শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
শুক্রবার ● ৪ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » জেল হত্যাকাণ্ডের হোতাদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি
প্রচ্ছদ » জাতীয় » জেল হত্যাকাণ্ডের হোতাদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি
৩৮৬ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৪ নভেম্বর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

জেল হত্যাকাণ্ডের হোতাদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন

জেলহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা
# আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক
# জেলহত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার হত্যার  ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোডে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সভার আয়োজন করা হয়।
বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবিচল আস্থা ছিল জাতীয় চার নেতার। তারা আপস করেননি ঘাতকদের সঙ্গে বরং জীবন দিয়েছেন। তারা সবসময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের হোতাদের অপকর্ম জাতির সামনে তুলে ধরতে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা দরকার।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পঁচাত্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা এদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায়। কারণ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ৩রা নভেম্বরে জেলখানায় তাদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ দিন সেই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হলেও তা এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। তাই জেলহত্যা মামলার ঘোষিত সেই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, জাতীয় চার নেতাকে কীভাবে হত্যা করা হবে, কারা এতে অংশ নেবে তার একটি নীলনকশা তৈরি করেছিল ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতে ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন জাতীয় চার নেতা। দেশের জন্য অবদান রেখেছেন। আমরা তাদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নেব। কারণ তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে যাননি। এ কারণে এই হত্যাকাণ্ড। কারণ ৭১ এর পরাজিত শক্তি বুঝতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধুর সহযোগীরা বেঁচে থাকলে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না।
তিনি আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। বিদেশে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মাধ্যমে তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছিল। তবে সেই কমিশনকে বাধা দিয়েছিল তখনকার স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান। তদন্ত কমিটির সদস্যদের দেশে আসতে দেয়নি। ভিসা দেয়নি।
এ এইচ এম কামারুজ্জামানের জীবনী তুলে ধরেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আতিকুল হক আতিক। তিনি বলেন, এ এইচ এম কামারুজ্জামান মানুষের সেবা করেছেন নিরলসভাবে। সবাইকে আপন করে নিতেন। সাক্ষাত প্রার্থীদের নিজের বাড়িতে রেখে আপ্যায়ন করাতেন। সকলের ভালোমন্দের বিষয়ে খোঁজখবর নিতেন। আজীবন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ট ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো, আত্মিক সম্পর্ক।  বঙ্গবন্ধু যেমন মানুষকে ভালোবাসতেন, তিনিও একই গুণে গুণান্বিত। মানুষকে সহযোগিতা করতে পারলে খুশি হতেন, তৃপ্তি পেতেন।

সভাপতির বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরও ঘাতকরা নিজেদের নিরাপদ মনে করেনি। তারা ভেবেছিল জাতীয় চার নেতা পরবর্তীতে বিপ্লব করতে পারে। তাদের নীলনকশার উদ্দেশ্য নস্যাৎ করে দিতে পারে। এই ভয় থেকে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। খন্দকার মুশতাক ও জিয়া স্বাধীনতার পক্ষের ছিল না। তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অভিনয় করেছিল।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সরদার মাহামুদ হাসান রুবেল। তিনি বলেন, জেলখানা মাতৃগর্ভের মতো। সেই নিরাপদ জায়গায় বীভৎসভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। মৃত্যু নিশ্চিতের পর উল্লাস করে কারাগার থেকে বের হয়ে যায় ঘাতকরা। জাতীয় চার নেতারা জানতেন তাদের হত্যা করা হতে পারে। কিন্তু তারা পালিয়ে যাননি।

সভায় বক্তব্য রাখছেন ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সরদার মাহামুদ হাসান রুবেল

ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি প্রফেসর ড. সামছুদ্দিন ইলিয়াস বলেন, খন্দকার মুশতাকের নির্দেশে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় চার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নানা পরামর্শ নিতেন। ৬ দফার জন্য পাকিস্তানে যখন বঙ্গবন্ধু যান তখন তার সঙ্গে ছিলেন তাজউদ্দিন। ৬ দফা নিয়ে প্রচারে জাতীয় চার নেতা সবসময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যেমন গ্রেপ্তার নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তারাও হয়েছিলেন। আবার কারাগারে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তারা দায়িত্ব পালন করেছেন দলের।
সহসভাপতি সহসভাপতি এম মনসুর আলী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেও ঘাতক চক্রের পরিকল্পনা শেষ হয়নি। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরীক্ষিত সৈনিক ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর চার নেতাকে হত্যার নীলনকশা করে।
সহসভাপতি সঞ্জিব কুমার রায় বলেন, জাতীয় চার নেতা একটা নেতৃত্ব ও আস্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। সেটি হলো বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবিচল আস্থা। এই নেতৃত্বই  হলো তাদের চূড়ান্ত অর্জন। তারা আপস করেননি ঘাতকদের সঙ্গে বরং জীবন দিয়েছেন।
সহসভাপতি ড. মোল্লা মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা ছিলেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জাতীয় চার নেতা চাইলে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারতেন। বিদেশ চলে যেতে পারতেন। কিন্তু সেটা হতো বেঈমানি। আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি বেঈমানি তারা করেননি।
সহসভাপতি মো. আওরঙ্গজেব বলেন, ১৫ আগস্টে ক্ষমতা দখলকারীরা বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত এই চার সহযোগীকে তাদের সরকারে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু তারা ঘৃণাভরে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ কারণে তাদের গ্রেপ্তার করে জেলখানায় নিয়ে হত্যা করা হয়। ঘাতকদের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেন বাস্তবায়ন না হয়।
সহসভাপতি মাহতাব বলেন, জাতীয় চার নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহযোগী। স্বাধীনতার পর তারা বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগী ছিলেন।
ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল বিশ্বাস বলেন, কারাগারের সামনের গেটে লেখা থাকে ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’। সেই নিরাপদ জায়গায় একাত্তরের পরাজিত শক্তি হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তারা এখনও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সহসভাপতি বিনয় ভূষন তালুকদার, সালাউদ্দিন আল আজাদ, কে এম সিদ্দিকুজ্জামান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক  এস. এম. ওয়াহিদুজ্জামান (মিন্টু), নির্মল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, কৃষিবিদ নাসির উদ্দিন আহম্মেদ, দপ্তর সম্পাদক এ কে এম ওবায়দুর রহমান, যুব ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মো. হাসানুজ্জামান খান, নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক শাহনাজ পারভীন এলিস, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ নূর ইসলাম, সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী এনামুল হক, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আশরাফুল আলম,  মো. ওহিদুর রহমান, পারভিন আক্তার নিলা, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহবুব পাটোয়ারি, ধানমন্ডি ধানা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শওকত আকবর, ধানমন্ডি ধানা বঙ্গবন্ধু পরিষদের দপ্তর সম্পাদক সালেহ, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আপেল প্রমুখ।
আলোচনার শুরুতে জাতীয় চার নেতার স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শেষে জাতীয় চার নেতার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।



বিষয়: #



আর্কাইভ