শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
শুক্রবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » এইডসে গেলো একবছরে ২৩২ জনের মৃত্যু
প্রচ্ছদ » জাতীয় » এইডসে গেলো একবছরে ২৩২ জনের মৃত্যু
৩২১ বার পঠিত
শুক্রবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

এইডসে গেলো একবছরে ২৩২ জনের মৃত্যু

 

---
বিশ্ব এইডস দিবস-২০২২
>>>>>>>>>>>
* এ পর্যন্ত দেশে মৃত্যু ১ হাজার ৮২০ জনের
* ‘২১ নভেম্বর-’২২ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্ত ৯৪৭
* ১৯৮৯-২০২২ সাল পর্যন্ত শনাক্ত ৯ হাজার ৭০৮
* ৩৩ ভাগ সংক্রমিত ব্যক্তি এখনো শনাক্তের বাইরে
* বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ এইডসে আক্রান্ত

<<<<<<<<<<<<
শাহনাজ পারভীন এলিস
দেশে এক বছরে মরণব্যাধি এইডসে আক্রান্ত হয়ে ২৩২ জন মারা গেছে। এর আগের সব পরিসংখ্যানকে অতিক্রম করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে এইডসে আক্রান্ত ৯৪৭ জনের মধ্যে মারা গেছেন ২৩২ জন। এ পর্যন্ত দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৮২০ জনের। আর ১৯৮৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত  দেশে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭০৮ জন। তাদের মধ্যে দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ১২৮ জন। বাকি ৮১৯ জন এ দেশের নাগরিক।
এইডস নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস এর তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৪ কোটি ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৪। আরও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এপর্যন্ত ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৯ জনের মৃত্যু হয়ে।
বৃহস্পতিবার ১ ডিসম্বর রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘অসমতা দূর করি, এইডসমুক্ত বিশ্ব গড়ি’।

 ---

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বর্তমানে দেশে মোট রোগী এইডস রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রায় ৪ হাজার রোগী এখনো চিকিৎসার বাইরে। দেশে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। আক্রান্তদের অনেকে তথ্য গোপন করে নিজেদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি অন্যদেরও ঝুঁকিতে ফেলছেন। তাদের প্রতি আহ্বান জানাবো তারা যেন এগিয়ে আসেন। কারণ তারা শনাক্ত না হলে তাদের পরিবারই সবার আগে ঝুঁকিতে থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে এইডসে সংক্রমণ হার দশমিক শূন্য এক শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে তা শূন্যতে নামিয়ে আনাই সরকারের লক্ষ্য। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সব রোগীর পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি জেলা-উপজেলা হাসপাতালে এইডস পরীক্ষার ব্যবস্থা রখতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, পরিচ্ছন্ন জীবন ও সচেতনার মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস শূন্যতে নামিয়ে আনা সম্ভব। এ লক্ষ্যে পরীক্ষা নিশ্চিতে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় এইচআইভি পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান, গত এক বছর নতুনভাবে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক। শিরায় মাদক গ্রহণকারী ও পুরুষ সমকামীদের মধ্যে সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে বেশি। ঢাকা বিভাগের পর নতুন সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা বেশি চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে।
মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে ফেরত আসা শ্রমিকদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যাচ্ছে। বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর আগে তাদের এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। বিদেশ থেকে দেশে আসার সময়ও তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে এইডস/এসটিডি কর্মসূচির পরিচালক মো. খুরশিদ আলম বলেন, দেশে অনুমিত এইচআইভি সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১৪ হাজার ৫১৩। এর ৬৭ শতাংশকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় আছেন। যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের ৯০ শতাংশের শরীরের ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি আরও বলেন, এদেশে আক্রান্তে হার কম হলেও ঝুঁকি বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশে ভারত ও মিয়ানমার এ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, দেশের ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারীই এইডস বিষয়ে অবগত নন। এইডসের অন্তত একটি বাহক সম্পর্কে অবগত ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। সবগুলো বাহক সম্পর্কে অবগত ৩৬ শতাংশ নারী। পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে এ হার ছিল ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশে রিকশাচালকদের মধ্যে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ লোক এইডস কীভাবে ছড়ায় তা জানেন না।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রাজেন্দ্র বোহরা বলেন, বৈশ্বিকভাবে এইচআইভি সংক্রমণ কমছে। বাংলাদেশে সংক্রমণের হার ০.০১ শতাংশের নিচে। এটা ভালো লক্ষণ।
এইচআইভি বা এইডস পরীক্ষাসহ চিকিৎসার সব খরচ সরকার বিনা মূল্যে দেয়। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এইচআইভি পরীক্ষা করা গেলে বেশি মানুষকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। তারা বলেন, বিদেশফেরত শ্রমিকদের জাতীয় কর্মসূচির আওতায় রাখা কিছুটা চ্যালেঞ্জের।

---

১৯৮৮ সাল থেকে এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা বিশ্বে ১ ডিসেম্বর দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রতিবারের মতো এবারও দিবসটি পালনে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। দিনটিতে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে শোভাযাত্রা, সভা-সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন।

দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে; আর প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২০০০ সালে। ওই বছর একজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে প্রায় প্রতি৭বছর এইডসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২১ সালের এইডসে মৃত্যু হয় ২০৫ জনের। এ বছর মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
এইডস এমন একটি ক্রনিক ইমিউন ডিজিজ; যা একজন ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে এই রোগ হয়ে থাকে। এইচআইভি ইনফেকশনের কারণে কতগুলো লক্ষণ দেখা দেয়। সেগুলো হচ্ছে- জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, টিবি রোগ হওয়া। বিভিন্ন রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য মানব শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে একেবারে ধ্বংস করে দেয় এই ভাইরাস। অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, এক সিরিঞ্জের বহু ব্যবহার, ছুরি বা ব্লেডের অসুরক্ষিত ব্যবহারের মাধ্যমে একজনের থেকে আর একজনের দেহে এইডস ছড়িয়ে পড়ে।
এইচআইভি ইনফেকশন প্রতিরোধে সচেতনতার অভাব ও শনাক্তরণকেই সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ আক্রান্ত হলে বিশেষ চিকিৎসা মেনে চললে এবং বিশেষ কিছু পদক্ষেপ মেনে চললে সহজেই তা কাটানো যাবে বাকি জীবন। এই ভাবনার প্রসার এখনও আশানুরূপ নয়। ফলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অসাম্য-অসচেতনতার জন্য বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁডাচ্ছে এইচআইভি সংক্রমণ।



বিষয়: #



আর্কাইভ