সোমবার ● ২৪ জুন ২০২৪
প্রচ্ছদ » জাতীয় » বাংলাদেশের সঙ্গে ৮২টি দেশের বাণিজ্য ঘাটতি: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
বাংলাদেশের সঙ্গে ৮২টি দেশের বাণিজ্য ঘাটতি: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্ব
# বাণিজ্য ঘাটতি ১৫ হাজার মিলিয়ন ডলার
# ১১ মাসে রপ্তানি আয় ৪৪ বিলিয়ন ডলার
নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমানে বিশ্বের ২১০টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন রয়েছে জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, এসবের মধ্যে ৮২টি দেশের সঙ্গে এই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। গতকাল রবিবার (২৩ জুন) সংসদে এমপি ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান। এসময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এই নীতি অনুসরণ করে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের সাথেই বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান রেখেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট ১৫ হাজার ২৩৯.৫৫ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার্থে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেন ভারসাম্য রক্ষা এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সংসদ সদস্য মো. আবুল কালামের অপর এক প্রশ্নে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ ব্যতীত আফগানিস্তান, ভুটান ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। আফগানিস্তানের সাথে ১.৪৯ মিলিয়ন ডলার, ভুটানের সাথে ১৪.৪৯ মিলিয়ন ডলার, ভারতের সাথে ৭১৬০.৮১ মিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের সাথে ৬১৪.৭৩ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি রয়েছে। অপরদিকে নেপালের সাথে ৪১.৫৪ মিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কার সাথে ৯.০৭ মার্কিন ডলার, মালদ্বীপের সাথে ০.১৪ মিলিয়ন ডলার উদ্ধৃত রয়েছে।
১১ মাসে রপ্তানি আয় ৪৪ বিলিয়ন ডলার
চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমপি আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৩.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা গত অর্থবছর (২০২২-২৩) ছিল ৪৭ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৬.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০.২৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) জুলাই থেকে মে মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৩.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরীর এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিবিএমইএর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানায় ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে ৫২.২৮ শতাংশ নারী শ্রমিক। অর্থাৎ নারী শ্রমিক ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন। বিকেএমইএর তথ্য অনুযায়ী নিট সেক্টরে ১৭ লাখ ২৫৫ শ্রমিক রয়েছে। যার ৬২ শতাংশ অর্থাৎ ১০ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৭ জন নারী। সব মিলিয়ে দেশে তৈরি পোশাক খাতে মোট ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক রয়েছে। যার ৫৫.৫৭ শতাংশ অর্থাৎ ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৬ জন নারী শ্রমিক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্যের উদ্বৃতি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২২ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতে মোট লোকবল ৪৩ লাখ ১৬ হাজার। যার ৩৭.৫১ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ লাখ ১৯ হাজার জন নারী শ্রমিক। গত এক যুগের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব থেকে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
সংরক্ষিত আসনের এমপি শাম্মী আহমেদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে তামাক ও মদ জাতীয় পণ্য ছাড়া সকল পণ্যে শুল্কমুক্তি সুবিধা লাভ করায় ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি লাঘব হচ্ছে এবং ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ প্রথমবারের মতো দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট বাণিজ্য ঘাটতি ১৫ হাজার ২৩৯ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মে পর্যন্ত পণ্য খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৫১ হাজার ৫৪২ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। এ সময়ে সেবা খাতের রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৫ হাজার ৮৩ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার।
১৫ বছরে প্রবাসে নারী কর্মী ১১ লাখের বেশি: বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, বিগত ১৫ বছরে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত (১১ জুন ২০২৪) ১১ লাখ ১৪ হাজার নারী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি নারী কর্মী গিয়েছেন সৌদি আরবে। সংসদে সরকারি দলের সদস্য পারভীন জামানের টেবিলে উপস্থাপিত তারকা চিহ্নিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
সরকারি দলের সদস্য মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর তারকা চিহ্নিত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসীজ এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল) এর মাধ্যমে জর্ডান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিজি, মালয়েশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিয়মিতভাবে স্বল্প খরচ-বিনা খরচে কর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে।
তৈরি পোশাকখাতে নারী শ্রমিক ৫৫.৫৭ শতাংশ: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশে তৈরি পোশাকখাতে মোট ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক রয়েছে, যার ৫৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ নারী অর্থাৎ ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৬ জন নারী শ্রমিক (ইপিজেড ব্যতীত) রয়েছে। সংসদে সরকারি দলের সদস্য নুরম্নন্নবী চৌধুরীর টেবিলে উপস্থাপিত এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিজিএমইএ-এর তথ্য অনুযায়ী (বায়োমেট্রিক্স ডাটাবেইজড অনুসারে) বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানায় ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক রয়েছে যার ৫২.২৮ শতাংশ নারী শ্রমিক অর্থাৎ নারী শ্রমিক ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন রয়েছে এবং বিকেএমইএ-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে নিট সেক্টরে বর্তমানে মোট ১৭ লাখ ২৫৫ জন শ্রমিক রয়েছে যার ৬২ শতাংশ নারী অর্থাৎ ১০ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৭ জন নারী শ্রমিক। অর্থাৎ দেশে তৈরিকৃত পোশাকখাতে মোট ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক রয়েছে, যার ৫৫.৫৭ শতাংশ নারী অর্থাৎ ২৭ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬১৬ জন নারী শ্রমিক (ইপিজেড ব্যতীত)।
দুর্ঘটনায় অক্ষম শ্রমিকদের সহায়তায় ব্যয় হয়েছে ১৪২ কোটি টাকা
সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডলের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে শ্রম মন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম জানান, শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে কেউ কর্মে অক্ষম হলে সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। সরকার গত ১২ বছরে শ্রমিক পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তায় ১৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫৫ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
শ্রম মন্ত্রী বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অন্যতম কাজ হচ্ছে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল সেক্টরের শ্রমিকের কল্যাণ ও সুরক্ষা প্রদান করা। সেই লক্ষ্য অর্জনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকার পরিযায়ী শ্রমিকসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, মেধাবী সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, কর্মরত অবস্থায় কোন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করলে বা কোন শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে কেহ কর্ম অক্ষম হলে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিক পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে এ পর্যন্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ৩০ হাজার ২৮৫ জনকে ১৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫৫ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে দেশের গরিব, দুঃস্থ শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের কল্যাণ সাধনে এ তহবিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় সংসদে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮১৭ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জন মারা গেছেন। সারা দেশে ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে ৭ হাজার ৪৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সম্পদ। জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্য এস এম আতাউল হকের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
সংসদ সদস্য নজরুল ইসলামে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেমালের আঘাত মোকাবিলায় ত্রাণ কাজে নগদে ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ত্রাণ কার্যক্রমে চাল ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, শুকনো ও অন্যান্য খাবার ১১ হাজার ৫০০ বস্তা-ব্যাগ, শিশু খাদ্য ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, গো-খাদ্য ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, ঢেউটিন ৩০০ বান্ডেল এবং গৃহ মঞ্জুরি বাবদ খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকা।
সংসদ/এলিস
বিষয়: #সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্ব