শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
বুধবার ● ২৬ অক্টোবর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর তাণ্ডবে ১৪ জেলায় ৩৩ জনের প্রাণহানি
প্রচ্ছদ » জাতীয় » ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর তাণ্ডবে ১৪ জেলায় ৩৩ জনের প্রাণহানি
২৩৬ বার পঠিত
বুধবার ● ২৬ অক্টোবর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর তাণ্ডবে ১৪ জেলায় ৩৩ জনের প্রাণহানি

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গতকার সচিবালয়ে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

# নিহতদের প্রতি পরিবার পাচ্ছে ২৫ হাজার টাকা

# ৪১৯টি ইউনিয়নে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

# ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি

# ৭ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে আছে ১০ লাখ মানুষ

বিশেষ প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাতে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশের ১৪ জেলায় ৩৩ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এই ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। সেখানকার সন্দ্বীপ চ্যানেলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও ঢেউয়ে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে ৮ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ৪১৯টি ইউনিয়নে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। স্থানীয় এলাকাবাসী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে ভিত্তিতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

১৪ জেলায় ৩৩ জনের প্রাণহানি

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের ৩ নম্বর জেটি এলাকার পশ্চিমে এ ড্রেজারডুবির ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া শ্রমিকদের সবার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠী এলাকায়। কক্সবাজারের টেকনাফে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মিয়ানমার থেকে টেকনাফ বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়লে ডেক থেকে পড়ে শৌমিং (৭১) নামের একজনের মৃত্যু হয়। তিনি মিয়ানমারে নাগরিক। তিনি ওই জাহাজের বাবুর্চি ছিলেন।

উপকূলীয় এলাকায় ভারী বর্ষণের প্রভাবে বরিশালে এ পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভোলায় গাছচাপা পড়ে ও পানিতে ডুবে ৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। কুমিল্লায় গাছচাপা পড়ে বাবা, মা ও সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলে ঝড়ের কবলে পড়ে মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্য ও এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা হেসাখাল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় সোমবার রাতে ঘরের ওপর গাছ পড়লে এক পরিবারের ৩ জন নিহত হয়েছেন। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে সোমবার রাতে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মারা যান মর্জিনা বেগম (৪০) নামের এক নারী। বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় একটি ঘরের চালে গাছ পড়লে ওই ঘরে থাকা আমেনা খাতুন নামের এক নারী মারা যান। প্রবল ঢেউয়ে সিরাজগঞ্জে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গাছচাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ের সময় রান্নাঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা গ্রামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শরীয়তপুরে গাছের নিচে চাপা পড়ে সাফিয়া বেগম (৬৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। পটুয়াখালী সদর উপজেলার প্রতাপপুর খেয়াঘাট এলাকায় লোহালিয়া নদীতে ইটবোঝাই ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন ট্রলারের শ্রমিক নুরুল ইসলাম (৪৫)। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ইকুরিয়া গ্রামে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় ঘরচাপায় আনিসুর রহমান (৯) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবের সময় বসত ঘরে গাছ ভেঙে পড়লে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে ভেঙে পড়েছে গাছ ও ঘরবাড়ি। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম। টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরী ও নিম্নাঞ্চল। মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিসের দেয়া প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে চট্টগ্রাম ও বরিশালের পর ক্ষয়ক্ষতি বেশি ঢাকায়। ঢাকায়ও অন্তত দুই শতাধিক স্থানে গাছ ভেঙে সড়কে পড়েছে। এতে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা বিভাগ। আর এরমধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকাতেই বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া রাত প্রায় ২টা পর্যন্ত চলা তুমুল বৃষ্টির ফলে রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল ও নয়াবাজার এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার শতাধিক দোকানে পানি উঠেছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কাওরানবাজার, শাহবাগ, ঢাবি ক্যাম্পাস, আগারগাঁও, ধানমন্ডি লেকসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়ে আছে ছোট-বড় গাছ। এসব গাছ সরাতে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিসের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৬টি, বরিশালে ৬৪টি, ঢাকায় ৫৬টি, খুলনায় ২৬টি, রাজশাহীতে ১৭টি, সিলেটে ৪টি, ময়মনসিংহে ৩টি এবং রংপুরে একটি গাছ ভেঙে পড়েছে। আর ঘরের ওপরে খুলনায় ১০টি, বরিশালে ৪টি, ঢাকায় ৩টি এবং চট্টগ্রামে একটি গাছ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ঝড় ও বৃষ্টি চলাকালে সারা দেশে ৩৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে চারটি, নৌ-দুর্ঘটনা একটি এবং ১৩ জনকে আহত উদ্ধার ও তিন জনকে মৃত উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং পরবর্তী সার্বিক বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘২৪ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত শুরু করে সিত্রাংয়ের অগ্রবর্তী অংশ। আর রাত ১০টা নাগাদ ঝড়টির কেন্দ্র উপকূল পেরিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। পরে সিলেট ও কুমিল্লা হয়ে ত্রিপুরায় প্রবেশ করে। সিত্রাং নিয়ে পূর্বাভাস ছিল অনেক ক্ষতি হবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, এটি ঘূর্ণিঝড়ই ছিল, প্রবল বা সুপার সাইক্লোন হয়নি। বাতাসের গতিবেগ ৮০ কিলোমিটারের উপরে যায়নি। আমাদের যে ধারণা ছিল, তারও আগে এটি বাংলাদেশ অতিক্রম করে। পূর্বাভাস ছিল, এটা বরগুনা ও পটুয়াখালীর উপর দিয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে টার্ন নেয়ার কারণে পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়। ঘূর্ণিঝড় সতর্কতার শুরু থেকেই আমাদের মাঠ প্রশাসন ও ভলান্টিয়ার কাজ করেছে।’

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দেশের ৪১৯টি ইউনিয়নে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ঝড়ে গাছচাপা পড়ে এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ তারা পেয়েছেন। এদের মধ্যে গোপালগঞ্জে ২ জন, কুমিল্লায় ৩ জন, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ১ জন, ভোলায় ১ জন, বরগুনায় ১ জন এবং শরিয়তপুরে ১ জন। সবগুলোরই কারণ ঘরের উপর গাছ পড়া। শুধু ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একজন বাহিরে ছিলেন এবং গাছচাপা পড়েছেন।

ঘূর্ণি ঝড়ের কারণে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও ১ হাজার মৎস্য ঘেরের মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। উপকূলীয় জেলা ছাড়াও কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ এমনকি ঢাকাতেও আঘাত হেনেছে। নিহতদের পরিবারকে দেয়া হচ্ছে ২৫ হাজার করে টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের সুদহীন ঋণ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি কমাতে প্রায় ৭ হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ লাখ মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছিল। আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শেষে মধ্যরাত থেকে মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। সকালের মধ্যে সবাই আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য টিন ও নগদ অর্থ দেওয়া হবে। আজ (বুধবার) থেকে এ সহায়তা দেওয়া শুরু হবে। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র জানতে আরও ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। আসছে ডিসেম্বরে দেশে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আশংকা রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকার তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় রুটে ফেরি চলাচল শুরু

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ১৭ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সকাল থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। অন্যদিকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ২২ ঘণ্টা পর লঞ্চ চালু হয়েছে। তবে ঝড়ে পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দৌলতদিয়ার তিনটি ঘাট এখনো বন্ধ থাকায় যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এর আগে ঝড়ের কারণে গতকাল সোমবার সকাল থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে নৌযান চলাচল ব্যাহত হলে বিকেল ৪টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটে একটি রো রো ফেরি নোঙর করা ছিল। বাকি ফেরিগুলো পাটুরিয়া প্রান্তে নোঙর করা হয়।



বিষয়: #



আর্কাইভ