শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
সোমবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » নুহা-নাবা’র অস্ত্রোপচার শুরু ২৯ জানুয়ারি
প্রচ্ছদ » জাতীয় » নুহা-নাবা’র অস্ত্রোপচার শুরু ২৯ জানুয়ারি
৩৩৪ বার পঠিত
সোমবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নুহা-নাবা’র অস্ত্রোপচার শুরু ২৯ জানুয়ারি

---

জমজ শিশু নুহা ও নাবা

* পর্যায়ক্রমে ৬-৭ ধাপে চলবে আলাদা করার কার্যক্রম 

* আপারেশনের প্রথম ধাপে করা হবে টিস্যু ট্রান্সফার

* তৃতীয় ধাপে নুহা ও নাবাকে আলাদা করা হবে 

শাহনাজ পারভীন এলিস

দেশে মেরুদণ্ডে জোড়ালাগা প্রথম শিশুকন্যা নুহা ও নাবাকে আলাদা করতে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. শারফুদ্দীন আহমেদ সংবাদ সারাবেলাকে জানিয়েছেন, ‘মেরুদণ্ডে জোড়ালাগা প্রথম এই জমজ শিশু অপারেশন প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্পর্শকাতর, জটিল ও সময় সাপেক্ষ। এরই মধ্যে প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৯ জানুয়ারি শুরু হবে তাদের অস্ত্রোপচার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিশুদের চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন। তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভারের দায়িত্বও তিনি নিয়েছেন। বলেছেন, অপারেশনের সময় প্রয়োজন হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের চিকিৎসকদের সহযোগিতা নেয়া হবে।

---

নুহা ও নাবা’র অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার জন্য গঠিত ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। তার সাথে রয়েছেন পেডিয়াটিক মেডিসিন, ভাসকুলা সার্জারি, অ্যানেসথেশিয়া, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা। এছাড়াও অপারেশনে নিউরোসার্জন, ইউরোলজিস্টস, শিশু সার্জন, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন, এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ও শিশু পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের দরকার হবে।

---

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. মোহাম্মদ হোসেন সংবাদ সারাবেলাকে জানিয়েছেন, ‘এ পর্যায়ে চলছে ওই দুই শিশুর শারীরিক পরীক্ষা ও অপারেশনের সার্বিক প্রস্তুতি। জন্মের সময় তাদের দু’জনের হার্টে ফুটো থাকলেও নাবা এখন ভালো আছে, আর নুহা’র হার্টে ফুটো এপর্যায়ে কমে এসেছে। তাদের অপারেশনের জন্য দেশি-বিদেশি যেসব ডিভাইস দরকার হবে তা সংগ্রহ করা হয়েছে। অপারেশনের প্রথম ধাপে তাদের টিস্যু এক্সপাইন্ডার করার প্রস্তুতি চলছে। তারপর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার-নীরিক্ষার পর শুরু হবে মূল অপারেশন কার্যক্রম। এর দ্বিতীয় ধাপে তাদের বডি আলাদা করার কাজ শুরু হলেও তা শেষ হবে তৃতীয় ধাপে। আমরা ধারণা করছি, এই জমজদের আলাদা করার পরও তাদের সুস্থ করে তুলতে  সবমিলিয়ে ছয় থেকে সাতটি অপরেশনের প্রয়োজন হতে পারে।’

---

ডা. হোসেন আরও জানান, জমজশিশু নুহা ও নাবা’র বয়স এখন ১০ মাস। শিশুদের মায়ের অতীতে তার কোন খারাপ প্রসূতি ইতিহাস ছিল না, অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা ছিল না, জন্মগত অসঙ্গতির কোন পারিবারিক ইতিহাসও নেই। প্রসবপূর্ব ২০ সপ্তাহে গর্ভাবস্থায় যমজ দেখা যায়। তবে গর্ভাবস্থার ২৬ সপ্তাহে করা অ্যানোমলি স্ক্যানে তাদের কোন জন্মগত অসঙ্গতি দেখা যায়নি। জন্ম থেকেই তাদের শরীরের পেছনের মেরুদণ্ডের নিচের অংশ জোড়ালাগা। তাদের মূত্রনালী ছিলো আলাদা, আর মলদ্বার সংযুক্ত। দু’জনের সেক্স অর্গান একটি। তবে উভয়েই শব্দ ও স্পর্শে সংবেদনশীল। তাদের যকৃত, গলব্লাডার, প্লীহা, অগ্ন্যাশয়, কিডনি এবং ইউরেটার্স স্বাভাবিক রয়েছে।

---

বিএসএমএমইউ’এর কেবিন ব্লকের ছয় তলার ৬১৮ নাম্বার কেবিনে এখন নুহা ও নাবার বসবাস। রোবরার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তারা দু’জনই বিছানায় শুয়ে হাসছে, খেলছে- মায়ের কণ্ঠ শুনে বা অন্যদের আহবানে সাড়াও দিচ্ছে। স্পর্শ করলে প্রতিক্রিয়াও জানাচ্ছে। তবে দু’জনের মধ্যে একজনের স্বাস্থ্যেও কিছুটা অবনতি হয়েছে। তাদের মা নাছরিন আক্তার জানান, নুহা’র খাবারের ব্যাপারে কোন অনীহা না থাকলেও, খেতে তেমন আগ্রহী নয় নাবা।

---

নুহা ও নাবা’র বাবা পরিবহন শ্রমিক আলমগীর হোসেন জানান, মেয়েদের নিয়ে চিন্তা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী সহায়তা আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় তিনি আশায় বুক বেঁধেছেন। তাদের সুস্থ করে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। তবে মেয়েদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ায় এখন সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জমজশিশু নুহা ও নাবা’কে আলাদা করার পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে তাদের হাসপাতালে আরও অন্তত বছর খানেক অবস্থান করতে হবে।

---

কুড়িগ্রামের আলমগীর হোসেন রানা ও নাসরিন আক্তার দম্পতির ঘরের আলো ব্লগ নুহা ও নাবা। গত বছরের ২১ মার্চ স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাদের জন্ম হয়। সেসময় তাদের ওজন ছিল ৮ দশমিক ৫ কেজি। কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন এম মোরশেদ এবং অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ হোসেনের সহায়তায় চিকিৎসার জন্য গত বছরের ৪ এপ্রিল তাদের বিএসএমএমইউ’তে আনা হয়।



বিষয়: #



আর্কাইভ