২৩ এপ্রিলের মধ্যে হবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন: ইসি আলমগীর

বিশেষ প্রতিনিধি

আগামী ২৪ এপ্রিল শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ। সংবিধান অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।  এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, এরই মধ্যে যথাসময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠান করার প্রক্রিয়া ইসি শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও সংসদ সচিবালয়ের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক করে তফসিলের সিদ্ধান্ত নেবেন।

গতকাল রোববার (১৫ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ইসি আলমগীর বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তার পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কার্যভার গ্রহণ করেন। সে মোতাবেক তার দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল।

এদিকে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদটি শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ করতে হবে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। সংসদের চলতি অধিবেশন ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমান সংসদে ৩৫০ আসনের মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করার পর ৭টি আসন শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি ৬ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘যেহেতু তিনি (আবদুল হামিদ) দুই টার্ম থেকেছেন, সংবিধান অনুযায়ী তিনি আর থাকতে পারেন না। সেহেতু আমরা নতুন রাষ্ট্রপতি দেখব।’ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের প্রার্থীর রাষ্ট্রপতি হওয়াটা প্রায় নিশ্চিত।

দলীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট করতে হয়েছিল। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করবে।

সবশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল হয়েছে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি। ওই বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ থাকলেও একক প্রার্থী হওয়ায় মো. আবদুল হামিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত হন। এর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ওই বছর ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে মো. আবদুল হামিদ সেদিন থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২২ এপ্রিল তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর তিনি ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ওই বছর ২৪ এপ্রিল ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তবে সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি আর এই পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।

সংবিধানে যা আছে:

সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে ওই পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইনানুযায়ী সংসদ সদস্যরাদের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি ৪৫ বছরের কম বয়স্ক হন; অথবা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হন, অথবা কখনও এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকেন।

অন্যদিকে ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।

ডবধান অনুযায়ী একাধি ক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোন ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। স্পিকারের উদ্দেশে সইযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি তার কার্যভারকালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া যোগ্য হবেন না এবং কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতি রূপে তার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।

নির্বাচন পদ্ধতি:

১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনানুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনি কর্তা হিসেবে এই নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এজন্য একটি জাতীয় সংসদ কক্ষে সংসদ সদস্যের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নির্বাচনি কর্তা সভাপতিত্ব করবেন। তিনি নির্বাচনের নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন।

সংসদের অধিবেশন চলাকালে নির্বাচনের প্রয়োজন হলে কমিশন ভোটগ্রহণের অন্তত সাতদিন আগে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের সময়সূচি নির্ধারণ করবে। আর সংসদ অধিবেশন না থাকলে ভোটগ্রহণের দিনে স্পিকারের সঙ্গে অন্তত সাতদিন আগে আলোচনা করে সংসদের বৈঠক সরকারি প্রজ্ঞাপনের আহ্বান করবে।

রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনোনয়নপত্রে একজন সংসদ সদস্যের প্রস্তাবক ও একজন সংসদ সদস্যের সমর্থক হিসেবে সই থাকতে হবে। এছাড়া যিনি মনোনীত হবেন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সম্মতিসূচক তারও একটি বিবৃতি থাকতে হবে। এ নির্বাচনে ভোটার হবেন সংসদ সদস্যরা। কমিশন একটি ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে।

একাধিক বৈধ প্রার্থী থাকলে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন শেষে একাধিক প্রার্থী থাকলে সংসদের বৈঠকে নির্ধারিত দিনে দুপুর ১২টার পর ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ যেমন প্রকাশ্যে হবে, তেমনি ভোট গণনাও প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সর্বোচ্চ ভোট যদি একাধিক প্রার্থী পেয়ে যান, তবে তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করবেন। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণাই চূড়ান্ত।