শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
সোমবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » বিএসএমএমইউতে সফল লিভার প্রতিস্থাপন
প্রচ্ছদ » জাতীয় » বিএসএমএমইউতে সফল লিভার প্রতিস্থাপন
২৭২ বার পঠিত
সোমবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিএসএমএমইউতে সফল লিভার প্রতিস্থাপন

গতকাল রোববার শহীদ ডা. মিল্টন হলে সংবাদ সম্মেলনে সফল লিভার প্রতিস্থাপনের সার্বিক তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

* বছরে ৪-৫ হাজার রোগীর এই চিকিৎসা প্রয়োজন

* লিভার প্রতিস্থাপনে খরচ ২০-২৫ লাখ টাকা 

* সুস্থ লিভার থেকে ৬০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়

* ডোনারের লিভার ধীরে ধীরে রি-জেনারেট হয়

বিশেষ প্রতিনিধি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দ্বিতীয়বারের মতো সফল লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি মন্তেজার রহমান (৫৩) নামে এক রোগীর দেহে লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়। তাকে লিভার দান করেন তার বোন শামীমা আক্তার (৪৩)। এর আগে এই হাসপাতালে ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো সফল লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়।

গতকাল রোববার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, ‘মুজিব শতবর্ষ লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম’-এর অংশ হিসেবে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

গতকাল রোববার শহীদ ডা. মিল্টন হলে সংবাদ সম্মেলনে সফল লিভার প্রতিস্থাপনের সার্বিক তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

উপাচার্য বলেন, রোগী মন্তেজার রহমান নন-বি, নন-সি জনিত ‘ইন্ড স্টেজ লিভার’ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। লিভার প্রতিস্থাপনে সেবাগ্রহিতা ও লিভারদাতা দু’জনই সুস্থ আছেন। তারা দু’জনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। লিভার প্রতিস্থাপনের এই প্রক্রিয়ায় লিভার দানকারী শামীমা আক্তারের দেহ থেকে সুস্থ লিভারের ৬০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। আর রোগী মন্তেজার রহমানের সিরোটিক লিভারের পুরোটাই কেটে বের করে ফেলা হয়। এরপর ডোনার শামীমা আক্তারের দেহ থেকে কেটে নেওয়া সুস্থ লিভারের ৬০ শতাংশ রোগী মন্তেজারের লিভারে জোড়া দেওয়া হয়। লিভারদাতা শামীমা আক্তারের সুস্থ লিভারটি ধীরে ধীরে রি-জেনারেট করবে। এটি লিভার নামক অঙ্গটির একটি বিশেষত্ব।

তিনি আরও জানান, অপারেশনের সময় লিভার গ্রহিতার পক্ষে ছিলেন- অধ্যাপক মো. মোহছেন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র দাস, অধ্যাপক, ডা. আবদুল্লাহ মো. আবু আইয়ূব আনসারী, সহকারী অধ্যাপক এবং ডা. সারওয়ার আহমেদ সোবহান। লিভার দাতার পক্ষে ছিলেন- অধ্যাপক মো. জুলফিকার রহমান খান, অধ্যাপক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান, ডা. মো. নূর ই এলাহী, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফ উদ্দীন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশীষ সাহা।

ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, দেশের স্বল্প আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে এই চিকিৎসা সুবিধা পেতে পারেন সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় হাসপাতালে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বছরের প্রথম দিনের লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন অপারেশনটি ছিল রোগীর আত্মীয় সম্পর্কিত কোন ডোনার থেকে লিভারের অংশবিশেষ নিয়ে প্রতিস্থাপন করা; যাকে বলে গিভিং ডোনার লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন। এ ধরনের লিভার প্রতিস্থাপনে সবমিলিয়ে খরচ পড়বে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা।

গতকাল রোববার শহীদ ডা. মিল্টন হলে সংবাদ সম্মেলনে সফল লিভার প্রতিস্থাপনের সার্বিক তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

উপাচার্য আরও বলেন, ২০১৮ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক ৮০ লাখ রোগী লিভার সংক্রান্ত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ইন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজ; যা হলো ক্রনিক প্রদাহজনিত লিভারের শেষ অবস্থা। এই অবস্থায় লিভার তার কার্যক্ষমতা হারায়। সাধারণত হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস সংক্রমণ অথবা লিভারে অতিরিক্ত চর্বিজনিত প্রদাহ থেকে লিভার টিস্যুর পরিবর্তন শুরু হয়, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক লিভার টিস্যুর পরিবর্তন হয়ে সিরোটিক লিভার টিস্যু তৈরি হয়।

সিরোটিক লিভার টিস্যু স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে অক্ষম। যখন রোগীর লিভারের একটি বড় অংশ সিরোটিক হয়ে যায় তখন বলা হয় রোগীটি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এই লিভার সিরোসিসের শেষ পর্যায় হচ্ছে ইন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজ। এর একমাত্র চিকিৎসা লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন। এছাড়াও লিভারের আরও কিছু রোগ রয়েছে, যেমন লিভারের কোন একটি অংশে লোবে ক্যান্সার (হেপাটোসেলুলার ক্যান্সার), বাচ্চাদের ক্ষেত্রে লিভারের জন্মগত ত্রুটি (বিলিয়ারি এট্রেশিয়া, মেটাবোলিক ডিজিজ ইত্যাদি) এর চিকিৎসাও লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন।

উপাচার্য শারফুদ্দিন জানান, লিভারের আরও কিছু রোগ রয়েছে। যেমন- লিভারের কোনও একটি অংশে (লোবে) ক্যান্সার (হেপাটোসেলুলার ক্যান্সার), বাচ্চাদের ক্ষেত্রে লিভারের জন্মগত ত্রুটি (বিলিয়ারি এট্রেশিয়া, মেটাবোলিক ডিজিজ ইত্যাদি)-এর চিকিৎসাও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন।

গতকাল রোববার শহীদ ডা. মিল্টন হলে সংবাদ সম্মেলনে সফল লিভার প্রতিস্থাপনের সার্বিক তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বিভিন্ন হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনসংখ্যার মাত্র ৫-১০ শতাংশ এ ভাইরাসের জন্য টিকা নিয়েছে; যা অত্যন্ত অপ্রতুল। ফলে হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রান্ত রোগব্যাধী বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর আনুমানিক ৪-৫ হাজার রোগীর লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন চিকিৎসা প্রয়োজন। দেশে আগে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর রোগীদের একটি বিশাল অংশ দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশসহ বহির্বিশ্বে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। ফলে দেশের স্বল্প আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এ চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে ‘মুজিব শতবর্ষ লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোহছেন চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে ‘মুজিব শতবর্ষ লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করা হয়। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের মতো একটি জটিল চিকিৎসা প্রক্রিয়া সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের সহযোগিতা নেওয়া হয়।



বিষয়: #



আর্কাইভ