয়ার দায়িত্ব প্রার্থীর। পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার তথ্য আমরা পাচ্ছি না। শুধু হাওয়ার ওপরে অভিযোগ দিলে হবে না। পোলিং এজেন্টদের নিরপেক্ষ আচরণ করতে হবে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রার্থীকে উপযুক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের তালিকা ইসিতে পাঠানো দরকার।’

নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘দেশে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল দুই মেরুতে। এদের এক হতে হবে, ভোট সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন সুন্দর করার মূল লক্ষ্য নিবন্ধিত দলকে এক করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তভাবে কাজ করতে হবে।’

নির্বাচন কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, ‘ভোট অবাধ করতে সবাইকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ভালো ভূমিকা নিতে হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয়, যাতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভালো ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছু নির্ভর করবে নির্বাচনি পরিবেশের ওপর।’

গ্লোবাল টেলিভিশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘অনেক সময়ই দেখা যায় প্রার্থীদের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ ভালো থাকে না। পোলিং এজেন্টদের যদি কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয় তাহলে ব্যবস্থা কী আছে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাহসী ও সঠিক লোকদের পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় না।

রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্ব না নিলে ভালো নির্বাচন হয় না বলে মন্তব্য করেন আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, পারসেপশনকে গুরুত্ব না দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবিচল থাকতে হবে। ভোটের দিন পোলিং এজেন্টের কাছে ছবিসহ ভোটার তালিকা থাকলে গোড়াতেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বিদেশিদের সঙ্গে কমিশনের এনগেজমেন্ট হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। বলেন, আমেরিকানরা সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। তো তাদের সঙ্গে আপনারা এনগেজমেন্ট হন। আলোচনা করেন আইনের মধ্যে থেকে কি কি করলে নির্বাচনটা আরো ভালো করা যায়। তাদের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে। তাই ইনগেজমেন্ট টা খুব ইমপোর্টেন্ট। এমন হতে পারে বিদেশি যে টিম আসলো তাদের সঙ্গে ইসির একটা টিম তাদের সঙ্গে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখলো।

আলোচনায় বক্তারা ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করা ও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের নানা দিক তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ভোটের দিন নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনেরও তাগিদ দেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশনের এবারের বৈঠকে দেশের ৬৪ জেলার নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরাও ভার্চুয়ালি অংশ নেন।



বিষয়: #  #



আর্কাইভ