শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
বৃহস্পতিবার ● ২০ অক্টোবর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » গাইবান্ধার উপনির্বাচনে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক: সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের মতামত
প্রচ্ছদ » জাতীয় » গাইবান্ধার উপনির্বাচনে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক: সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের মতামত
২৯০ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২০ অক্টোবর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গাইবান্ধার উপনির্বাচনে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক: সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের মতামত

১৯ অক্টোবর বুধবার নির্বাচন ভবনে সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার ও সচিবদের পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় বর্তমান সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনাররা।

# আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে ইসিকে অটল থাকার পরামর্শ

# সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ও সিসিটিভি’র ব্যবহার বাড়ান

# এনআইডি কার্যক্রম ইসি’র কাছেই থাকা উচিত

***************

শাহনাজ পারভীন এলিস,  প্রধান প্রতিবেদক

অনিয়মের কারণে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে নজিরবিহীন মন্তব্য করে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এই অবস্থান ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা। একই সাথে ওই অনিয়মের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শও দেন তারা। এছাড়া এনআইডি কার্যক্রম ইসিতে রাখা ও ইভিএম নিয়ে বিতর্ক এড়াতে এই পদ্ধতির ভোটে আস্থা তৈরি এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ বাড়ানোর পক্ষেও মত দেন তারা। গতকাল বুধবার নির্বাচন ভবনে বর্তমান সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনারদের সাথে পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারা এসব কথা বলেন।

বর্তমান কমিশনের সাথে সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের মতবিনিময় সভা

মতবিনিময় শেষে গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রশ্নে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রউফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন ভোটাররা ভোট দিতে পারে না। একজনের ভোট আরেকজন দেয়, তখন নির্বাচন কমিশন বসে থাকবে কেন? স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের এই অধিকার আছে। তাদের চোখের সামনে ধরা পড়ছে। ভোট দিতে পারছে না। কারচুপি হচ্ছে। তারা নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বলেছি, দরকার হলে বারে বারে বন্ধ করবেন। জাতিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন।’ ইভিএম প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কমিশন চেষ্টা করতে থাকুক। মানুষ যদি শিক্ষিত হয় তাহলে হবে।’

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রউফ

আলোচনায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা সরাসরি ইভিএমের পক্ষে মত দিলেও বিচারপতি আব্দুর রউফ ও কাজী রকিব বলেন, আরও যাচাই-বাছাই ও জনমত তৈরি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া অনিয়মের কারণে গাইবান্ধা উপনির্বাচন বন্ধে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাকে সাধুবাদ ভবিষ্যতেও এমন সিদ্ধান্ত নিতে ইসিকে অটল থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ

সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বডি। সংবিধান ও আইন মোতাবেক তারা কাজ করে যাবে, আমরা এই পরামর্শ দিয়েছি।’ এসময় তিনি ইভিএম প্রসঙ্গে জনগণকে সচেতন করা ও ব্যাপক প্রচার করার পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে প্রচার-প্রচারণা করতে হবে। এর সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। উনারা বলেছেন, নতুন ইভিএমটি খুবই উন্নতমানের। অলমোস্ট ডিজিটাল। কিন্তু এটা তো লোকজনকে জানতে হবে। এটা নিয়ে ইতিবাচক প্রচারণার দরকার আছে।’

গাইবান্ধা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যেটা নিয়েছে ঠিকই নিয়েছে। বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার এই ক্ষমতা আছে। তারা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে নতুনভাবে আর তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করার দরকার নেই। আমাদের সময় যেভাবে রিপোর্ট আসতো, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। এই কমিশন সিসিটিভিতে পর্যবেক্ষণ করেছে। তার আলোকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়ে সাবেক এই সিইসি বলেন, ‘ইভিএম যেসব জায়গায় ভোট হয়েছে, সেখানে ৬০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা কোনও প্রশ্ন তোলেননি। প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনি কর্মকর্তারা কোনও আপত্তি করেননি। বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীরাও কোনও আপত্তি করেননি। যেখানে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে, সেখানকার ভোটাররা জানেন এটা কী? যারা ব্যবহার করেননি তাদের পক্ষে ইভিএম বুঝাটা একটু কঠিন। আমি বলেছি, যতদূর পারা যায়, আগামী জাতীয় সংসদে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত। আমাদের এখানে ভোটের পরিবেশ ভালো থাকে না। কেন্দ্র দখল হয়। ভোট ডাকাতি হয়। এখানে ১০০ ভাগ ভোট হয়। কাজেই এখানে ব্যালটে নির্বাচনের চেয়ে ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনি সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন

তবে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করে সিসিটিভি ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। ভালো হোক মন্দ হোক, আপনাদের ইভিএম নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। যে বাজেটে ১৫০ আসনের জন্য ইভিএম কিনবেন, তার থেকে বেটার যতখানি পারেন সিসিটিভি ব্যবহার করা যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। যেটা করেছেন সেটা ঠিক আছে। তবে পরের ধাপগুলোতে যেন স্লিপ না করেন। যদি স্লিপ করেন, তাহলে জাতির কাছে অন্য রকমের মেসেজ যাবে যে, আপনারা দেখানোর জন্য করেছেন, বাকিটুকু করলেন না। আইন শক্ত অবস্থানে। প্লিজ ডু ইট। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে পরিবেশ ঠিক নেই তাহলে নির্বাচন বন্ধ করতে পারেন। যতক্ষণ পর্যন্ত মনে করবেন, পরিবেশ ঠিক নেই, ততক্ষণই বন্ধ রাখতে পারবেন। আইনে কোথা বাধা নেই।’ এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এর আগে কোনও কমিশন কিন্তু এটা করতে পারেনি। ১৯৯৪ সালে যদি এটা করা হতো, তাহলে আজকে পলিটিকালল ফিল্ডটি অন্যরকম হতো। হতে পারতো ইতিহাস।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন

জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা উচিত উল্লেখ করে এম সাখাওয়াত বলেন, ‘এনআইডিটা সরকার এখান থেকে কেন নিতে চাচ্ছে সেটা পরিষ্কার না। এটা যদি আলাদা হয়ে যায় তাহলে কোনো একসময়ে ভোটার লিস্ট নিয়ে কথা উঠবে, কারটা ঠিক।’ যেসব দেশে আলাদা আছে সেখানে ভোটার তালিকা নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই জায়গাতে বর্তমান কমিশনকে সরকারকে বুঝাতে হবে। আলটিমেটলি গভর্নমেন্ট চাইলে আলাদা করে করতে পারে। কমিশনের এখান থেকে একেবারে এই কথা বলা আমাদের কী করার আছে। গভর্নমেন্টকে বোঝালে বোঝে। কারণ, এই সরকারের সময়েই ভোটার লিস্ট তৈরি করেছিলাম। তারা এটার মাধ্যমে ইলেকশন করেছিল। তাহলে এখন হঠাৎ এনআইডিটা কেন নিতে চায়? এর বোধগম্যতা আমার কাছে নাই।’

---

তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা ওই সভায় আমন্ত্রিত ২৮ জনের মধ্যে উপস্থিত হন ১৪ জন। তারা হলেন- সাবেক সিইসি বিচারপতি আব্দুর রউফ, কে এম নূরুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, মো. শাহনেওয়াজ, সাবেক ইসি সচিব মোহাম্মদ সাদিক, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দীন আহমেদ, ইসির সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ ও এম এ রেজা এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমান অংশ নেন। অন্যদিকে ইসি’র পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা, আনিছুর রহমান ও মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব দেশের বাইরে আছেন।

এই সভায় উপস্থিত কমিশনারদের মধ্যে বিচারপতি আব্দুর রউফ মাগুরা উপনির্বাচন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কাজী রকিবের অধীনে ও ৩০ ডিসেম্বরের ভোট করার অভিজ্ঞতা রয়েছে কে এম নূরুল হুদার। সাবেক সিইসিদের মধ্যে এটিএম শামসুল হুদা ও আবু হেনা যুক্তাষ্ট্রে আছেন, বিতর্কিত এমএ আজিজ আমন্ত্রণ পাননি। অপর নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান সাউথ আফ্রিকা সফরে রয়েছেন।

রোডম্যাপ অনুযায়ী ধীরে ধীরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দিকে হাঁটছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে সংলাপ হয়েছে রাজনৈতিক দলসহ নানা অংশীজনের সঙ্গে।

দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পরই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক সেরেছে ইসি। মহানগর আর জেলা সদরের দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের পাশাপাশি প্রতিটি ভোট কক্ষে সিসি ক্যামেরায় নজরদারির লক্ষ্য ঠিক করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনাও প্রকাশ করা হয়েছে।

গত জুনের মতবিনিময় সভায় সাবেক সিইসি, ইসি ও কর্মকর্তাদের অন্তত ২৮ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বৈঠকে অংশ নেন দশজন। তারা হলেন- সাবেক সিইসি আব্দুর রউফ, এটিএম শামসুল হুদা, কে এম নূরুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কশিমনার মাহবুব তালুকদার, মো. শাহনেওয়াজ, মোহাম্মাদ আবু হাফিজ, সাবেক ইসি সচিব মোহাম্মাদ সাদিক, মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমান সেসময় বর্তমান ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছিলেন।



বিষয়: #



আর্কাইভ