বুধবার ● ২ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » পাঁচ বছরে দেশের প্রায় দেড় লাখ নারী জরায়ু মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত
পাঁচ বছরে দেশের প্রায় দেড় লাখ নারী জরায়ু মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত
বিএসএমএমইউ’র ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি ফল প্রকাশ
দেশে বছরে দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, মারা যায় লক্ষাধিক; যা করোনার চেয়ে ক্যান্সারে ৩ গুণ বেশি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি
দেশে গত ৫ বছরে (২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত) ২৪ লাখ নারীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে; যাদের মধ্যে ভায়া পরীক্ষায় ৫.৭১ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৪ জনের জরায়ু মুখ ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে। আর স্তন ক্যান্সারের সিবিই পরীক্ষায় ১.৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ৩২ হাজার ২ শত ৩৪ জন নারী স্তন ক্যান্সার শনাক্ত হয়। জরায়ু মুখ ক্যান্সার বা ভায়া পজেটিভ নারীদের মধ্যে ৪৯ হাজার ৯৫৩ জনের কলকোস্কপি, ১২ হাজার ৯৪৪ জনের হিস্টোপ্যাথলজি করা হয়েছে এবং ২০ হাজার ৩০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি আওতায় গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইলেকট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক এই প্রকল্পের আওতায় সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত ‘জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্টানিং এবং প্রতিরোধ কর্মসূচি’ পর্যালোচনার নানা তথ্যও এতে প্রকাশ করা হয়।
নারীদের জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সারের হার সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা জানান, জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এর কার্যক্রমের ফলে ২০১২ সালে স্তন ক্যান্সারের হার ২৩.৯ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে অর্থাৎ ৪.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং একই সময়ে জরায়ু মুখ স্তন ক্যান্সারের হার ১৯.৩ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে অর্থা ৭.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০১২ সালে ৬২ হাজার ১৯ জনের স্ক্রিনিং করে ১৪ হাজার ৮৩৬ জনের (২৩.৯ শতাংশ) সিবিই পজেটিভ পাওয়া যায় এবং ১১ হাজার ৯৫৬ জনের (১৯.৩ শতাংশ) ভায়া পজেটিভ পাওয়া যায়। ২০২২ সালে ৬৮ হাজার ৭ শত জনের স্ক্রিনিং করে ১৩ হাজার ২৮ জনের (১৯ শতাংশ) সিবিই পজেটিভ পাওয়া যায় এবং ৮ হাজার ২৬৮ জনের (১২ শতাংশ) ভায়া পজেটিভ পাওয়া যায়। তিনি আরো জানান, এই কর্মসূচির অধীনে স্ক্রিনিং করার জন্য ইতোমধ্যে ৭ লাখ নারীকে প্রি-রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। একই সাথে এই রোগের বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে একটি এইচপিভি-ডিএনএ গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে।
দেশের ক্যান্সার পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে বছরে দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। দেশে করোনার চেয়েও তিনগুণ বেশি মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করছে। ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষের সচেতনার অভাবে তা রোধ করা যাচ্ছে না বলেও মন্তক্য করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ধূমপান না করা, তামাক সেবন না করা, ফ্যাটিফুড কম খাওয়া, ভেজাল খাবার না খাওয়াসহ কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব।
ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে নির্মাণাধীন হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার সেন্টার থাকবে। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য ৫৭০টি সেন্টার করা হয়েছে; যার মাধ্যমে প্রাথমিক স্ক্রিনিং করা হয়। এছাড়া ক্যানসার পজিটিভ রোগীর জন্য ৪৩টি কলকোস্কপি সেন্টার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৫শ’ উপজেলায় ইলেকট্রনিক ডাটা ট্রাকিং সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এসময় ডেঙ্গু প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে দেড়শ’ মানুষ মারা গেছেন এবং ৪০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং মারা গেছে। এ পর্যন্ত ৫০টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চিকিৎসার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্তন ও জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে স্ক্রিনিং কার্যক্রম সফল করতে হবে। ক্যান্সারের আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরা তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে আসেন ফলে তাদেরকে বেশিরভাগ রোগীকেই বাঁচানো সম্ভব হয় না। কিন্তু শুরুতে ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে তাদেরকে বাঁচানো সম্ভব।
আলোচনায় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের কৌশল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম, পপুলেশন কভারেজ বৃদ্ধি এবং স্ক্রিনিংকৃত পজিটিভ মহিলাদের চিকিৎসা, জনবল ও যন্ত্রপাতির সক্ষমতা বৃদ্ধি, রেডিওথেরাপি, অনকোসার্জারি, হসপিটাল প্যাথলজি সেবা শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
এসব ক্যান্সার প্রতিরোধে ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা জানান, জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং ফ্যাসিলিটি এবং ইলেক্রনিক ডাটা ট্র্যাকিং সেবা ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলার ২শ’ হতে ৪৯২টি উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারণ এবং ৩১টি কল্পোস্কপি রেফারাল কেন্দ্র থেকে ৩৭টিতে উন্নীতকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কেন্দ্রের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১০ম তলায় জরায়ু মুখ ক্যান্সার রোগীদের জন্য ৪৫ শয্যা এবং ১১তম তলায় ৪৫ শয্যা বিশিষ্ট ঙহব ঝঃড়ঢ় ইৎবধংঃ ঈষরহরপ স্থাপন ও স্তন ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। সিবিই স্ক্রিনিং পজিটিভ এবং স্তন ক্যান্সার রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ৩৭টি ব্রেস্ট ক্লিনিক স্থাপন করা হবে। জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গবেষণা কর্ম সম্পাদন করা হবে।
অনকোলজি বিল্ডিং (ব্লক-এফ) এ পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজির জন্য নির্মাণাধীন ৮ম ও ৯ম তলার উপরে প্রকল্পের অধীনে ৩৩ হাজার ৫১২ বর্গফুট জায়াগার উপর দুটি তলা (১০ম ও ১১তম) নির্মাণ করা হবে।
বিষয়: #গত ৫ বছরে দেশের প্রায় দেড় লাখ নারী জরায়ু মুখ ক্যান্সারে