শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
বুধবার ● ৭ আগস্ট ২০২৪
প্রচ্ছদ » মুক্তমত » শেখ হাসিনার পতন! কেন?
প্রচ্ছদ » মুক্তমত » শেখ হাসিনার পতন! কেন?
১১৯ বার পঠিত
বুধবার ● ৭ আগস্ট ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

শেখ হাসিনার পতন! কেন?

 ---

সোয়েব রানা

রাজনীতির জন্য প্রস্থান একটি শিক্ষা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দেশ চালিয়েছেন ২০ বছরেরও বেশি সময়। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার এক নবদিগন্ত সূচনা হয়েছিল। ইতিহাস নিশ্চয়ই তাকে মনে রাখবে। ৪৩ বছরের বেশি সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিত্ব করছেন। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনো কি ভেবেছেন তার জীবনে এমন পরিনতি আসতে পারে?

রাজনীতি আসলে এমনই। অঙ্কের চেয়েও জটিল। কিন্তু আমারা যদি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিশ্লেষণ করি- তার সরকারের কেন এই পতন? দীর্ঘ দিন ক্ষমতার থাকার কারণে কিছু ব্যাধি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দলীয় জোটের ওই সরকারকে পেয়ে বসেছিল। তার মাশুল দিতে হল তাকে, আওয়ামী লীগকে।

২০২৪ সালে সর্বশেষ সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। এই সরকার গঠনের পর বিশ্বমহল তাকে সমর্থন জানায়। আত্মতুষ্টি এবং অহংকার পেয়ে বসে আওয়ামী লীগের সবাইকে। এই আত্মতুষ্টি এবং অহংকারই তৈরি করে পতনের পথ।

নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের পতনের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। কেন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে তছনছ হয়ে গেলো শেখ হাসিনার ক্ষমতার দূর্গ? আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকার কারনে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল অনেকটা। চাটুকার অযোগ্য সুযোগ সন্ধানী ঘিরে ছিলেন তার নেতৃত্বের চারপাশ।

২০০৮ সালের বিরাট বিজয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে রায় দিয়েছিলো। দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনা ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা কিছুটা ইমেজ সংকটে পড়েন। এ নিয়ে বিরোধী আন্দোলন তিনি উতড়ে গিয়েছিলেন।

পরবর্তী চৌদ্দ সালের নির্বাচন জ্বালাও পোড়াওয়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। অর্ধেক আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। এই নির্বাচনের পর জনগণ আশা করছিলো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে হয়তো শিগগিরই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে পথে হাঁটেনি। তারপরও জনগণ আওয়ামী লীগ কে মেনে নিয়েছিলো মন্দের ভালো হিসেবে।

কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে যখন বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ করলো তখন গণতন্ত্রকে একটি সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসার একটা ঐতিহাসিক সুযোগ পেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেই সুযোগ তিনি কাজে লাগাননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোন ভোট হয়নি। রাতের ভোটে লজ্জিত করা হয়, পুরো জাতিকে কলঙ্কিত করা হয় ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে। ওই নির্বাচন যদি ন্যূনতম সুষ্ঠু হতো তাহলে আজকের এই পরিণতি হতো না।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো পাঁচ বছর। এই পাঁচ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য বিরোধী দল আন্দোলন করেছে আর আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। সেই কৌশলে কিছু সময়ের জন্য জিতেও গেছে কিন্তু ভিত্তি গড়ে ওঠেনি। নেতাদের মাঝে ভোট আতঙ্ক পেয়ে বসে।২০২৪ সালের নির্বাচন ভোটারবিহীন না হলেও সকল দলের অংশগ্রহণমূলক ছিলো না।

প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী-আমলারা পুলিশনির্ভর হয়ে পড়েন। জনগণের পালস বুঝতে অক্ষম হয়ে পড়েন নেতারাও। তিনি সংগঠনকে গতিশীল করার দিকে মোটেও মনোযোগ দেননি। অযোগ্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে টানা তিনবার দায়িত্ব পালন করার রেকর্ড স্থাপন করেন ওবায়দুল কাদের। তার কথা জনবিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি কথা বললেই জনগণ বিরক্ত হয় এমন একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো সর্বত্র। শেষ পর্যন্ত তার কথা মানুষের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আমরা দেখেছি এই ১৫ বছরে একটি শ্রেণি গড়ে উঠেছে সব জায়গায় এটা অবশ্য অন্যদেরও হবে। সর্বত্র গড়ে ওঠেছিলো চাটুকার সিন্ডিকেট। তারা আওয়ামী লীগ ও দেশের কারোই ভালো চায়নি- যেটা অনেকটা দৃশ্যমান ছিলো।

এবারের অহিংস ছাত্র আন্দোলন চলছিলো। এই দাবি যথাসময়ে মানা কোন কঠিন কাজ ছিলো না। এক চাটুকার সাংবাদিক প্রশ্ন করে সবকিছু উস্কে দিলো চীন সফরের পর সংবাদ সম্মেলনে। আর এখান থেকেই বিস্ফোরণ। আর এসময় আওয়ামী লীগের কাণ্ডজ্ঞানহীন সাধারণ সম্পাদক ঘোষনা করলেন, আন্দোলনকারীদের দমনে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তিনি বাস্তবতা বিবর্জিত বক্তব্য দিয়ে আন্দোলনে ঘি ঢাললেন।আন্দোলন বিস্ফুরিত হলো। তারপর একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত।

এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন চলে গেলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। জনগণ ক্রমশই ক্ষুব্ধ হচ্ছিল। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা এতো এতো কর্তাব্যক্তিরা বুঝতেই পারলেন না জনগণ কী ভাবছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখে সাধারণ মানুষ উৎসাহিত হয়েছে। তারা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। সেই সাথে কৌশলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রেণি পেশার মানুষ, ভবঘুরে, অতি উৎসাহী, অবুঝ বালক-বালিকারাসহ সকল সুযোগ সন্ধানী দুস্কৃতিকারীরাও সামিল হন সেই আন্দোলনে। এই যৌক্তিক আন্দোলনে তাদের যুক্ত হওয়াটাও স্বাভাবিক। আন্দোলন পরিণত হয়েছে একদফায়। অবশেষে শেখ হাসিনাকে সামরিক চাপের মুখে অপমানজনকভাবে দেশ থেকে অগোচরে বিদায় হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এমন দুর্ভাগ্যজনক বিদায় হয়তো কেউ চায়নি। কিন্তু রাজনীতিতে এটা হলো নির্মম বাস্তবতা। একজন দেশপ্রেমিক শাসককে স্তাবকরা কীভাবে জনবিচ্ছিন্ন করে তা আমরা দেখতে পেলাম!

সুসময়ের চাটুকারা এখন পালিয়ে যাবে যাক। আমরা জানি যে, আওয়ামী লীগ ফিনিক্স পাখির মতো একটি রাজনৈতিক দল। এর চেয়েও বড় দুর্যোগ আওয়ামী লীগ সামাল দিয়েছে। আওয়ামী লীগে রয়েছে অনেক ত্যাগী,পরীক্ষীত সাহসী মানুষ। যারা দু:সময়ে দাঁড়াবেন। এখন আবারও সেই দু:সময় এসেছে। এই দেশের সৎ, দলের প্রতি নিষ্ঠাবান ত্যাগী মানুষগুলো হয়তো আবার তার সামনে এসে দাঁড়াবেন। যবনিকা আবার উঠবে, আবার নতুন প্রভাত, ভোরের আলো, নতুন দৃশ্য দেখা দেবে- প্রত্যাশা রাখতেই পারি।

---

লেখক: সংগঠক ও রাজনীতিবিদ



বিষয়: #



আর্কাইভ