শনিবার ● ২৯ অক্টোবর ২০২২
প্রচ্ছদ » বিনোদন » গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবে রোববার ‘নারী ও রাক্ষসী’ নাটকের প্রদর্শনী
গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবে রোববার ‘নারী ও রাক্ষসী’ নাটকের প্রদর্শনী
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে জমে উঠেছে গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব। আন্তর্জাতিক এই নাট্যোৎসবের দশম দিনে শিল্পকলার স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে নাটনন্দন নাট্যদলের ১১তম প্রযোজনা ‘নারী ও রাক্ষসী’ নাটকের প্রদর্শনী।
নাটকের বিষয়বস্তু
‘নারী ও রাক্ষসী’ আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীর বাস্তবতা তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই নাটকের অবতারণা। মূলত, নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এই সভ্য সমজের সদস্যদের দ্বারাই। আমরা বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু নারী-অধিকারের ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান সমাজের একেবারে নিচুস্তরে। প্রতিদিনের খবরের কাগজের শিরোনামে নারী ও শিশু ধর্ষনের চিত্রটি ভেসে ওঠে। এই দৃশ্যে যেন আমরা প্রতিদিন অভ্যস্থ হয়ে যাচ্ছি প্রতিদিনের জীবনযাপনের মতো। এর কোন প্রতিবাদ নেই, নেই প্রতিকার, নেই প্রতিরোধ। মেয়ে শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন বাড়ছে মহামারিসংক্রান্ত র মতো। তবুও নীরব দর্শক হিসেবে তাকিয়ে আছি প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন দেখেও যেন কিছু দেখেতে পায় না, কারণ আইনতো অন্ধ। তাই ধর্ষনকারী ও নির্যাতনকারীরা তাদের বিষদাঁত বের করে উপহাসের হাসি হাসছে, জুতা মারছে বর্তমান আধুনিক সভ্যতার মুখে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা আইনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজার মতো। অপরাধের পর অপরাধ বিষাক্ত করে তুলেছে মানুষের জীবনযাপন।
তাই এই নাটকটি সময়োপযোগী, সময় ও সমাজের দর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এই নাটককে। সকলের নীরবতা নির্বাক করে দেয় মানুষের বিবেক সেই সময় নাটকে উঠে আসে - কী করে একটি শিশুকে বিক্রি করে দেয়া পতিতালয়ে, তারপর এক হাত থেকে অন্য হাত, পতিতাপল্লী থেকে শেষ ঠিকানা ফুটপাত। মানসিক বিকারগ্রস্ত পুষ্প অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে। রাতের অন্ধকারে ফুটপাতে জন্য দেয় একটি কন্যাশিশু। একটি কুকুর ছাড়া আর কেউ শুনতে পায়না তার আর্তনাদ নিজের সম্ভানকে আগলে রাখতে চায় সব বিপদ থেকে যেন ধর্ষিত, নির্যাতিত হতে না হয় তার মতো। সে চায় তার সম্ভান যেন তার পরিপূর্ণ অধিকার নিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু এ সমাজের চিত্র ভিন্ন। মানুষরূপী পুরুষগুলো প্রতিমুহুর্তে ছিঁড়ে খেতে চায় তার (মেয়ে) ছোট্ট প্রজাপতিকে। মাখা তুলে দাঁড়াতে দিতে চায় না।
তবুও সংগ্রাম করে সমালের সাথে বাঁচতে চায় প্রজাপতি। নিজের কাছে জানতে চায় যে তার বাবা কে, কী তার পরিচয়। পরিচয়হীনতার গ্লানি তাকে আরো সাহসী করে তোলে, বাঁচতে শেখায় নতুন একজন মানুষ, যার অবয়ব পুরুষের মতো হলেও ভেতরটা সম্পূর্ণ মানুষ। শেষ পর্যন্ত এ সমাজকে বদলে দেওয়া স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যায় পুষ্প ও মেয়ে প্রজাপতি, ডাক দেয় প্রতিবাদের।
নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন আসমা আক্তার লিজা। নাটকে বিভিন্ন দৃশ্যপটে ১২টি চরিত্রে অভিনয় করেছেন আসমা আক্তার লিজা, সুরভী রায় ও এস মুইদ রাজ্জাক। মিউজিক করেছেন মনিকা দেওয়ান, লাবনী আক্তার, মকবুল হোসেন ও সায়েম মোরশেদ। সেট ডিজাইন ও আলোক নির্দেশনা দিয়েছেন ফায়েজ জহির।
‘নারী ও রাক্ষসী’র নাট্যকার ও নির্দেশক আসমা আক্তার লিজা জানান, এই নাটক সমাজের নির্যাতিত নারীদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে নির্মিত। এই নাটকে যে ছয়টি নারী চরিত্র দেখানো হয়েছে তাদের প্রত্যেকের সাথেই আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের জীবন দেখেই আমি এই নাটক নির্মাণে অনুপ্রাণিত হয়েছি। এখানে দেখানো হয়েছে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা একটা মেয়েকে কীভাবে পতিতা বানিয়ে দেয়। কীভাবে একটা মেয়ে নির্যাতিত, ধর্ষিত হয় দিনের পর দিন। মিথ্যে ধর্মের বেড়াজালে কী করে আটকে দেয়া হয় একটা মেয়ের স্বাধীনতা। অথচ এই সমাজ, এই দেশ, এই আইনের কাছে তারা কোন বিচার পায় না। এই বিচারহীন প্রক্রিয়ার ভেতর থেকে নির্যাতিত হতে হতে তারা একসময় প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, বুঝে নেয় জীবনের অধিকার। পৃথিবীর সকল নারী ন্যায্য অধিকার পাক। সুন্দর হোক এই পৃথিবী, পৃথিবীর অধিকার থাক। সুন্দর হোক এই পৃথিবী, এই স্বপ্ন।
নাটনন্দন দলের ‘নারী ও রাক্ষসী’ নাটকটি এর আগে ২০১৮ সালে লন্ডনের সিজন অব বাংলা ড্রামা নাট্যোৎসব, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের এডওয়ার্ড এমন কেনেডি (ইএমকে) সেন্টার, চট্টগ্রামে নাটনন্দন নাট্যোৎসবসহ বেশকিছু স্থানে প্রদর্শিত হয়েছে। এই নাটকের মাধ্যমে আমার প্রত্যাশা- পৃথিবীর সব নির্যাতিত নারীদের পায়ের অদৃশ্য শিকল খুলে যাক, মুক্তি পাক সকল নারী, অন্ধকার মুক্ত হোক আমাদের সমাজ।
গত ২১ অক্টোবর শুরু হওয়া ১১ দিনব্যাপী এই নাট্যোৎসব শেষ হবে সোমবার ৩১ অক্টোবর।