শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
বুধবার ● ১১ জানুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » ইভিএমে বিলম্বিত ভোটে আমরা উদ্বিগ্ন: সিইসি
প্রচ্ছদ » জাতীয় » ইভিএমে বিলম্বিত ভোটে আমরা উদ্বিগ্ন: সিইসি
২২৮ বার পঠিত
বুধবার ● ১১ জানুয়ারী ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ইভিএমে বিলম্বিত ভোটে আমরা উদ্বিগ্ন: সিইসি

---
* পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংকটগুলো নিরুপন করা হবে
* ফিঙ্গার প্রিন্টে মিল না পাওয়া এক্ষেত্রে বড় সমস্যা
* সংকটগুলো ওভারকাম করার চেষ্টা করা হবে

শাহনাজ পারভীন এলিস

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের ধীরগতি নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোটসহ বেশকিছু নির্বাচনে ঘটে যাওয়া ইভিএমে ভোটগ্রহণ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব। আলাপ-আলোচনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংকটগুলো নিরুপন করার চেষ্টা করা হবে। তারপর এগুলোকে যতটা ওভারকাম করা সম্ভব আমরা সেটি চেষ্টা করব।’ গতকাল বুধবার রংপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সিইসি এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সম্প্রতি রংপুরে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুন্দর, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। তারপরও সেখানে কিছু সংকটের কথা বলা হয়েছে। কিছু অভিযোগ আমরা তখনই পাচ্ছিলাম মিডিয়ার সুবাদে। যেমন ভোট স্লো হচ্ছে, একটা বড় ধরনের অভিযোগ ছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে ফিঙ্গার প্রিন্টও মিলছিল না। আসলে কেন ভোট বিলম্বিত হওয়া অভিযোগটা এর আগে আমরা কখনো পাইনি। এটা আমাদের খুব উদ্বিগ্ন করে তুলল। আমরা তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এ বিষয়গুলো যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন, যারা মিডিয়ার কর্মী হিসেবে সেখানে কাজ করেছেন এবং আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তা সেখানে থেকে যারা নির্বাচন ম্যানেজ করেছেন- তাদের নিয়ে আমরা সভায় আহ্বান করে ফিডব্যাক নেব।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘অন্যান্য নির্বাচনগুলোতে কিন্তু আমরা এই সমস্যাগুলো পাইনি। আপনারা কিছু কিছু বলেছেন, সেগুলোর যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। ইভিএমে ভোট নেওয়ার সময় আঙুলের ছাপ মিলিয়ে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু বয়স্ক অনেকের ক্ষেত্রে ছাপ কয়েকবারেও মিলতে চায় না। এ ধরনের সমস্যা হলে সময় নষ্ট হয়। সার্বিকভাবে ভোটগ্রহণের গতি যায় কমে।’ গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়। সেখানেও ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মেলার সমস্যা, ভোট নিতে ধীর গতি এবং ভোট শেষ করতে বিলম্বের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়।

---
সিইসি বলেন, ‘কারণ আমরা যদি সরাসরি আপনাদের কাছ থেকে শুনতে না পাই। তাহলে আমাদের পক্ষে যে সঙ্কটটা হলো এটার কারণটা কিছুকিছু পেয়েছি পুরোটা আমরা এখনো পাইনি। এগুলো পর্যালোচনা করে চেষ্টা করবো সঙ্কটগুলো ওভারকাম করার জন্য। একই সাথে আপনাদেরকে বলছি যে, অন্যান্য নির্বাচনগুলোতে কিন্তু আমরা এই সমস্যাগুলো পাইনি। আমাদের মিডিয়া কর্মীরা কিছু কিছু বলেছেন সেগুলো যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। যেটাই হোক ফিডব্যাক নেওয়ার দরকার ছিলো। আমরা সেটি নিয়েছি।’
সিইসি বলেন, বৈঠকে পাওয়া মতামতগুলো পর্যালোচনা করে চেষ্টা করব সংকটগুলো ওভারকাম করার। একই সঙ্গে আপনাদের বলছি, অন্যান্য নির্বাচনগুলোতে কিন্তু আমরা এ সমস্যাগুলো পাইনি। আমাদের মিডিয়া কর্মীরা কিছু কিছু বলেছেন সেগুলো যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। যেটাই হোক, ফিডব্যাক নেওয়ার দরকার ছিল। আমরা সেটি নিয়েছি। ফিডব্যাক নিয়ে আমরা চাই স্বচ্ছ নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। সেখানে এ জিনিসগুলো আমাদের প্রত্যাশা। এ ব্যাপারে আপনারা আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন, আগামীতেও করবেন।
রংপুরে রাত পর্যন্ত ভোট হওয়ার নেপথ্যে যত কারণ
কিছুদিন আগে গাইবান্ধায় ভোটে অনিয়মের কারণে প্রথম দফায় পুরো নির্বাচন বন্ধ করার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুরের ভোট রাত অবধি চলা নিয়ে উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন। ভোটারদের উপস্থিতির পরও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কেন ভোটগ্রহণে বিলম্ব হয়েছে তা খুঁজতে মাঠে নামে ইসি। এজন্য নির্বাচন কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকরা ইসিকে জানালেন, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ত্রুটি, আঙুলের ছাপ না মেলা, ভোটাররা ইভিএমে অভ্যস্ত হওয়ায় রাত পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করতে হয়েছে। একইসঙ্গে ইভিএমে ভোট নেওয়ার আগে ভোটার এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা উভয়েরই যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকার কথাও নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছেন সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা।
সভায় সাংবাদিকদের বিশ্লেষণ
মতবিনিময় সভায় বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোরের আরেফিন শাকিল বলেন, ‘রংপুরে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু সেখানে ভোটের উৎসবের চাইতে ভোটারের ভোগান্তি বেশি হয়েছে। বয়স্ক ভোটাররা বেশি সমস্যায় পড়েছেন। তারা ইভিএমে সাদা আর সবুজ বাটন চাপতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। মানুষ ইভিএম নিয়ে কনফিউজড।’ ভোটের আগে ঠিকমতো মগ ভোটিং না বিষয়টিও উল্লেখ করেন এই সাংবাদিক।

---
একাত্তর টেলিভিশনের তানিয়া রহমান বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে স্বচ্ছ ধারণার অভাব দেখা গেছে রংপুরে। বেশিরভাগ কেন্দ্রে গিয়ে এটাই নজরে এসেছে।’ চ্যানেল ২৪ এর মুকসিমুল আহসান হিমেল বলেন, ‘রংপুরে অনেক কেন্দ্রে মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলে নাই, মানুষ বিরক্ত হয়ে ভোট না দিয়েই বাড়ি গেছেন। রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট দিতে মানুষ কেন্দ্রে ছিল, কিন্তু ভোটদান ছিল ধীরগতির।’ ইভিএম সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি বলেও মনে করেন তিনি।
যমুনা টিভির রাসেল আহমেদ বলেন, ‘একজন প্রবীণ ভোটার প্রায় আধঘণ্টা চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারেননি।পরে তার নাতি এসে তাকে সহযোগিতা করতে এসে দেখেন- তিনি পছন্দের প্রতীকের বদলে ভিন্ন জায়গায় এরইমধ্যে ভোট দিয়ে ফেলেছেন।’ ইভিএমের ধীরগতির কারণে এই যন্ত্র নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে বলে মত দিয়েছেন ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির মাহমুদুল হাসান পারভেজ। রংপুরের ভোট কাভার করা নিউজ টোয়েন্টি ফোরের আরেকজন সাংবাদিক হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘আঙুল ছাপ না মেলার ঘটনা দিনকে দিন বাড়তে থাকায় ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালেটের ব্যবস্থা রাখা জরুরি।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘সার্ভার ডাউন হয়ে যাওয়া, ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রশিক্ষণের অভাব লক্ষ্য করা গেছে। মক ভোটিংও কম হয়েছে। ভোটারদের এজন্য বেশি সময় লেগেছে। আমরা ইভিএমে ভোট দেওয়ার প্রদর্শনী বাড়ানোর জন্য বলেছি।’ জবাবে ইসির পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা বিষয়টি খোঁজ নেবেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
নির্বাচন কমিশনের এই মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য কমিশনার, সচিবসহ শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা, পর্যবেক্ষক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং ইসি বিটে সংবাদ সংগ্রহকারী বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।



বিষয়: #



আর্কাইভ