শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১
Swadeshvumi
শনিবার ● ১২ অক্টোবর ২০২৪
প্রচ্ছদ » মুক্তমত » বিপন্ন স্বাস্থ্য শিক্ষা: ফার্মাকোলজি- ঔষধ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের দুর্দিন
প্রচ্ছদ » মুক্তমত » বিপন্ন স্বাস্থ্য শিক্ষা: ফার্মাকোলজি- ঔষধ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের দুর্দিন
৩৪১ বার পঠিত
শনিবার ● ১২ অক্টোবর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিপন্ন স্বাস্থ্য শিক্ষা: ফার্মাকোলজি- ঔষধ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের দুর্দিন

জাহিদুল হক খান

জাহিদুল হক খান

চিকিৎসক ছাড়া যেমন রোগীর চিকিৎসা হয় না, তেমনি ঔষধ ছাড়া চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা করতে পারে না। আর এ ঔষধ সংক্রান্ত সব কিছু চিকিৎসক জানে ফার্মাকোলজি বা ঔষধ বিজ্ঞান পড়ার মাধ্যমে।

এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করে চিকিৎসক হবার জন্য যে আটটি বেসিক বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে হয় তার একটি ফার্মাকোলজি বা ঔষধ বিজ্ঞান যা ৩য় ও ৪র্থ বর্ষে পড়ানো হয়। তাছাড়া এ বিষয়ে এমফিল ও এমডি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে এবং সম্প্রতি এফসিপিএস কোর্স চালু করা হয়েছে। 

শিক্ষার্থীদের পড়ানোর পাশাপাশি ফার্মাকোলজিস্টরা জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ও জাতীয় ঔষধ নীতি প্রণয়ন, ঔষধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হ্রাসকরন, এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ, ঔষধের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করতে এবং বিদ্যমান ও নতুন নতুন ঔষধ নিয়ে গবেষণা করতে সচেষ্ট থাকেন। 

স্ট্যান্ডার্ড সেটআপ অনুযায়ী ১০০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী জন্য ফার্মাকোলজির একজন অধ্যাপক, দুই জন সহযোগী অধ্যাপক এবং তিনজন সহকারী অধ্যাপক কর্মরত থাকার কথা। সে হিসেবে সারাদেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং সহকারী অধ্যাপক পদ কমপক্ষে যথাক্রমে ৪১টি, ৭৬টি ও ১১৪টি কমপক্ষে হওয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, ঢাকা মেডিকেল কলেজ সহ পুরাতন আটটি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ২৫০ এবং অধিকাংশ কলেজেই ১০০এর অধিক। লোকবল সংকটে হিমসিম খাচ্ছে এ বিষয়ের শিক্ষকরা। আবার আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পাচ্ছে না সময় মতো পদোন্নতি। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করা যথেষ্ট সংখ্যক ফার্মাকোলজির শিক্ষক থাকলেও সময়মতো পদোন্নতি ও যথাযথ স্থানে পদায়ন না করায় এ বিষয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম।

সারাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে ফার্মাকোলজির মোট অধ্যাপক পদ আছে ৩৫টি যার ৩০টিই শূন্য। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়মিত পদে একজন করে অধ্যাপক কর্মরত। দুইজন অধ্যাপক স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে পরিচালক হিসেবে প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত। ৪১টি সহযোগী অধ্যাপক পদে ৩৭ জন কর্মরত যাদের মধ্যে ১২ জন ২০২০ সালে, ২২ জন ২০২৩ সালে এবং ৩ জন ২০২৪ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

সহকারী অধ্যাপক ৪৯টি পদের ২৪টি শূন্য। ২০১৯ সালের পরে অন্যান্য সব বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হলেও ফার্মাকোলজির সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয় নি। এ বিষয়ে ২০২৩ সালের মে মাসে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান, যুগ্ম সচিব জাকিয়া পারভীন ও উপসচিব শারমিন সুলতানা বলেছেন পদ শূন্য না থাকায় পদোন্নতি দেয়া যাচ্ছে না। আগে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদোন্নতি দেয়া হবে। 

বহুবার শিক্ষক সংকট এবং নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী দুই ব্যাচ একসাথে চলমান বিষয়ে দেনদরবার করার পর ২০২৩এর অক্টোবরে ২২ জন এবং ২০২৪ এর মার্চে ৩জন সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। উল্লেখ্য, ২০২৩ এর অক্টোবরে পদোন্নতি প্রাপ্তদের নয় মাস পরে জুলাই, ২০২৪ এ পদায়ন করা হয়। কিন্তু গত এক বছরেও শূন্য হওয়া ২২ টি সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। অথচ ২২থেকে ৩৯তম বিসিএস-এ নিয়োগ প্রাপ্ত ৬৫জন ক্যাডার ফার্মাকোলজিস্ট ২০২২এর শুরুতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির কাগজপত্র জমা দিয়ে অপেক্ষা করে করে এখন হতাশ। উল্লেখ্য, সহকারী অধ্যাপকের অবশিষ্ট ২৪টি ক্যাডার পদ প্রকল্প ও এডহক নিয়োগ প্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকদের দখলে। ফলে ২৪টি ক্যাডার পদে ক্যাডার কর্মকর্তাগণ পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন।

এডহকদের পরবর্তী ধাপ বিষয়ে আইনগত সীদ্ধান্ত না হলেও এবং ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য শিক্ষা মন্ত্রনালয় শিক্ষক স্বল্পতার দোহাই দিয়ে ২০২২ এর জানুয়ারিতে তাদের ৪র্থ গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপক পদে চলতি দায়িত্বে পদায়ন করে। এর ফলেই ২০২৩এ নিয়মিত পদোন্নতি প্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপকদের পদায়ন ব্যাহত হয়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে এডহকদের চলতি দায়িত্বে থাকার কারণে সহযোগী অধ্যাপকগন সংযুক্তি অথবা অন্য পদের বিপরীতে কর্মরত থাকছেন। আবার অনেক এডহক কর্মকর্তাকে সহকারী অধ্যাপক পদে চলতি দায়িত্বে পদায়ন করায় সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হলেও পদায়ন সংক্রান্ত জটিলতা থেকে মুক্তি পাবেন না ক্যাডার ফার্মাকোলজিস্টরা।

বেসিক সাবজেক্টে শিক্ষক ও গবেষণা সংকট দূর করতে ২০২০ সাল থেকে নন প্র্যাকটিসিং প্রণোদনা ভাতা চালু করা হয়েছে এবং কেবলমাত্র বেসিক সাবজেক্টে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করা শিক্ষকদের এটি পাওয়ার কথা। কিন্তু বিভিন্ন ক্লিনিকেল বিষয়ের (সার্জারি, মেডিসিন, গাইনী ইত্যাদি) চিকিৎসকরা বেসিক সাবজেক্টে প্রভাষক হিসেবে পদায়ন নিয়ে প্রতি মাসে ১০,০০০/- টাকা ভাতা নিচ্ছেন। সম্প্রতি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের একজন এমফিল ডিগ্রি সম্পন্ন করা প্রভাষককে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় বদলী করে গাইনী বিভাগের এফসিপিএস দ্বিতীয় পর্ব পরীক্ষার্থীকে ফার্মাকোলজির প্রভাষক হিসেবে পদায়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বেসিক সাবজেক্টে শিক্ষক সংকট দূরীকরণে ২০২২ সালে ল্যাটারাল এন্ট্রির উদ্যোগ নেয়া হয়। ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজের দোহাই দিয়ে কিছু কিছু বিষয়ে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্যাডার অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও তারাই হন ঢাকা মেডিকেল কলেজের  বিভাগীয় প্রধান। এ বাস্তবতা অনুধাবন করে ক্যাডার ফার্মাকোলজিস্টদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ ফার্মাকোলজিকেল সোসাইটির তৎকালীন সভাপতি বিএসএমএমইউ এর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ সায়েদুর রহমান ও মহাসচিব অধ্যাপক এলিজা ওমর ফার্মাকোলজিতে ল্যাটারাল এন্ট্রির তীব্র বিরোধিতা করেন এবং সময়মতো পদোন্নতির দাবি জানান।

সরকারি মেডিকেল কলেজে ফার্মাকোলজির শিক্ষক স্বল্পতা নিরসনে ও ক্যাডার ফার্মাকোলজিস্টদের স্বার্থ রক্ষায় কিছু সুপারিশ:

১. অনতিবিলম্বে ২৫টি শূন্য পদসহ শিক্ষা ও প্রশাসন ক্যাডারের মতো শর্ত পূরণকৃত সকল ফার্মাকোলজিস্টের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া।

২. ২৮তম বিসিএস (মার্চ, ২০২৪এ ২৮ বিসিএস পর্যন্ত পদোন্নতি দেয়া হয়েছে) পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপকদের অন্যান্য শর্তাবলী পূরণ থাকলে ফার্মাকোলজির শিক্ষক হিসাবে তিন বছর কর্মকালকে ফিডার পদের কর্মকাল বিবেচনা করে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি ও নিয়মিত পদায়ন।

৩. ২০২০ এবং ২০২৩ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রাপ্তদের অন্যান্য শর্তাবলী পূরণ থাকলে ফার্মাকোলজির শিক্ষক হিসেবে মোট আট বছর কর্মকালকে ফিডার পদের কর্মকাল (শর্ত: সহকারী অধ্যাপক ৩ বছর ও সহযোগী অধ্যাপক ৫ বছর) হিসেবে বিবেচনা করে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি ও নিয়মিত পদায়ন।

৪. শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে নতুন পদ সৃজন।




বিষয়: #



আর্কাইভ