সোমবার ● ১৭ অক্টোবর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » দেশের ৫৭ জেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ আজ
দেশের ৫৭ জেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ আজ
# বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন ২৬ চেয়ারম্যান
# ভোট মনিটরিংএ প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন
# নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কর্তৃপক্ষকে ইসির অনুরোধ
বিশেষ প্রতিনিধি
সারাদেশের ৫৭ জেলা পরিষদে আজ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ সকাল ৯টায় শুরু হয়ে একটানা চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত। নির্দলীয় এই নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতি উপজেলা সদরে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ইভিএম এ ভোট দেবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রতিটি ভোটকক্ষে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রতিটি কেন্দ্র ইসি কার্যালয়ের মনিটরিং সেল থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এই নির্বাচন নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হচ্ছে ৫৭ জেলায়। কারণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ এর নির্বাচন আদালত আদেশে স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া ভোলা ও ফেনীতে সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ওই দুই জেলায় ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।
ইসির তথ্যানুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে এরই মধ্যে ২৬ জন চেয়ারম্যান, ১৮ জন মহিলা সদস্য এবং ৬৫ জন সাধারণ সদস্যসহ মোট ১০৯ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৫৭ জেলা পরিষদের ভোটে চেয়ারম্যান পদে আজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৯২ জন প্রার্থী। অন্যদিকে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৬০৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৪৮৫ জন।
নির্বাচনি বিধি-বিধান অনুযায়ী- সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এর আগে গত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোট চলাকালে সিসিটিভি ও ইভিএম মেশিন যথাযথভাবে সচল রাখার স্বার্থে এবং ভোটারগণ যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট উপজেলা সদরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর জানিয়েছেন, নির্বাচনি পরিবেশ সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে ভোট বন্ধের পর এ নির্বাচনকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ইসি। কোন জেলায় যাতে এমপি, মন্ত্রী বা প্রভাবশালী কোন ব্যক্তি প্রভাব খাটাতে না পারে সেজন্য এরই মধ্যে ইসির পক্ষ থেকে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিক নির্দেশনা দিয়ে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। এতে ভোটকক্ষের গোপনীয়তা রক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ভোটকক্ষে ভোটররা যাতে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে না পারেন, তা নিশ্চিতে প্রিসাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনি এলাকায় মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স
ইসির যুগ্ম-সচিব আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ জন সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও র্যাবের একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে।
জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৯৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ভোটগ্রহণের আগে দু’দিন, ভোটগ্রহণের দিন ও পরের দিন দায়িত্ব পালন করবেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্রের জন্য পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং র্যাবের একটি করে মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ১৯ বৃহত্তর জেলায় ২ প্লাটুন করে বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায় এক প্লাটুন করে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি রিজার্ভ ফোস। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোটার সংখ্যা ও ভোটকক্ষ
নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মুহাম্মদ এনাম উদ্দীন জানিয়েছেন, এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ৬০ হাজার ৮৬৬ জনপ্রতিনিধি। ৫৭ জেলার স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে এ ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডের ৪৪৮টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৬৬টি। ভোটকেন্দ্র ৪৬২ এবং ভোটকক্ষ হচ্ছে ৯২৫টি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর এসব জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে জনগণের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়া এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আরও স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে ২০০০ সালে যে আইন প্রণীত হয়, তা বাস্তবায়িত হয় ২০১৬ সালে। ওই বছর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক জেলা পরিষদ আইনের আওতায় প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য এবং পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ মোট ২১ জনের সমন্বয়ে জেলা পরিষদ কার্যক্রম শুরু করে।
বিষয়: #জেল পরিষদ নির্বাচন