শনিবার ● ২৫ মে ২০২৪
প্রচ্ছদ » জাতীয় » উপজেলা নির্বাচনে আবারও জয়ী হচ্ছেন বিতর্কিতরা
উপজেলা নির্বাচনে আবারও জয়ী হচ্ছেন বিতর্কিতরা
শাহনাজ পারভীন এলিস
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রার্থীর লক্ষ্যই যেন অর্থসম্পদের মালিক হওয়া এবং সম্পদ বাড়ানো। হচ্ছেও তাই। নির্বাচনে বিজয়ীদের বেশির ভাগই অর্থসম্পদে নিজের ভাগ্য বদলেছেন।
একবার বিজয়ী হয়ে অর্থসম্পদের মালিক হলেন, সম্পদের পরিমাণ বাড়াতে আবার প্রার্থী হচ্ছেন। একাধিকবার জিতেও যাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলে এমনটাই প্রতীয়মান হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যাদের অস্বাভাবিক সম্পদ বাড়ার পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাদের অনেকেই গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবার নির্বাচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে অর্থসম্পদ বাড়ানোর সুবিধাজনক সুযোগের কারণে জনপ্রতিনিধি হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। গত পাঁচ বছরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচিত হননি এমন প্রার্থীদের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আয় ও সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। কারও কারও প্রায় ১২ হাজার শতাংশ সম্পদ বেড়ে যাওয়ার তথ্যও রয়েছে। অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে দ্রুত আয় ও সম্পদ বাড়ানোর প্রবণতা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় অনেক সংসদ সদস্যের চেয়েও এগিয়েছেন কয়েকজন উপজেলা চেয়ারম্যান।
সদ্য সমাপ্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, অর্থসম্পদ বাড়ানো নিয়ে বিতর্কিত উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অধিকাংশই পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন খান আরিফুর রহমান। তিনি গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদে বিজয়ী হয়ে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তার সম্পদ বেড়েছে ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ। ঠাকুরগাঁও সদরে ২০১৯ সালে বিজয়ী হয়ে ৫ বছর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন আব্দুর রশিদ। এ সময়ে তার সম্পদ বেড়েছে ১০ হাজার ৮৬৬ শতাংশ। ফিরোজা পারভীন পাবনার চাটমোহর উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে গত ৫ বছরে সম্পদ বাড়িয়েছেন ৮ হাজার ৫৩১ শতাংশ। একইভাবে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে ৩ হাজার ৩১৯ শতাংশ সম্পদ বাড়িয়েছেন বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারি।
বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলা পরিষদে তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন শাহীনুল আলম ছানা। এর আগে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে ১০ বছরে সম্পদ বাড়িয়েছেন ৫ হাজার ৩৩৬ শতাংশ। ব্যক্তিগত সম্পদের পাশাপাশি স্ত্রীসহ পরিবারের জমিজমা এবং সম্পদও বাড়িয়েছেন অনেক জনপ্রতিনিধি। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ফজলুল করিমের স্ত্রীসহ পরিবারের সম্পদ গত ৫ বছরে বেড়েছে ১ হাজার ৯১০ শতাংশ। উপজেলার চেয়ারম্যান হয়ে জমির মালিকানার দিক থেকে শীর্ষ দশের তালিকায় স্থান পেয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চেময়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল হালিম ও মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান। বর্তমানে মোহাম্মদ আব্দুল হালিমের জমির পরিমাণ ৪১ দশমিক ৩ একর। আর আবদুর রহিম খানের জমির পরিমাণ ৩৪ দশমিক ২৯ একর।
এসব বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির যে চিত্র হলফনামার তথ্য থেকে পাওয়া গেছে, সেগুলো তাদের বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না এবং সম্পদ অর্জন বা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে কি না, তা যাচাই করার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ সে দায়িত্ব পালনে কোনো আগ্রহ দেখায় না। অন্যদিকে হলফনামায় যে তথ্য দেওয়া হয়, তা কতটুকু পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য, তাও খতিয়ে দেখা হয় না। এগুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘হঠাৎ করে সম্পদশালী হওয়া এবং অস্বাভাবিকভাবে সম্পদ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অবৈধ সম্পদ কি না, তা খতিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের আওতায় পড়ে। সুতরাং দুদক চাইলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পারে।’
বিষয়: #উপজেলা নির্বাচনে আবারও জয়ী হচ্ছেন বিতর্কিতরা