শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
বুধবার ● ২৮ ডিসেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন আজ
প্রচ্ছদ » জাতীয় » স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন আজ
২৩৭ বার পঠিত
বুধবার ● ২৮ ডিসেম্বর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন আজ

 ---

বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতে নবদিগন্তের সূচনা
……….
* উদ্বোধনী জনসভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী
* উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত থাকছে ৯টি স্টেশন
* এ পর্যায়ে চালু থাকবে ২ স্টেশন, চলবে ৪ ঘণ্টা
* চলবে ১০ সেট ট্রেন, প্রতিসেটে থাকবে ৬ বগি
* চালকদলে থাকছেন ২ নারী মরিয়ম-আসমা
* সর্বনিম্ন ভাড়া ২০, সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা
* কার্ডধারী ও শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষ ছাড়

……….
শাহনাজ পারভীন এলিস

অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে আজ। চালু হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন বা মেট্রোরেল। পূরণ হতে যাচ্ছে বাঙালির দীর্ঘদিনে প্রত্যাশিত স্বপ্ন। ‘বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ/যানজট কমাবে মেট্রোরেল’- এমন স্লোগানে বিজয়ের মাসেই এর উদ্বোধনের মাধ্যমে বাঙালির আরও একটি বিজয় অর্জিত হবে। আজ সকাল ১১টায় মেট্রোরেলের মূল পয়েন্ট উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় জনসভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

---
উদ্বোধনী ওই অনুষ্ঠানে ৪ হাজার আমন্ত্রিত অতিথিসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সভাশেষে নামফলক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি দিয়াবাড়ী স্টেশনের দ্বিতীয়তলায় উঠে কাউন্টারে গিয়ে নিজে ট্রেনের প্রথম টিকিট কাটবেন। পরে তিনতলার প্ল্যাটফর্মে গিয়ে বাঁশিতে হুইসেল ও পতাকা উড়িয়ে প্রথম ট্রেনটি ছেড়ে দেয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এরপর দ্বিতীয় ট্রেনে যাত্রী হিসেবে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই ট্রেনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, জাপান ও জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা’র কর্মকর্তারা এবং বিদেশি কূটনীতিকসহ নির্ধারিত ২শ’ যাত্রী ওই ট্রেনে ভ্রমণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীসহ অতিথিদের বহনকারী ওই ট্রেনটি উত্তরা থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে এসে থামবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরই সাধারণ যাত্রীদের কাছেও টিকিট বিক্রি শুরু হবে। তাই সাধারণ যাত্রীরাও মেট্রোরেলে আরোহন পারবেন। প্রথম ধাপে চালু হচ্ছে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬) এর কার্যক্রম। এই অংশের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এরই মধ্যে স্টেশন ব্যবস্থাপনা এবং কারিগরি দিকগুলো পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই অংশে স্টেশন থাকছে ৯টি। এছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আগামী বছরের শেষে মেট্রোরেল চালুর কাজ এগিয়ে চলছে; এই অংশে স্টেশন রয়েছে ৭টি। মেট্রোরেলের স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় কনকোর্স হল। এখানে টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা যন্ত্রপাতি থাকবে। তিনতলায় রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরাই ওই তলায় যেতে পারবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ও ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে। আগামী বছর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো কার্যক্রম। এসব বিষয় মাথায় রেখে এপর্যায়ে উত্তরা ও গাবতলী এলাকায় দুটি টিওডি নির্মাণ করা হবে।

---
মেট্রোরেলে উঠতে যা করতে হবে
মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনই তিন তলাবিশিষ্ট। স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ, টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম এবং নানা যন্ত্রপাতি থাকছে। এটাকে বলা হয় ‘কনকর্স লেবেল’। এখান থেকেই টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। টিকিট সংগ্রহ করে যেতে হতে তৃতীয় তলায়। তিনতলায় রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরাই ওই তলায় যেতে পারবেন।
দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ও ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে। গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটার দু’টি পদ্ধতি রয়েছে সিঙ্গেল বা একক ও পারমানেন্ট। টিকিট সংগ্রেহর আগে যাত্রীকে প্রথমে মনিটরে ভাষা নির্বাচন করতে হবে। ইংরেজি ও বাংলা দু’টি ভাষা রয়েছে, যে ভাষায় আপনি স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করবেন সেটা নির্বাচনের পর একক বা পারমানেন্ট (এমআরটি পাস) নির্বাচন করতে হবে। এরপর আসবে গন্তব্যের তালিকা। কোন স্টেশন পর্যন্ত কত ভাড়া সে তালিকা থাকবে। সেখান থেকে যাত্রীকে গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর কয়টি টিকিট সংগ্রহ করবেন সে তালিকা আসবে। এরপর প্রয়োজনীয় টিকিট, গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করে ‘ওকে’ বাটনে টাচ করলেই মেশিন টাকা দিতে বলবে। টাকা দেওয়ার পর টিকিট বা এমআরটি পাস বেরিয়ে আসবে। এই পদ্ধতি অনুসরন করে মেট্রোরেলের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। একজন যাত্রী একবারে ৫টির বেশি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন না।
এছাড়া এমআরটি পাস পদ্ধতিতে একটি স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে যতবার খুশি যাতায়াত করা যাবে। তবে সেক্ষেত্রে কার্ডটি সময়মতো রিচার্জ করে রাখতে হবে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করে নিতে পারবেন। ভ্রমণের দূরত্বে ভাড়া অনুযায়ী অটোমেটিক টাকা কেটে নেবে। প্রত্যেক মেট্রো স্টেশনে থাকা টিকিট ভেন্ডরের মেশিনের মাধ্যমেই রিচার্জ করা যাবে। যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে প্রতিটি স্টেশনে তিন ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সিঁড়ি, এস্কেলেটরের পাশাপাশি বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রাখা হয়েছে লিফট। দ্বিতীয় তলা থেকে টিকিট সংগ্রহ শেষ করে সিঁড়ি বা লিফটের মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে তৃতীয় তলায়। টিকিট চেকইনের বিষয়টি দ্বিতীয় তলাতেই শেষ করা হবে। টিকিট চেক হবে ডিজিটালি। সেখানে কোনো কর্মীর প্রয়োজন হয় না। যদি কেউ না পারেন তাহলে নিরাপত্তা কর্মীরা যাত্রীদের সহযোগিতা করবেন।

---

চালু থাকবে দুই স্টেশন, চলবে ৪ ঘণ্টা

ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রথম দিন মাত্র দুটি স্টেশন খুলে দেওয়া হবে। একটি উত্তরা অন্যটি আগারগাঁও স্টেশন। মেট্রোরেলের ধারণা আমাদের জন্য একেবারেই নতুন, তাই শুরুতে যাত্রীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ও আছে। পরে যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী এক এক করে অন্য স্টেশনগুলো খোলা হবে। এর মধ্যে মিরপুর স্টেশনটি হয়তো অন্যগুলোর আগে খুলে দেওয়া হতে পারে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে মোট ৯টি স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। উদ্বোধনী দিনে শুরু ও শেষের স্টেশনটি খুলে দেওয়া হবে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে উভয় স্টেশনেই পুলিশ পাহারা জোরদার করা হয়েছে।

---

মেট্রোরেলের ভাড়া
যাতায়াতের জন্য মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা ধরে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সাউথ স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা। মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত ৩০ টাকা, কাজিপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ৪০ টাকা, শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ৫০ টাকা, আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ৬০ টাকা, ফার্মগেট পর্যন্ত ৭০ টাকা, শাহাবাগ পর্যন্ত ৮০ টাকা, সচিবালয় পর্যন্ত ৯০ টাকা এবং কমলাপুর পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। মেট্রোরেলে যাতায়াতকারীদের জন্য থাকবে সাময়িক কার্ড, যা তাদের প্রতি যাত্রায় দেওয়া হবে। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে সেই স্মার্ট কার্ডটি সংগ্রহ করতে হবে। কেউ যদি ভাড়ার অতিরিক্ত যাতায়াত করেন তাহলে সেই কার্ড দিয়ে দরজা খুলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করেই তাকে বের হতে হবে। শিক্ষার্থী এবং যেসব যাত্রী সাপ্তাহিক, মাসিক ও পারিবারিক কার্ড ব্যবহার করবেন- তাদের জন্য থাকবে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। তবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা বিনা ভাড়ায় মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতিটি সিঙ্গেল ট্রিপের বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

 

---
মেট্রোরেলের যাত্রী বহন প্রস্তুত ৫০টি দ্বিতল বাস
মেট্রোরেলে আরোহনকারী যাত্রীদের সড়কপথে পরিবহনের জন্য রাজধানীর আগারগাঁও এবং উত্তরা নর্থ (দিয়াবাড়ী) স্টেশনে প্রস্তত রাখা হয়েছে বিআরটিসির শাটল বাস সার্ভিস। এ জন্য ৫০টি দ্বিতল বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী-হাউস বিল্ডিং এবং আগারগাঁও-মতিঝিল রুটে পরীক্ষামূলক ১৫টি বাস চালানো হয়েছে। বিআরটিসির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের চাহিদার আলোকে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। প্রাথামিকভাবে ৫০ বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উদ্বোধনের দিন থেকে এই বাস চলাচল করবে। মেট্রোরেল স্টেশনে নেমে যাতে পরিবহন সমস্যা না হয় সেজন্য এই বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। আগারগাঁও ও উত্তরা দুই স্টেশনে এই বাসগুলো রাখা হবে। যাত্রীরা ভাড়া দিয়ে এই বাসে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করতে পারবে। আগারগাঁও থেকে যাত্রীদের ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন হয়ে মতিঝিল পৌঁছে দেবে বিআরটিসির বাস। দিয়াবাড়ী স্টেশনেও থাকবে বাস। উত্তরার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব বাসে যাত্রীরা মেট্রোর স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারবেন।

---
মেট্রোরেল স্টেশনের পার্কিং ব্যবস্থাপনা
মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে থাকবে সর্বাধুনিক ও নিরাপদ পার্কিং সুবিধা। দেশের মেট্রোরেলগুলোর জন্য একটি ট্রানজিট ওয়রিয়েন্টেড ডেভলপমেন্ট (টিওডি) হাবের এক মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। টিওডি’তে বহুতল বিশিষ্ট পার্কিং সুবিধা থাকবে। ফলে নিজের পছন্দের বাহন পার্কিংয়ে রেখে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করা যাবে। এতে করে নগরীতে থাকবে না জটলা। টিওডিগুলো সাধারণত মেট্রোরেলের রুটের উপর ভিত্তি করে ঢাকা প্রবেশপথে নির্মিত হবে। গাড়ি পার্কিং ছাড়াও বাড়তি রাজস্ব আয়ের লক্ষে এসব টিওডিতে থাকবে বিপণিবিতান, হোটেল, বিনোদনকেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

 

---
মেট্রোরেল চালক দলে থাকছেন দুই নারী
দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালানোর জন্য নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দু’জন নারীও আছেন। মরিয়ম আফিজা ও আসমা আক্তার নামে ওই দুই নারীকে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। মেট্রোরেলের চালকের পদটির নাম ‘ট্রেন অপারেটর’। এই পদে ২৫ জনের সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন মরিয়ম আফিজা। স্টেশন থেকে ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন স্টেশন কন্ট্রোলার। এই পদে ৩৪ জনের সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন আসমা আক্তার। তিনি ট্রেন অপারেটর কখনো কখনো স্টেশন কন্ট্রোলারের দায়িত্ব পালন করবেন। এই স্টেশন কন্ট্রোলার প্রয়োজন হলে ট্রেনও চালাবেন। মরিয়ম ও আসমাকে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোতে কারিগরি ও প্রায়োগিক প্রশিক্ষণসহ চট্টগ্রামের হালিশহরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা (উপসচিব) সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ট্রেন পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে আড়াই শতাধিক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফ্রন্টলাইন কাস্টমার রিলেশন অফিসার ও টিকিট মেশিন অপারেটর পদে আরও প্রায় ৪০০ লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। মেট্রোরেলের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মিতসুবিশি-কাওয়াসাকি কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা চালকদের ট্রেন পরিচালনার কারিগরি ও প্রায়োগিক নানা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এরপর তারা দিল্লি মেট্রোরেল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেবেন। প্রয়োজনে ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিদের জাপানেও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।
উত্তরার এমআরটি লাইন-৬ এ স্মৃতিস্তম্ভ
নিহত সাত জাপানি নাগরিক মেট্রোরেল নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা মেট্রোরেল প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। রাজধানীর গুলশানে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। অস্ত্রের মুখে তারা দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। সেদিন জঙ্গিরা ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এর মধ্যে সাত জন জাপানি নাগরিক। তাদের মধ্যে দুই জন ছিলেন নারী। তারা মেট্রোরেলের সমীক্ষা কাজের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার যানজট ব্যবস্থাপনা নিয়েও গবেষণা করছিলেন। সেই অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা হলেন- তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা, শাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদেইকো। মেট্রোরেল সম্পর্কে জনসাধারণকে সম্যক ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা ডিপো এলাকায় মেট্রোরেল এক্সিবিশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এই এক্সিবিশন সেন্টার নিহত সাত জাপানি নাগরিকের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে বলে জানায় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।
মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয়
২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের দিকে। প্রথম দিকে মেট্রোরেলে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেলের পথ সম্প্রসারণ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণ, কিছু স্টেশনে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শকের পেছনে ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বাড়তি ভ্যাটসহ বিভিন্ন উপকরণ যুক্ত হয়েছে। এর জন্য প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ টিওডি নির্মাণ। ডিএমটিসিএল জানায়, পরিকল্পনা অনুসারে প্রথম টিওডি হাব হবে উত্তরা সেন্টার স্টেশনকে ঘিরে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ৮৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে ২৮ দশমিক ৬২ একর জমি কেনা হয়েছে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। সবশেষ যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে জাইকা দেবে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। সরকার খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। শুরুতে জাইকার দেওয়ার কথা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা।

গাবতলীতে নির্মিত হবে টিওডি হাব
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালটি কিছুটা সরিয়ে নিয়ে সেখানে টিওডি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের আওতায় এ জায়গায় টিওডি হাব করতে চায় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গাবতলী বাস টার্মিনালের জায়গায় টিওডি হাব হলে বর্তমানের অবকাঠামো ভেঙে ফেলার প্রয়োজন হবে না। বিষয়টি নিয়ে ডিএনসিসির সঙ্গে আলোচনা চলছে। শিগগিরই ডিএমটিসিএল ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এছাড়া গাবতলী এলাকার তিনটি মেট্রোরেলের লাইনের পথ হচ্ছে লাইন-১ (গাবতলী থেকে ধানমন্ডি, গুলিস্তান হয়ে চিটাগং রোড), লাইন-৫ উত্তর পথ (সাভারের হেমায়েতপুর থেকে মিরপুর ও গুলশান হয়ে ভাটারা), লাইন-৫ দক্ষিণ পথ (গাবতলী থেকে রাসেল স্কয়ার ও হাতিরঝিল হয়ে দাশেরকান্দি)। গাবতলী ছাড়াও এসব লাইনে একাধিক টিওডি হাব নির্মাণের পরিকল্পনা আছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক সংবাদ সারাবেলাকে জানিয়েছেন, ‘পরিবেশবান্ধব ও স্মার্ট সিটি গড়তে টিওডি’র কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীর সকল দেশেই মেট্রোরেল স্টেশনের পাশে এগুলো নির্মিত হয়। টিওডি নির্মিত হলে মানুষ গাড়ি ব্যবহার করবে না পায়ে হেঁটে মেট্রোরেল স্টেশনে চলে আসবে। সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার ফরেন কারেন্সি খরচ করে তেল কেনে। টিওডি নির্মাণের ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমে যাবে। শহরের বাইরে টিওডি নির্মাণ করলে অনেকে পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে মেট্রোরেলে চড়বে। সরকার মানুষকে বাধ্য করবে টিওডিতে গাড়ি রাখি মেট্রোরেলে চড়ো। মূল শহরের ভেতরে গাড়ির চাপ কমবে। শহরের বাইরের টিওডি’তে রেখে মানুষ মেট্রোরেলে চড়বে।’
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, টিওডি হাব বাংলাদেশে একটি নতুন ধারণা। এর জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হবে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ডিএমটিসিএল এর অধীনে ছয়টি মেট্রোরেল (এমআরটি) নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। যাতে করে রাজধানী জুড়ে ১২৯ দশমিক ৯০১ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে এলিভেটেড লাইন হবে ৬৮ দশমিক ৭২৯ কিলোমিটার এবং ভূগর্ভস্থ লাইন হবে ৬১ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার। রাজধানী জুড়ে থাকবে ১০৫ টি স্টেশন। যারমধ্যে ৫২টি থাকবে উপরে এবং ৫৩টি থাকবে পাতালে। ডিএমটিসিএল বিশ্বের অন্যান্য মেট্রোর মতো নন-রেল ব্যবসার কথা ভাবছে। আয় বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব এবং আর্থিক স্থায়িত্ব, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) রুটের আশপাশে ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) হাব স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা হয়। তবে বাংলাদেশে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এ ক্ষেত্রে পরিচালনার কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবে ডিএমটিসিএল। প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরুহয় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলাকায়। এছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের কার্যক্রম আগামী বছরের শেষে চালুর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে; এই অংশে স্টেশন রয়েছে সাতটি। এরই মধ্যে সরকার মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে মেট্রোরেল প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
➤➤➤➤➤➤➤➤➤➤➤

---

একনজরে ঢাকা মেট্রোরেল
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসি)

সংক্ষিপ্ত বিবরণ
অবস্থান                   ঢাকা, বাংলাদেশ
পরিবহনের ধরন      দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা
লাইনের (চক্রপথের) সংখ্যা ১টি (নির্মাণাধীন) ৫টি (পরিকল্পিত)
বিরতিস্থলের (স্টেশন) সংখ্যা ১৬টি (নির্মাণাধীন) ৮৮টি (পরিকল্পিত)
দৈনিক যাত্রীসংখ্যা    ৬০,০০০ (প্রতি ঘণ্টায়) (এমআরটি লাইন ৬)
প্রধান কার্যালয়         ঢাকা, বাংলাদেশ
ওয়েবসাইট               www.dmtcl.gov.bd

চলাচল
কার্যক্রম উদ্বোধন      ২৮ ডিসেম্বর ২০২২
পরিচালক সংস্থা        ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড

কারিগরি তথ্য
মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য   ২০.১ কিমি (নির্মাণাধীন) ১০৮.৬৪১ (পরিকল্পিত)
রেলপথের গেজ           আদর্শ গজ
®®®



বিষয়: #



আর্কাইভ