শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
সোমবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » শিক্ষাঙ্গন » অদম্য প্রচেষ্টায় এসএসসিতে উত্তীর্ণ ৫২ বছরের আব্দুল মতিন
প্রচ্ছদ » শিক্ষাঙ্গন » অদম্য প্রচেষ্টায় এসএসসিতে উত্তীর্ণ ৫২ বছরের আব্দুল মতিন
২৯৬ বার পঠিত
সোমবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

অদম্য প্রচেষ্টায় এসএসসিতে উত্তীর্ণ ৫২ বছরের আব্দুল মতিন

৫২ বছর বয়সে এবার এসএসসি পাস করা সিরাজগঞ্জের আব্দুল মতিন।

বিশেষ প্রতিনিধি

৫২ বছর বয়সে এবার এসএসসি পাস করেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার খড়খড়িয়া গ্রামের আব্দুল মতিন। স্থানীয়ভাবে মহাসিন নামেই তিনি পরিচিত। কারগিরী শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসিতে তিনি পেয়েছেন জিপিএ-৪.৬১। পরীক্ষার নম্বরপত্র অনুযায়ী অল্পের জন্যই তার এ+ হাতছাড়া হয়েছে।

তাড়াশের কুসুম্বী গ্রামে নাজাততুল্লা আয়েশা মেমোরিয়াল টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষার্থী আব্দুল মতিন। তার এমন অর্জনে উচ্ছ্বসিত খড়খড়িয়া গ্রামসহ তাড়াশ উপজেলার মানুষ। তাকে নিয়ে অত্র অঞ্চলে সর্বত্র চলছে আলোচনা। কেননা তিনি যেটা সম্ভব করেছেন তা সবার কাছেই অনুপ্রেরণা ও দৃষ্টান্ত। শিক্ষা যে জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া ও বয়সের ফ্রেমে সীমাবদ্ধ নয়- তা তিনি প্রমাণ করেছেন নিজের অধ্যবসায় দিয়ে।

টেলিফোনে আলাপকালে আব্দুল মতিন জানান, ‘সময়মতো আমি স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি সত্য। তবে শিক্ষার আলোর কাছে যে সকল আলোই ম্লান তা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আর এই বিশ্বাস থেকেই বয়সের চিন্তা বাদ দিয়ে, সংসারের চাপ সামলে মন থেকে পড়া চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আগামীতেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই।’

সদ্য এসএসসি পাস করা আব্দুল মতিনের মেয়ে অলিভা আক্তার মায়া রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের কলা অনুষদ থেকে ২০২০ সালে ডিনস এওয়ার্ড পেয়েছেন। প্রথম স্থান অর্জন করেছেন এমএ শ্রেণিতে। বাবার এসএসসি পাসের খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা ফল নিয়ে পাস করা এবং প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রত্যাশী মেয়ের উচ্ছ্বাস আরও বেশি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী স্নাতক জানান, ‘আমি নিজে ভালো ফল অর্জন করেও এতোটা খুশি হইনি, যতটা আনন্দিত হয়েছি আমার বাবার এই পাসের খবর জেনে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিনস এওয়ার্ড অর্জনকারী মেয়ের সাথে আব্দুল মতিন।

প্রত্যন্ত গ্রামে বাড়ির কৃষিকাজ আর সংগ্রামী জীবন সামলে পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি আব্দুল মতিনের। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তার ছিল অদম্য ভালোবাসা। মেয়ের ডিনস এওয়ার্ড গ্রহণ করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মেয়ের অর্জনে আর শিক্ষার পরিবেশে। তাই পণ করেন- সকল বাধা ঠেলে একটু একটু করে জ্ঞানের আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার। বয়স তার কাছে বাধা হয়নি। বরং তার ইচ্ছাশক্তি সকল বাধা গুড়িয়ে দিয়ে তাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

আব্দুল মতিনের এই অর্জনে তার স্নাতকোত্তর ভাতিজা সুরুজ্জামান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নিজে শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন স্তরে নিজে পাস করেও যতোটা খুশি হইনি, যেমন খুশি আজ হয়েছি চাচার এসএসসি পাসের খবরে।’ এদিকে খড়খড়িয়া গ্রামের ফেসবুক পেজ ‘স্বপ্ন খড়খড়িয়াতে’ মতিনের এসএসসি পাশের খবর শেয়ার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে তার গ্রামের সচেতন সমাজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিঠুন মোস্তাফিজ জানান, ‘আব্দুল মতিন আমার ফুফাত ভাই এবং বোন জামাই। আমি দেখেছি কত কষ্ট করে, জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে তিনি এগোতে চেষ্টা করছেন। আজ তিনি কেবল এসএসসি পাস করেননি; বরং আমি তার এই অর্জনকে দেখছি ইচ্ছাশক্তির বিজয় হিসেবে।  কেননা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বয়স কোন বাধা নয়। আমি আব্দুল মতিনের এই অর্জনে সত্যিই খুব খুশি হয়েছি। তার বয়সী মানুষগুলোর জন্য আব্দুল মতিন এখন মডেল হয়ে থাকবেন। তার বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা মেয়েও দারুণ উচ্ছ্বসিত। যখন কোন সন্তান পিতার জন্য আনন্দিত হয়, উচ্ছ্বসিত হয় তখন সেটা সেই পিতার জন্য দারুণ গর্বের অর্জন।’

মিঠুন মোস্তাফিজ তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে, ‘পড়ালেখার কোনও বয়স নেই। এবার এইচএসসিও সহজেই পাস করার কথা। সেটা হয়ে গেলে স্নাতক হওয়াও কঠিন কিছু হবে না। নিশ্চয়ই অদম্য পড়ুয়া হিসেবে আগাম শুভকামনা থাকবে। এই অদম্য পড়ুয়ারাই হয়ে থাক এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা।’



বিষয়: #



আর্কাইভ