শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
মঙ্গলবার ● ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটুকু
প্রচ্ছদ » জাতীয় » রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটুকু
৩০৫ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটুকু

---

বিশেষ প্রতিনিধি 

জাতীয় নির্বাচনের আগে এবার অনুষ্ঠিত হলো রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সে কারণে এই নির্বাচন নিয়ে সবার আগ্রহ ছিলো এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। যদিও এ দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত, তারপরও নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ অব্যাহত থাকায় নির্বাচন এলেই রাষ্ট্রপতির ভূমিকা আলোচনা সামনে আসে। সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি দলগুলোর বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করাসহ কিছু ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন, এমন একটা ধারণা অনেকের রয়েছে।

সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির নামেই রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ড চলে। সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করবেন। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান, কিন্তু তিনি সরকারপ্রধান নন।

শুধু দুটি স্বাধীন ক্ষমতা

সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির দুটি ক্ষমতা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। রাষ্ট্রপতি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে পারেন। প্রধান বিচারপতি কে হবেন, তা নির্ধারণ করা এবং তাকে নিয়োগ করার ক্ষমতা সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। সংসদ নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে, সেই দলের নেতাকেই প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে হয়। তবে কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, তখন কোন দলের জোট থেকে কে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাবেন, তা রাষ্ট্রপতিই নির্ধারণ করবেন। এ ধরনের পরিস্থিতি হয়েছিল ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর। তখন রাষ্ট্রপতি নিজের বিবেচনা বোধ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতির পরোক্ষ ক্ষমতা

রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করলে যে কোন বিষয় মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী পেশ করবেন। এই পরোক্ষ ক্ষমতার কথা বলা আছে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের ৫ নম্বর পরিচ্ছেদে। পরোক্ষ ক্ষমতার বিষয়টি দেখলে মনে হবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অনেক, আসলে তা নয়। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ- এদুটি কাজের ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতির কারও পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া রাষ্ট্রপতির কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা নেই।

সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া বাকি সব দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। একই সঙ্গে সংবিধানে এমন শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না, কিংবা পরামর্শ দিয়ে থাকলে তা নিয়ে কোনো আদালত প্রশ্ন তোলা যাবে না। সংবিধান ও অন্য কোন আইনের দ্বারা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া ও অর্পিত সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করবেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত বিষয় রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।

রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও এর সমর্থনে বিভিন্ন সময় বক্তব্য দিয়েছে, কিন্তু তা আলোচনাতেই রয়ে গেছে। কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের দেওয়া যে কোন দণ্ডের মার্জনা বা ক্ষমা করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি যেসব সুবিধা পাবেন

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বেতন এক লাখ ২০ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতিকে মাসের বেতন হিসেবে এ পরিমাণ অর্থ প্রদানের বিধান করা হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের খাবার, আবাসন, চিকিৎসা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সেবা খাতের সব ধরনের ব্যয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবার এবং কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অতিথিদের পানীয় ও তামাকজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ট্যাক্স-ফ্রি কিনতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি অবসরে গেলেও আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত স্টাফসহ অবসর সুবিধা পাবেন।

১৯৭৫ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্রপতির বেতন ভাতা ও সুবিধাদি আইন’ প্রণয়ন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৭৫ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) ১৯৭৫ পাস হয়। এরপর ১০ বার আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। এর আগেও এ সংক্রান্ত আইন থাকলেও সেটি কার্যকর নেই। তার বিস্তারিত সুবিধাদি সম্পর্কেও কিছু জানা যায় না।

১৯৭৫ সালে প্রণীত আইনটি দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সময়ে সময়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বেতন ভাতাটি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে এসব সংশোধনী হয়েছে। মূল আইনটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে—আইনটি প্রণয়নের সময়ে (১৯৭৫ সালে) রাষ্ট্রপতির বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫০০ টাকা। এরপর ১৯৮৭ সালে আড়াই হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা, ১৯৯২ সালে ১৫ হাজার টাকা, ১৯৯৮ সালে ২৩ হাজার টাকা, ২০০৫ সালে ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা, ২০০৯ সালে ৬১ হাজার ২০০ টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে এক লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। অবশ্য বেতন বৃদ্ধির প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক থেকে দেড় বছর আগে ভূতাপেক্ষ হিসেবে কার্যকর ধরা হয়েছে। যেমন, ২০১৬ সালের মে মাসে আইন সংশোধন করে যে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেটি কার্যকর ধরা হয়েছে ১ জুলাই ২০১৫ থেকে। এক্ষেত্রে সরকারের প্রতিটি জাতীয় বেতন স্কেল প্রদানের সময়ের সঙ্গে  মিল রেখেই এটি করা হয়েছে।

সর্বশেষ সংশোধিত দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) আইন ২০১৬ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে— বেতন ভাতা ছাড়াও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আরও অনেক সুবিধা ভোগ করেন। তিনি যে বেতন পান, সেটি সম্পূর্ণ আয়করমুক্ত। রাষ্ট্রপতির মাসে আড়াই হাজার টাকা ছুটি ভাতা পাবেন। এই টাকাও হবে আয়করমুক্ত।

রাষ্ট্রপতির জন্য সরকারি আবাসন ব্যবস্থা থাকবে। এর আসবাবপত্রসহ সুসজ্জিতকরণ ও মেরামতের পুরোটাই সরকার বহন করবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিজের বাড়ি বা ভিন্ন কোনও বাড়িতে অবস্থান করতে চাইলেও সেটিকে সুসজ্জিতসহ উপযুক্তকরণের দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। রাষ্ট্রপতির বাসভবন সংশ্লিষ্ট রাস্তাঘাট মেরামত ও সংস্কারের ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে। অবশ্য আইনে এই সুযোগ থাকলেও জাতির পিতা ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে বসবাস করে আসছেন। রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের খাবার খরচ সরকারকে বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে বাবুর্চি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব ব্যয় সরকারকে করতে হবে। আইনে পরিবারের সদস্য বলতে স্ত্রী-স্বামী, সন্তান, পিতা-মাতা ও অবিবাহিত ভাইবোনকে বোঝানো হয়েছে, যারা তার ওপর নির্ভরশীল।

রাষ্ট্রপতির সরকারি আবাস্থলের টেলিফোন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের সেবা খাতের ব্যয় সরকার বহন করবে। এসব বিল ট্যাক্সেরও আওতায় আসবে না। রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় যানবাহন সরকার নিশ্চিত করবে। রাষ্ট্রপতির সব ধরনের সফর ও সফরকালীন অবস্থানের ব্যয়ও সরকার প্রদান করবে। পরিবহনের জ্বালানি সরকার বহন করবে এবং জ্বালানি হবে ট্যাক্সের আওতামুক্ত। রাষ্ট্রপতি ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেলওয়ে, বিমান ও নৌযানে সর্বোচ্চ সুবিধা সংবলিত আসন পাবেন।

বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে তার বার্ষিক ২৭ লাখ টাকা বিমা কাভারেজ সরকার প্রদান করবে। রাষ্ট্রপতি বা তার পরিবারের সদস্য এবং সরকারি বেসরকারি অতিথিদের জন্য ব্যবহৃত তামাকজাত পণ্যের ওপর কোনও ট্যাক্স আরোপ করা যাবে না। এসব ব্যক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উৎপাদিত পানীয়ও ট্যাক্সের আওতামুক্ত থাকবে।রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে তার প্রয়োজনীয় সব ধরনের অর্থও সরকার বহন করবে। সরকারি কাজে বিদেশ সফরের সময়ে তার সব ধরনের খরচ সরকার প্রদান করবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই খাতের ব্যয় সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বহন করা হয় বলে জানা গেছে।

আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপ্যায়নের সুবিধাদি প্রাপ্য হন। বঙ্গভবনে দেশি-বিদেশি অতিথি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, ইফতার পার্টি, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, বুদ্ধপূর্ণিমা, দুর্গাপূজা, যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন, পহেলা বৈশাখ, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় সরকারের নির্ধারিত এ খাত থেকে বহন করা হয়। রাষ্ট্রপতি কোনও দেশি-বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়ন করলে বা তাদের কোনও ধরনের উপহার দিলে, তার ব্যয়ও সরকারি খাত থেকে করা হয়। রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের আবাসস্থলেও সাধারণ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া দেশের হাসপাতালগুলোতে সরকারি খরচে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতি বছরে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের জন্য স্বেচ্ছাধীন তহবিল পাবেন। সরকারের নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে এটি ব্যয় করবেন রাষ্ট্রপতি। স্বেচ্ছাধীন তহবিলের অর্থ থেকে দরিদ্র, অসচ্ছল, অসহায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। বাস্তব অবস্থা ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রয়োজনের নিরিখে এ খাতে বরাদ্দ রেখে দেশের সমস্যাগ্রস্ত দরিদ্র ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতির এ খাতের ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনও সরকারি অডিট হবে না।

এছাড়া ছয় মাস বা তার অধিক সময়কাল দায়িত্ব পালন শেষে রাষ্ট্রপতি অবসরে গেলেও বেতনের ৭৫ শতাংশ হারে মাসিক অবসর ভাতা পাবেন রাষ্ট্রপতি। এর বাইরেও অবসরকালে একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন অ্যাটেনডেন্টসহ সরকার নির্ধারিত দাফতরিক খরচ পাবেন। পাবেন মন্ত্রীর সমপরিমাণ চিকিৎসা খরচ। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের ক্ষেত্রে পাবেন বাহন ও সরকারি টেলিফোন। ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইনের আওতায় অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিদের এসব সুবিধার বিধান রয়েছে।

রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তি

রাষ্ট্রপতিকে তার দায়িত্বের ব্যাপারে কোন আদালতে জবাবদিহি করতে হবে না। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোন প্রকার ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। তাকে গ্রেপ্তারের বা কারাগারে নেওয়ার জন্য কোন আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা যাবে না।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা

রাষ্ট্রপতি হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ৩৫ বছর, সংবিধানে সর্বোচ্চ বয়সসীমা উল্লেখ নেই। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য যে যোগ্যতা থাকতে হয়, সেই যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে। তবে প্রার্থীর সংসদ সদস্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। কেউ আগে কখনো রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকলে তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। যিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তার উত্তরাধিকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত তিনিই নিজের পদে বহাল থাকবেন। দুই মেয়াদের বেশি কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্ব পালনের সময় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না। কোন সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দিনে সংসদে তার সদস্যপদ শূন্য হবে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া

রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে হয় একজন সংসদ সদস্যকে এবং আরেকজন সংসদ সদস্যকে সেই প্রস্তাব সমর্থন করতে হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তফসিল ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন।

১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি আইন অনুসারে, ইসি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং যাচাই-বাছাই করবে মনোনয়নপত্র। প্রার্থী একজন হলে এবং যাচাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে ইসি। একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে ভোট করতে হবে। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করার বিধান রয়েছে সংবিধানে।

রাষ্ট্রপতির অভিশংসন

পদটি আলংকারিক হলেও একজন রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের ভোট প্রয়োজন হবে। সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত বা অপসারণ করা যাবে। তবে সে জন্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের স্বাক্ষরে অভিযোগের বিবরণ লিখে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে পেশ করতে হবে। স্পিকারের কাছে অভিযোগসম্পর্কিত নোটিশ যেদিন পেশ করা হবে, সেদিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ওই বিষয়ে সংসদে কোনো আলোচনা করা যাবে না। আবার ৩০ দিন পরও বিষয়টি আলোচিত হতে পারবে না। ফলে ১৪ দিন পর এবং ৩০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে হবে। এ সময়ে সংসদ অধিবেশন না থাকলে স্পিকার অবিলম্বে অধিবেশন আহ্বান করবেন।

ভোটের আগে আলোচনা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের একমত হতে হবে যে রাষ্ট্রপতি আইন ভেঙেছেন। এছাড়া অভিযোগ তদন্তের জন্য সংসদ কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিতে পারে। অভিযোগ বিবেচনা করার সময় রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকার বা প্রতিনিধি পাঠানোর অধিকার থাকবে। অভিযোগ বিবেচনার পর সংসদে সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে প্রস্তাব গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হবে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বিএনপি অভিশংসনের উদ্যোগ নিলে তিনি নিজেই পদত্যাগ করেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল না দিতে যাওয়ার কারণ হিসেবে রাষ্ট্রপতিত্ব হারিয়েছেন। বর্তমানে সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে চাইলে যে কাউকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কিংবা অপসারণ ক্ষমতাসীন দলটির জন্য কঠিন কিছু নয়।

রাষ্ট্রপতির অপসারণ

শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তার পদ থেকে অপসারণ করা যাবে। সে জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে কথিত অসামর্থ্যরে বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে পেশ করতে হবে। সংসদ অধিবেশন না থাকিলে নোটিশ পাওয়ামাত্র স্পিকার সংসদের অধিবেশন আহ্বান করবেন এবং একটি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব আহ্বান করবেন।

সংসদের স্পিকার সদস্যদের নোটিশ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দ্রুত রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে ১০ দিনের মধ্যে চিকিৎসক বোর্ডের কাছে স্বাস্থ্য পরীক্ষার অনুরোধ জানাবেন। সদস্যদের নোটিশ পাওয়ার ১৪ দিন পর স্পিকার অধিবেশনে বিষয়টিতে আলোচনার সুযোগ দেবেন। অভিযোগ তদন্ত বা বিবেচনা করার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকার বা প্রতিনিধি পাঠানোর অধিকার থাকবে। দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হবে।

রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অন্য কোন কারণে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত। রাষ্ট্রপতির  অনুপস্থিতিতে  বা অসুস্থ হলেও স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।



বিষয়: #



আর্কাইভ