মঙ্গলবার ● ২৯ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » আন্তর্জাতিক » সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে ব্রাজিল
সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে ব্রাজিল
স্পোর্টস ডেস্ক
গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যাসিমিরোরের একমাত্র গোলে জয় তুলে নিয়েছে ব্রাজিল। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে গোল করে দলকে জয় এনে দেন ক্যাসিমিরো। এই জয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করলো ব্রাজিল।
সোমবার রাত ১০টায় শুরু হওয়া ম্যাচে মাঠে নামে নেইমারবিহীন ব্রাজিল। শুরু থেকেই আক্রমণ চালিয়ে গেলেও প্রথমার্ধে গোলের দেখা পাননি ভিনিসিয়ুস-রিচার্লিসনরা। খেলার শুরু থেকেই রক্ষণ সামলানোর দিকে মনোযোগ বেশি সুইজারল্যান্ডের। ফলে আক্রমণ করলেও তা কাজে লাগাতে পারছিল না ব্রাজিল।
ম্যাচের ১৮ মিনিটের মাথায় সুযোগ নষ্টে করেন রিচার্লিচন। পাকুয়েতার ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। নইলে এ বারের বিশ্বকাপে নিজের ৩ নম্বর গোল করতে পারতেন তিনি।
২৭ মিনিটে বক্সের ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান রাফিনহা। বক্সে অরক্ষিত ছিলেন ভিনিসিয়ুস। সামনে ছিলেন শুধু গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। পায়ে বলে সংযোগ ভালো হয়নি ভিনিসিয়ুসের। বল বাঁচিয়ে দেন সোমার।
খেলা চলছিল মূলত সুইজারল্যান্ডের ডিবক্সের আশেপাশে। বারবার আক্রমণেেউঠেও সুইস রক্ষণ ভাঙতে পারেনি ব্রাজিল। ৩০ মিনিটে গোলমুখে শট নিয়েছিলেন রাফিনহা। বক্সের বাইরে থেকে সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে শট মারেন তিনি।
৩৫ মিনিটের দিকে খেলায় ফেরার চেষ্টা করে সুইজারল্যান্ড। ডান প্রান্ত ধরে আক্রমণ তুলে আনার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু ব্রাজিলের অর্ধে সুইস ফুটবলারের সংখ্যা কম থাকায় আক্রমণ তেমন জোরালো হয়নি।
প্রথমার্ধের শেষের দিকে কর্নার থেকে সুযোগ পায় ব্রাজিল। রাফিনহার ক্রসে গোলের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গোল আসেনি। প্রথমার্ধে গোলশূন্য অবস্থায় সাজঘরে যায় দুদল।
বিরতিতে দলে পরিবর্তন আনেন তিতে। পাকুয়েতাকে তুলে নিয়ে রদ্রিগোকে নামানো হয়। আক্রমণে আরও গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে ব্রাজিল। কিন্তু তবুও জমাট সুইস রক্ষণ।
৫৬ মিনিটে আবারও আবার সুযোগ নষ্ট করেন রিচার্লিসন। বাঁ প্রান্ত ধরে বক্সে ঢোকেন ভিনিসিয়ুস। ডান পায়ের আউট স্টেপে বল রাখেন তিনি। রিচার্লিসন পা ঠেকাতে পারলেই গোল হতো। কিন্তু পারেননি তিনি।
খেলার ৬৪ মিনিটে সুইজারল্যান্ডের জালে বল জড়িয়ে দেন ভিনিসিয়ুস। প্রথমে রেফারি গোল দিলেও পরে ভার প্রযুক্তির সাহায্যে বাতিল হয় সেই গোল। আক্রমণ তৈরি করার সময় অফসাইডে ছিলেন রিচার্লিসন। সেই কারণে গোল বাতিল হয়। নিজে অফসাইডে না থাকলেও সতীর্থের ভুলের খেসারত দিতে হয় ভিনিসিয়ুসকে।
অবশেষে ম্যাচের ৮৩ মিনিরটে গোল করলো ব্রাজিল। বাম প্রান্ত ধরে ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগো যুগলবন্দিতে বক্সের মধ্যে বল পান ক্যাসেমিরো। ডান পায়ে জোরালো শট মারেন তিনি। সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্ডারের শরীরে লেগে সেই বল জালে জড়িয়ে যায়। কিছু করার ছিল না গোলরক্ষক সোমারের।
বাকি সময় আরও কয়েকটি আক্রমণ চালায় ব্রাজিল। গোলের দেখা না পাওয়ায় এক গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সেলেসাওরা।
নেইমারকে ছাড়াই ব্রাজিলের জয়
মিডিয়া বক্স লাগায়ো গ্যালারিতে হলুদ জার্সিধারিদের আধিপত্য। দুই শিশু সন্তান নিয়ে ম্যাচের অধিকাংশ সময়জুড়ে অন্যদের সঙ্গে হই হুল্লোড় করে গেলো একটি ব্রাজিলিয়ান পরিবার। কিন্তু ম্যাচের শেষ দিকে এসে কী মনে করে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো তারা। এর অন্যতম কারণ হতে পারে হয়তো দল গোল পাচ্ছিলো না তাই। তবে তখনও যে সব আকর্ষণ শেষ হয়ে যায়নি। নেইমার নেই। রিচার্লিসন-ভিনিসিয়ুসরা কিছুতেই সুইজারল্যান্ডের গোলখরা কাটাতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ত্রাতা হয়ে দলকে বাঁচালেন মিডফিল্ডার ক্যাসিমিরো। তারই একমাত্র লক্ষ্যভেদে ব্রাজিল টানা দ্বিতীয় জয়ে বিশ্বকাপে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে।
কাতারে ৯৭৪টি কন্টেইনার দিয়ে তৈরি স্টেডিয়াম দেন হলুদ জার্সিতে আবৃত। তবে কিছুটা সংশয় তো ছিলই। চোটের কারণে নেইমার নেই। নেই দেনিলোও। তাদের জায়গায় একাদশে কে নামেন তা ছিল দেখার। অনেক আলোচনা থাকলেও রদ্রিগোকে একাদশে রাখেননি তিতে। আর মিলিতাও নিয়েছেন দেনিলোর জায়গা। আগের মতো ৪-৩-৩ ছকে খেলে ব্রাজিল পারছিল না খুব বেশি নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে। নেইমারের অভাব অনুভূত হচ্ছিল বেশ।
নেইমার থাকলে অন্তত প্রতিপক্ষের দৃষ্টি রাখতেন নিজের দিকে একটু বেশি। গোল করার পাশাপাশি করানোর দিকে মনোযোগ থাকতো। তার অনুপস্থিতিতে বিশেষ করে ফ্রেড ও রিচার্লিসনের রসায়নটা ঠিকমতো জমেনি। তাই দুয়েকটি সুযোগ থেকে ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া টটেনহ্যামের স্ট্রাইকারকে শুধুই দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে।
তাই তো বিরতির পর রিচার্লিসন ও রাফিনাকে বদলে দেন কোচ তিতে। জেসুস ও অ্যান্তনি এনে আক্রমণে শক্তি বৃদ্ধি করেন। আক্রমণ থেকে ক্যাসিমিরো দারুণ ভলি শটে লক্ষ্যভেদ করে দলের মান বাঁচান। সুইসরা এই যাত্রায় আর রক্ষণ অটুট রাখতে পারেনি।
এছাড়া ভিনিসিয়ুস দ্বিতীয়ার্ধে সুযোগ পেয়ে নিজের মতো করে চেষ্টা করে গেছেন। একটি শট তো জালে জড়ালেও ভিএআরের কারণে গোল হয়নি। অন্যটি গোলকিপার গোল হতে দেননি। এদিকে গ্রেট রোনালদো স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখছেন। টিভি তে কয়েক বার দেখা গেল তাকে। তারও হয়তো টেনশন কাজ করছিল। তবে ৮৩ মিনিটে ক্যাসিমিরোর গোলই ছিল বড় ভরসা। টানা দুই ম্যাচ জিতে নক আউট পর্বে জায়গা করে নেওয়ায় রোনালদোসহ সমর্থকরা নিশ্চয় বেজায় খুশি।
স্টেডিয়াম ছাড়তে ছাড়তে দুই নারী সমর্থক তো দলের প্রশংসা করে গেছেন। তাদের কথা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, নেইমার ছাড়াও দল জিততে পেরেছে এতেই খুশি। এছাড়া সুইসদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে প্রথম জয় তাই আনন্দটা কম নয়।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটিও জেতার লক্ষ্য সামনে রেখে ব্রাজিলের জন্য শুভকামনা জানাতেও ভুল হলো না তাদের। সেলেসাওদের সাফল্যই যে তাদের একমাত্র অনুপ্রেরণা, আনন্দ-উচ্ছাসের অন্যতম শক্তি।
বিষয়: #সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে ব্রাজিল