শুক্রবার ● ১৮ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » জামায়াত সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন না দেয়ার দাবি
জামায়াত সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন না দেয়ার দাবি
ইসিতে প্রজন্ম ’৭১ এর স্মারকলিপি
বিশেষ প্রতিনিধি
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ’৭১। এই দাবি তুলে ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
সংগঠনটির সভাপতি আসিফ মুনীর ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুদ্দীন আব্বাস স্বাক্ষরিত ওই স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লাখ শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা আপনাকে এই স্মারকলিপি দিতে এসেছি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক কিছু সঙ্কট আমাদের নজরে এসেছে, আর তাই আমরা আজ নির্বাচন কমিশনে এসেছি।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক কিছু সংকট তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে লক্ষ্য করছি, আসন্ন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধনের আবেদন করেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)। এরই মধ্যে একাধিক জাতীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে, এই দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর যোগসূত্র আছে। নিবন্ধন হারিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য জামায়াতে ইসলামির সংশ্লিষ্ট একটি অংশ শুধু ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ নয়, জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা আরেকটি অংশ ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ নামেও নিবন্ধনের আবেদন করেছে। প্রকাশ্য রাজনীতিতে নামার দূরভিসন্ধি নিয়ে জামায়াত ভিন্ন নামে নিবন্ধন করার এই উদ্যোগ নিয়েছে এবং এই বিষয়ে দায়িত্বশীল বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
প্রজন্ম ’৭১ নেতারা বলেন, এসব ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং শংকা প্রকাশ করছি। কারণ আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে বিডিপি। সম্প্রতি এমন অভিযোগের কথা বলা হলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, শর্ত পূরণ করে ভিন্ন নামে জামায়াত নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতেই পারে। তিনি সংবাদ মাধ্যমে আরো বলেছেন, জামায়াতের কেউ যদি যুদ্ধাপরাধী না হয় এবং তাদের গঠনতন্ত্র যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় তাহলে শর্ত পূরণ করে ভিন্ন নামে তাদের নিবন্ধন পেতে কোন বাধা নেই। অথচ মাত্র দু’মাস আগে গত ২৯ আগস্ট সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলমগীর বলেছিলেন- যুদ্ধাপরাধীর দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন আদালতের আদেশে বাতিল হয়েছে তাই দলের ব্যক্তিরা ভিন্ন নামে আবেদন করলেও নিবন্ধন পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে আদালত কোন আদেশ দিলে ভিন্ন কথা। এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনারের দেয়া এমন বিভিন্ন বক্তব্যে আমরা চিন্তিত ও শঙ্কিত।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি প্রায় একশ’ নতুন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তার মধ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে সদ্য প্রকাশিত ওই রাজনৈতিক দলের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর যোগসূত্র রয়েছে।
আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে যে মহাত্মারা ১৯৭১ সালে তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম সম্পদ জীবন সমর্পণ করেছিলেন- আমরা তাদেরই সন্তান। আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি শহীদের রক্তে ভেজা এই বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে এক বিশাল বধ্যভূমি। তাদের শোণিতধারায় এদেশের মাটি পুত-পবিত্র হয়েছে। অথচ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এই পবিত্র মাটিতেই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় থেকে আমরা দেখেছি আমাদের আপন স্বজনের হন্তারকদের উত্থানের ভয়ানক অধ্যায়। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের সাথে জড়িতরা দেশের মন্ত্রী হয়েছে, সংসদ সদস্য হয়েছে, রাষ্ট্রের অনেক দায়িত্বশীল পদ কলঙ্কিত করেছে।
স্মারকলিপিতে প্রজন্ম ৭১ এর কার্যক্রম বিস্তারিত তুলে ধরে উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক গঠনতন্ত্রের কারণে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্ট। নিবন্ধন হারিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্ট একটি অংশ শুধু বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি নয়, জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা আরেকটি অংশ ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ নামে অপর একটি দল গঠন করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন রেখেছে নির্বাচন কমিশনে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যেভাবেই হোক প্রকাশ্য রাজনীতিতে নামার দুরভিসন্ধি নিয়ে জামায়াত ভিন্ন নামে নিবন্ধন করার উদ্যোগ নিয়েছে- এমন মন্তব্য করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করায় বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে জামায়াতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পরে জামায়াতের নেতা মাওলানা আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ নামে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট গঠন করে এবং ছয়টি আসন জয়লাভ করে। পরবর্তীতে দেশের পরিস্থিতি আরো তাদের অনুকূলে গেলে একাত্তরের চিহ্নিত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নেপথ্যে রেখে আব্বাস আলী খানকে ভারপ্রাপ্ত আমির করে নিজ নামে (জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) নির্বাচনে ফিরে আসে জামায়াত। তাই এবারেও আগত নির্বাচনে অংশ নিতে জামায়াতের নেতৃবর্গ কৌশলের আশ্রয় নিয়ে আবারো রাজনীতিতে ফিরে আসার পাঁয়তারা করছে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছি।
মনে রাখা দরকার যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইসলাম ধর্মের বাতাবরণে বাংলাদেশ বিরোধী আদর্শ বাস্তবায়নে এই দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা বদ্ধপরিকর ছিল, সেই একইভাবে এই শক্তি বাংলাদেশে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে তাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে প্রজন্ম ‘৭১-এর স্মারকলিপি দেশবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চরম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির নখর দিয়ে বাংলাদেশকে রক্তাক্ত করে, মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে অপমানিত করে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ’৭১ মনে করে- নির্বাচন কমিশনকে দেশ মাতৃকার প্রশ্নে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনের এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের রাজনৈতিক দর্শন পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র আরো বিস্তৃত হবে, নাকি শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমাজ গড়ে তোলার প্রশ্নটি গুরুত্ব পাবে, অব্যাহত থাকবে।
আমরা মনে করি, গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় দেশবিরোধী শক্তিকে বৈধতা দেয়ার যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে নানা দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সংগঠন এবং ব্যক্তিরা- তার অবসান হওয়া জরুরি। তাই বিডিপিকে ঘিরে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার, জামায়াত নেতাদের নেয়া সিদ্ধান্তের ফসল বিডিপি ইত্যাদি সম্পর্কে প্রচারিত তথ্য গুরুত্বের সাথে নিয়ে যথাযথ তদন্ত করার জন্য আমরা আপনাকে সবিনয় অনুরোধ করছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই সকল দেশবিরোধী শক্তি শাখায়-প্রশাখায় যেন আর বাড়তে না পারে সে ব্যাপারে আপনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিষয়: #জামায়াত সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন না দেয়ার দাব