শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
বৃহস্পতিবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » বিদায় ডা. এস এ মালেক
প্রচ্ছদ » জাতীয় » বিদায় ডা. এস এ মালেক
৩৮৮ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিদায় ডা. এস এ মালেক

বুধবার দুপুরে কলাবাগান মাঠে জানাযা শেষে ১৪ দলের সমন্নয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে ডা. এস এ মালেকের মরদেহে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের শ্রদ্ধা নিবেদন।

# বঙ্গবন্ধু ঘনিষ্ঠ সহচর একাত্তরের বীর সেনানি’কে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

# ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক

শাহনাজ পারভীন এলিস

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এস এ মালেক। বার্ধক্যজনিত সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগে মঙ্গলবার তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. এস এ মালেক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও সহযোদ্ধা। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন, দায়িত্ব পালন করেছেন তার রাজনৈতিক উপদেষ্টার। ছিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. এস এ মালেক আজীবন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

---

জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে গতকাল বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরোস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এস এ মালেক ইন্তেকাল করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যাসহ শরীরের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে গেছেন।

---

প্রয়াত ডা. এস এ মালেকের প্রথম নামাজে জানাযা বুধবার বেলা ১২টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। আর বাদ জোহর দ্বিতীয় নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর কলাবাগান মাঠে। জানাজায় অংশগ্রহণ করেন- আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও আগা খান মিন্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আখতারুজ্জামান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. আ ব ম ফারুক,  বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুল ওয়াদুদ, বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. শামসুদ্দীন ইলিয়াস প্রমুখ।

---

জানাযা শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্নয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে ডা. এস এ মালেকের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক সরদার মাহামুদ হাসান রুবেলের নেতৃত্বে তাকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির পক্ষ থেকে ডা. এস এ মালেকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

---

তার মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে শোক বার্তা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাতে, তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন ও ৬ দফা আন্দোলনসহ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সব আন্দোলন-সংগ্রামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের মৃত্যুতে দেশ একজন বরেণ্য ব্যক্তিকে হারালো। মুক্তিযোদ্ধা ডা. এস এ মালেকের মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

---

ডা. এস এ মালেক ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

এস এ মালেক ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ আব্দুল রাজ্জাক তখন সেখানে বণবিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগের হাট জেলারফকির হাট থানার মূলঘর ইউনিয়নের সৈয়দমহল্লা গ্রামে। প্রবেশিকা পর্যন্ত তিনি গ্রামের স্কুলেই পড়াশুনা করেন।

---

১৯৫৪ সালে খড়রিয়া ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হন। ১৯৫৬ সালে বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে আইএসসি ও ৫৮ সালে ঢাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অনুগত এস এ মালেক প্রথম জীবনে একজন আ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক, পরবর্তীতে একজন হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক হিসেবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হলে ডা. এস এ মালেক সক্রিয় ভাবে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।এ কারণে একপর্যায়ে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান গ্রহণ করতে বাধ্য হন। ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদকে সুসংগঠিত করার কাজে মনোযোগ দেন।



বিষয়: #



আর্কাইভ