শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
বৃহস্পতিবার ● ৩ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » মানব সভ্যতার ইতিহাসে বেদনাবিধুর দিন জেলহত্যা দিবস
প্রচ্ছদ » জাতীয় » মানব সভ্যতার ইতিহাসে বেদনাবিধুর দিন জেলহত্যা দিবস
৪৩০ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ৩ নভেম্বর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মানব সভ্যতার ইতিহাসে বেদনাবিধুর দিন জেলহত্যা দিবস

---

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

মানব সভ্যতার ইতিহাসে বেদনাবিধুর দিন জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর শহীদ জাতীয় চার মহান নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রীসভার সদস্য ক্যাপ্টেন (অবঃ) এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন এই জাতীয় চার নেতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির হিংসা একটুও কমেনি। তাদের হিংসার নির্মমতার আরেক বহিঃপ্রকাশ হলো কারাগারে জাতীয় চারনেতাকে হত্যা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নির্মমতার ঘটনা বিরল।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের প্রথম সরকার, মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাকশালের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যও ছিলেন। আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। মুহাম্মদ মনসুর আলী ছিলেন মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী। নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সমধিক পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অপর  ঘনিষ্ঠ সহযোগী এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী এই চার জাতীয় নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরপরেই জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্নেল (বহিস্কৃত) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (বহিস্কৃত) খন্দকার আব্দুর রশীদ জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার এ পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য তারা আগে ভাগে একটি ঘাতক দলও গঠন করে। এ দলের প্রধান ছিল রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন। ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর পরেই রিসালদার মোসলেম উদ্দিন এবং তার সহযোগীরা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। এখানে আরো একটি কথা উল্লেখ করতে হয়, ইতিহাসের এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডে তখনকার উপ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে পুরোপুরি জড়িত ছিলেন। খন্দকার মোশতাক আহমেদকে শিখন্ডী বানিয়ে পর্দার অন্তরাল থেকে জিয়াউর রহমানই এ ষড়যন্ত্রে সব কলকাঠি নেড়েছেন, তা এখন সর্বসত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ  সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত জেলহত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯৯৮ সালে ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৪ সালে জেলহত্যা মামলার রায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। ২০০৪ সালের দেয়া রায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন- রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা। যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্তরা হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, কিসমত হোসেন, নাজমুল হোসেন আনসার, সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন। এই মামলার চূড়ান্ত রায় হয় ২০১৩ সালে। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে এখনো অনেকে পালাতক রয়েছে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলঙ্কময় জেলহত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির ৯ বছর পরও পলাতক সকল আসামির সাজা কার্যকর হয়নি। দেশবাসীর দাবি জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত সকল দুস্কৃতিকারীর সাজা অবশ্যই কার্যকর করতে হবে।

পরিশেষে বলবো মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরাই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। সাথে সাথে একথাও আমাদের স্মরণে রাখতে হবে যে, ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো তৎপর। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তিকে সতর্ক থেকে অসাম্প্রদায়িক, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করতে পারি সেটাই হবে বঙ্গবন্ধুসহ জেলহত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকল খুনিদের বিরুদ্ধে এবং ঘৃণ্য এ হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সকল পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধে সমুচিত জবাব দেয়া।

লেখক: কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও চেয়ারম্যান, বক্ষব্যধি বিভাগ। 



বিষয়: #



আর্কাইভ