শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
শুক্রবার ● ২৫ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » বতর্মান নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা চায় পরিবর্তন
প্রচ্ছদ » জাতীয় » বতর্মান নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা চায় পরিবর্তন
৩১৫ বার পঠিত
শুক্রবার ● ২৫ নভেম্বর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বতর্মান নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা চায় পরিবর্তন

 ---

মহিলা আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি 

শাহনাজ পারভীন এলিস

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের সবচেয়ে বৃহৎ সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি এই মধ্যে পার করেছে ৫৩ বছর। দীর্ঘ এই পথচলায় নানা অর্জন যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। আগামীকাল ২৬ নভেম্বর ৬ষ্ঠ ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠন। পাঁচ বছর পর এবারের সম্মেলন আয়োজনে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্মেলনকে ঘিরে এরই মধ্যে সংগঠনটির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মূল দায়িত্বে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে- সংগঠনের সব জেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থতা, বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা এবং কমিটি গঠনে অর্থনৈতিক বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোস প্রকাশ করেছেন অনেক নেতাকর্মী। চলমান পরিস্থিতিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতাকর্মীরা এবারের সম্মেলনে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরিবর্তনের দাবিও তুলেছেন। তারা চান আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে এই সংগঠন আরও বেগবান ও শক্তিশালী করা হোক।

২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান মাহমুদা বেগম কৃক। এর পাঁচ মাস পর ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২১ জন সহ-সভাপতি, ৮ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদক, ২৩ জন সম্পাদক এবং ৮৯ জন সদস্য রয়েছেন। তিন বছর মেয়াদি ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৪ মার্চ। এরই মধ্যে সংগঠনটির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় সদস্য মারা গেছেন। এছাড়া অনেকে বার্ধক্যজনিত কারণে সংগঠনের কার্যক্রম থেকে দূরে রয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব পাওয়ার পর গেলো পাঁচ বছরে দেশের ৭৮টি কমিটির মধ্যে বেশিরভাগ জেলায় সংগঠনের জেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তবে গত জুলাই মাসে তড়িঘড়ি করে ঘোষণা করা কিছু সংখ্যক কমিটি নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এসব কমিটিতে অর্থ বাণিজ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের সংগঠনে জায়গা করে দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। এই দুই পদে নতুন নেতৃত্বের দাবিও করছেন তারা।

নেতৃত্বে আসতে আগ্রহীরা পদ না পেয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে কমিটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন- এমন মন্তব্য করেছেন মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাফিয়া খাতুন। সংবাদ সারাবেলাকে তিনি জানান, ‘নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকায় আগ্রহী অনেকে হয়তো কমিটিতে রাখা সম্ভব হয়নি। আর মহামারি করোনা পরিস্থিতিসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সংগঠনের সব জেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি- এটা ব্যর্থতা নয়, আমরা পরিস্থিতির শিকার। সংগঠনকে ভালোবেসে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। এবারও সভাপতি পদে প্রার্থিতা চেয়েছি, বিশ^াস করি সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। তারপরও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামীতে আমাকে যেখানে রাখবেন সেখান থেকেই দলের জন্য কাজ করতে চাই।’

বর্তমান কমিটির কার্যক্রম নিয়ে বিতর্কের জবাবে সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, ‘তথ্য-প্রমাণ ছাড়া ভিত্তিহীন গদবাধা অভিযোগ যারা তোলেন তারা আসলে ভীতু। দলের ও সংগঠনের জন্য তারা ক্ষতিকর। তাদের বলতে চাই, সংগঠনের স্বার্থবিরোধী এ ধরনের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। আসুন সবাই মিলে আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৩ বছর সংগঠনের সাথে আছি। গত পাঁচ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে সংগঠনের তৃণমূলকে সংগঠিত করতে কাজ করছি। এবার আমি সভাপতি পদে প্রার্থিতার আবেদন জমা দিয়েছি। দায়িত্ব পেলে আগামীতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার প্রত্যয় জানাচ্ছি।’

সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন রোজী বলেন, ‘মহিলা আওয়ামী লীগ একটি সুসংগঠিত দল। দীর্ঘদিন ধরে নারীদের সংগঠিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এবার আমি সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থিতা জমা দিয়েছি। অভিযোগ আছে জেলাগুলোতে অনেক ত্যাগীরা পদ পান না। আমি দায়িত্ব পেলে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে মহিলা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করব। পদ বা কমিটি বাণিজ্য যাতে না হয়- সে ব্যাপারেও ভূমিকা রাখার চেষ্টা করব।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহিলা আওয়ামী লীগে এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী প্রায় দুই ডজন। তার মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন- বর্তমান সভাপতি সাফিয়া খাতুন, মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিরিন নাঈম পুনম, নাসিমা ফেরদৌসী, আসমা জেরিন ঝুমু (সাবেক সাংসদ), বনশ্রী বিশ্বাস স্মৃতি কনা, আলেয়া পারভীন রঞ্জু, নাসিমা আক্তার রুবেল, পিনু খান (সাবেক সাংসদ), ইয়াসমিন হোসেন, আজিজা খানম কেয়া, ফারহানা ডলি এবং বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক এবার সভাপতি পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন।

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরিন রুকসানা, শিখা চক্রবর্তী, নাজমা হোসেন, জান্নাত আরা হেনরী, কামরুন্নেসা মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক আনারকলি পুতুল, সুলতানা রাজিয়া পান্না, ঝর্ণা বাড়ৈ এবং বর্তমান দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন রোজী।

সম্মেলনকে সামনে রেখে পদ প্রত্যাশীরা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র এক বছর। তাই এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে যে কমিটি গঠন হবে সেই কমিটির নেতৃত্বেই মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে থাকবেন। তাই আওয়ামী লীগকে টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে তাই সৎ, যোগ্য, পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতাদের কমিটিতে মূল্যায়নের দাবি জানান তারা।

মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মধ্যে বেশ কয়েকজন সদস্য মারা গেছেন। এছাড়া কেউ সংসদ সদস্য, আবার কেউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়ায় মহিলা আওয়ামী লীগের সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। বর্তমান কমিটির মধ্যে অনেকেই বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ থাকায় সংগঠন থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে জানা গেছে। সংগঠনটির গঠনতন্ত্রের ২ ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের এদেশের যে কোন নারী এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন। সেই সূত্রে মহিলা আওয়ামী লীগে যুব মহিলা লীগ ও সাবেক ছাত্রলীগের নেত্রীরাই বেশি এই সংগঠনের রাজনীতিতে জড়িত। তাই এবারের সম্মেলনেও এই দুই সংগঠনের নেত্রীরা মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতেও প্রাধান্য পাবেন তারা।

১৯৬৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মহিলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং ১৯৯৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ক্ষমতার বাইরে থাকাসহ নানা প্রতিকূলতায়, দীর্ঘ ৫৩ বছরে এর আগে মাত্র পাঁচটি সম্মেলন করতে পেরেছে মহিলা আওয়ামী লীগ।



বিষয়: #



আর্কাইভ