শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
শুক্রবার ● ৯ আগস্ট ২০২৪
প্রচ্ছদ » জাতীয় » নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের পরিচিতি
প্রচ্ছদ » জাতীয় » নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের পরিচিতি
১০৬ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৯ আগস্ট ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের পরিচিতি

---

 

স্বদেসভূমি ডেস্ক

 

বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সরকার। ১৭ সদস্যবিশিষ্ট এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বৃহস্পতিবার ৮ আগস্ট শপথ নিয়েছেন। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে তারা শপথ নেন। তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। 

 

শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিন অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন-  বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, নারী নেত্রী ফরিদা আখতার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত এমডি  নুরজাহান বেগম, মানবাধিকার সংগঠক আদিলুর রহমান খান, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিধান রঞ্জন রায়, ফারুকী আযম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, হেফাজতের সাবেক নায়েবে আমীর আ.ফ.ম খালিদ হাসান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উপদেষ্টাদের জীবনী সংক্ষেপ পাঠকদের জন্য নিম্নে তুলে ধরছি-

 

 

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২০০৫ সালে তিনি নবম গভর্নর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ দেয়ার আগে তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। 

 

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের জন্ম পুরান ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সালেহউদ্দিন পরবর্তীতে ১৯৭৪ এবং ১৯৭৮ সালে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তিনি ২০০৬ সালে এক বছরের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্টে তিনি ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে ডিস্টিংগুইশড অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ড পান। 

 

তিনি বেসরকারি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টি। তিনি এনজিও ফোরামের সাধারণ কমিটির সদস্য। এছাড়া তিনি গ্রামীণফোনের একজন স্বাধীন পরিচালক । তিনি সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি জার্নাল অফ আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসেরও উপদেষ্টা । 

 

 

মো. তৌহিদ হোসেন

 

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন। ১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর তৌহিদ হোসেন ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। 

 

১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি ২০০০ পর্যন্ত হোসেন ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর ২০০৬ থেকে ৮ জুলাই ২০০৯ পর্যন্ত তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন। 

 

২০১২ সালের জুনে তৌহিদ হোসেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। তিনি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ইন্টারন্যাশনাল মডেল ইউনাইটেড নেশনস-এর প্রধান অতিথি ছিলেন।

 

২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি বিষয়ক সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন হোসেন তৌহিদ হোসেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত একটি সেমিনারে তিনি একজন অতিথি ছিলেন।

 

 

এএফ হাসান আরিফ

 

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী। ওয়ান ইলেভেভেনের পর ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। 

 

হাসান আরিফেরর জন্ম ১৯৪১ সালে, ভারতের কলকাতায় (তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি) জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে কলকাতা হাইকোর্ট, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একজন আইনজীবী হিসেবে এনরোলমেন্ট হন। 

 

হাসান আরিফ কলকাতা হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি বাংলাদেশে এসে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে এনরোলমেন্ট হন।  তিনি ঢাকাযর আইন সংস্থা এএফ হাসান আরিফ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস-এর প্রধান। র বাণিজ্যিক ও বন্দর শহর চট্টগ্রামেও এর একটি শাখা আছে।

 

 

এম সাখাওয়াত হোসেন

 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন একজন বাংলাদেশী সামরিক ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তিনি ২০০৭-২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার ছিলেন। কলাম লেখক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। সেনাবাহিনীর চাকরি ও নির্বাচন কমিশন থেকে অবসরের পর তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে গবেষণার কাজ করছেন। 

 

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম ও বইয়ের লেখক হিসেবে তিনি সুপরিচিত। এ পর্যন্ত তার লেখা প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৩টি। তার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫-৮১, বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫-৮১, আমার স্মৃতি কথা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের ইতিকথা: আফগানিস্ত হতে আমেরিকা (কাবুল হতে বাগদাদ), নির্বাচন কমিশনে পাঁচ বছর (২০০৭-২০১২), গণতন্ত্র ও নির্বাচন, ইলেকশন রিফর্ম ইন বাংলাদেশ (২৯৭২-২০০৮), তেল-গ্যাস: নব্য উপনিবেশবাদ, বার্মার রোহিঙ্গারা গণহত্যার ইতিহাস, দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা, কত জনপদ কত ইতিহাস বই অন্যতম।

 

এম সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, বরিশালে। তেজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা এবং করাচি থেকে ১৯৬৩ সালে এসএসসি ও ১৯৬৫ সালে করাচির ইসলামিয়া বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬৬ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যায়ন কালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, ওই বছরই কশিমন লাভ করেন।

 

১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি শিয়ালকোটে ছিলেন। স্বাধীনতার পর প্রায় দু’বছর পাকিস্তানের বন্দি শিবিরে থাকার পর ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরে মেজর পদে কুমিল্লা সেনানিবাসে যোগ দেন। 

 

১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডে স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৯-৮১ সালে ঢাকায় সেনাসদরে গুরুত্বপূর্ণ পদে অপারেশন ডাইরেক্টরেট এবং পরে ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে দুটি ইনফেনট্রি ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন।

 

২০১১ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্, ঢাকা থেকে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।

 

 

ফারুক ই আজম বীর প্রতীক

 

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপ-অধিনায়ক ছিলেন ফারুক-ই-আজম। যুদ্ধের সময় সমন্বিত যুদ্ধ ‘অপারেশন জ্যাকপট’ এর উপ-অধিনায়ক ছিলেন। আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে সেই অপারেশন ফলাও করে প্রচারিত হয়। এ ডব্লিউ (আবদুল ওয়াহিদ) চৌধুরীর নেতৃত্বে দু’দলের প্রায় ৩৭ সদস্য অংশ নেন যুদ্ধে

১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রীয় বীরপ্রতীক খেতাব পান তিনি। তার খেতাবের সনদ নম্বর ২৯৪।

 

ফারুক-ই-আজমের জন্ম চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ গ্রামে। তার বাবা মনির আহমদ চৌধুরী। মা জান্নাতুল ফেরদৌস। স্ত্রী শামিম আরা বেগম। তারা দুই ভাই দুই বোন।

 

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় উচ্চমাধ্যমিক পাস করা এই বীর অপারেশন জ্যাকপট ছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি অপারেশন চালিয়েছিলেন।

 

তিনি শুধু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নন। একজন সফল ব্যবসায়ীও। চট্টগ্রাম মহানগরের ১৯ মেহেদিবাগ সড়কের বাসিন্দা ফারুক-ই-আজম দেশি পোশাক ‘রমনীয়া’র অন্যতম পথিকৃৎও।

 

এদিকে, হাটহাজারীর বাসিন্দা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হওয়ার পাশাপাশি হাটহাজারীর আরেক বাসিন্দা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় হাটহাজারী তথা চট্টগ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ চলছে।

 

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে ‘চলো দুর্জয় প্রাণের আনন্দে’ স্লোগানে চট্টগ্রামে অরাজনৈতিক উদ্যোগে শুরু হয়েছিল প্রথম মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা। ফারুক-ই-আজম ও অধ্যাপক আবদুল মান্নান ছিলেন এ মেলার যুগ্ম আহ্বায়ক। আহ্বায়ক ছিল না কেউ। সদস্য সচিব ছিলেন আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া। কোষাধ্যক্ষ ছিলেন শামসুল হোসাইন।

 

 

এএফ হাসান আরিফ 

 

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ। ওয়ান ইলেভেনের পর ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। 

 

তিনি ১৯৪১ সালে ভারতের কলকাতায় (তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি) জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

 

তিনি ১৯৬৭ সালে কলকাতা হাইকোর্ট, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একজন আইনজীবী হিসেবে এনরোলমেন্ট হন। তিনি কলকাতা হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন। 

 

১৯৭০ সালে তিনি বাংলাদেশে এসে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে এনরোলমেন্ট হন।  তিনি ঢাকাযর আইন সংস্থা এএফ হাসান আরিফ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস-এর প্রধান বাণিজ্যিক ও বন্দর শহর চট্টগ্রামেও এর একটি শাখা আছে।

 

২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ এর এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।  পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা (মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী) ছিলেন।

 

 

ড. আসিফ নজরুল

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ওরফে আসিফ নজরুল। আইন, মানবাধিকার, সুশাসন ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি প্রচুর লেখালেখি করেন।

 

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে ১৮৮৯ সালে অনার্স এবং ১৯৯০ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে (১৯৯১) সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও সরকারি কর্মকর্তা (ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

তিনি বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবেও যুক্ত ছিলেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর একাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এছাড়া একাধিক উপন্যাস ও নন-ফিকশন বইও তিনি রচনা করেন। 

 

 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

 

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ১৯৬৮ সালের ১৫ জানুয়ারি এ ঢাকার ধানমন্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রথমে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও আইনের প্রতি আগ্রহ থেকে পরে বিভাগ পরিবর্তন করে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে এলএলএম সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের বাইরে বেশ কয়েকটি ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ করেন।

 

১৯৯৩ সালের জুলাই মাসে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)-তে। বেলা তখন মাত্র যাত্রা শুরু করেছে। এরপর ১৯৯৭ সালে বেলা’র সংগঠক ও প্রধান মহিউদ্দিন ফারুক মারা যাওয়ার পর রিজওয়ানা ‘কমনওয়েলথ বৃত্তি’র সুযোগ হাতছাড়া করে বেলা’র প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন। বেলা’র হাত ধরেই এখনো লড়ে চলেছেন পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী নানা চক্র আর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। 

 

সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের “পরিবেশ পুরস্কার” এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে “গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ লাভ করেন। ২০০৯ সালে টাইম সাময়িকীরতে বাংলাদেশী আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী হিসেবে “হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট” খেতাবপ্রাপ্ত হন তিনি। এছাড়া তিনি ২০১২ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান। ২০২২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান।

 

 

ফরিদা আখতার

 

বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সক্রিয়ভাবে জড়িত ফরিদা আখতার। তার জন্ম চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার হারলা গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন।

 

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা জানা এবং পরিবর্তনের জন্য নীতিনির্ধারণী গবেষণা ও লেখালেখিই তার কাজের প্রধান জায়গা। নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন।

 

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পরিচালিত কার্যক্রমের মারাত্মক কুফল ও নারী স্বাস্থ্যের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে লেখালেখি এবং প্রতিকার আন্দোলের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সুপরিচিত ফরিদা আখতার। 

 

তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে নারী ও গাছ, কৈজুরী গ্রামের নারী ও গাছের কথা। ফরিদা আখতার বর্তমানে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা এর সভানেত্রী, সম্মিলিত নারী সমাজের সদস্য এবং নয়াকৃষি আন্দোলনের সংগঠক।

 

 

শারমিন মুরশিদ

 

বর্তমানে অধিকার ভিত্তিক সংগঠন ‘সমাজ কল্যাণ সংস্থা ব্রতী’ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ। সংস্থাটি ২০০১ সাল থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি বিশেষ করে আদিবাসী জনগনের অধিকার আদায়ে কাজ করে আসছে।

 

শারমিন মুরশিদ কেবল এই সংস্থার নির্বাহী কর্মকর্তায় নন পাশাপাশি তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সুশীল সমাজে। ২০১৮ ও ২০২৪ এর জাতিয় নির্বাচনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন তিনি। স্বরব ছিলেন নির্বাচনের পরিবেশ, জনগণের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে।   

 

 

নূরজাহান বেগম

 

নূরজাহান বেগম বর্তমানে নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭৬ সালে যখন তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকল্প শুরু করেন তখন তিনি প্রফেসর ইউনূসের প্রথম সারির সহযোগীদের একজন ছিলেন। 

 

নুরজাহান, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের তৃণমূল গোষ্ঠীতে দরিদ্র গ্রামীণ মহিলাদের সংগঠিত ও প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্যাংকের শুরুর দিকে এবং সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিনে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রথম “প্রিন্সিপাল” ছিলেন। তিনি অনেক দেশে মাইক্রো-ক্রেডিট প্রোগ্রামের পরামর্শদাতা, প্রশিক্ষক এবং মূল্যায়নকারী হিসাবে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সম্মেলন এবং সেমিনারে বক্তৃতা দিয়েছেন। 

 

তিনি গ্রামীণ ফাউন্ডেশন কর্তৃক সুসান এম. ডেভিস লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০০৮ পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি ওয়ার্ল্ড সামিট মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস অ্যাওয়ার্ড ২০০৯ এবং ভিশন অ্যাওয়ার্ড ২০০৯-এ ভূষিত হন। তিনি ২০০৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত ফরচুন মোস্ট পাওয়ারফুল উইমেন সামিটে অংশগ্রহণ করেন এবং স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় অনুষ্ঠিত ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিস পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতি নিযুক্ত হন ২০০৭ সালে।

 

 

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

 

হেফাজতে ইসলামীর সাবেক আমীর ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তার আরেক নাম আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন। ড. খালিদ একজন বাংলাদেশি সুন্নী দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত। 

 

১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা, মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক, বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের কুরআনিক সায়েন্সেস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অতিথি শিক্ষক। 

 

তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খণ্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টি। এছাড়াও তিনি ৪টি জাতীয় পত্রিকার নিয়মিত লেখক। ১৯৮২ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও ১৯৮৩ সালে একই বিষয়ে এমএ পাশ করেন। 

 

২০০৭ সাল থেকে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার ধর্মীয় ও সাহিত্য বিষয়ক মুখপত্র মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক ও হালিশহর এ-ব্লক হজরত উসমান (রা.) জামে মসজিদের খতিব, আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরির মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

 

 

মো. তৌহিদ হোসেন

 

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন। ১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাস করা তৌহিদ হোসেন ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। 

 

১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি ২০০০ পর্যন্ত হোসেন ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর ২০০৬ থেকে ৮ জুলাই ২০০৯ পর্যন্ত তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব ছিলেন। 

 

২০১২ সালের জুনে তৌহিদ হোসেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। তিনি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ইন্টারন্যাশনাল মডেল ইউনাইটেড নেশনস-এর প্রধান অতিথি ছিলেন।

 

২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি বিষয়ক সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন হোসেন তৌহিদ হোসেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত একটি সেমিনারে তিনি একজন অতিথি ছিলেন।

 

 

সুপ্রদীপ চাকমা

 

পররাষ্ট্র ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা। একসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছিলেন। 

 

বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া সুপ্রদীপ চাকমা মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা এবং কলম্বোতে বাংলাদেশ মিশনেও তিনি বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।

সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম ১৯৬১ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

 

 

নাহিদ ইসলাম

 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। ডাকনাম ফাহিম। তার বাড়ি ঢাকার বনশ্রী এলাকায়। তার বাবার নাম বদরুল ইসলাম এবং মা মমতাজ নাহার। 

 

নাহিদ উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে। ২০১৬-১৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনেও অংশ নেন। পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির সদস্য সচিব হন। চলতি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং আন্দোলনের জন্য গঠিত প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হন।

 

 

আসিফ মাহমুদ 

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। তার পুরো নাম আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। তার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মো. বিল্লাল হোসেন ও মা রোকসানা বেগম।

 

ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। ২০১৭-১৮ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি হন। চলতি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আসিফ সমন্বয়ক হিসেবে কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন।

 

 

 



বিষয়: #



আর্কাইভ