শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
মঙ্গলবার ● ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » উপকূলবাসীর প্রকৃত বন্ধু হন: কোস্টগার্ডকে প্রধানমন্ত্রী
প্রচ্ছদ » জাতীয় » উপকূলবাসীর প্রকৃত বন্ধু হন: কোস্টগার্ডকে প্রধানমন্ত্রী
২৬৯ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

উপকূলবাসীর প্রকৃত বন্ধু হন: কোস্টগার্ডকে প্রধানমন্ত্রী

---

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমুদ্রে অভিভাবকত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উপকূলবাসীর প্রকৃত বন্ধু হতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের (বিসিজি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে কোস্টগার্ড সদরদপ্তরে বিসিজির ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বিসিজি ডে ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীর মূলমন্ত্র হলো ‘সমুদ্রের অভিভাবক’ যার অর্থ উপকূলবাসীর প্রকৃত বন্ধু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। প্রধানমন্ত্রী অনেক অপরাধমূলক কাজ বন্ধ করে উপকূলের নিরীহ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে কোস্টগার্ড সদস্যদের ব্যাপক প্রশংসা করেন। সরকার তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসহ কোস্টগার্ডকে আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনীতে রূপান্তরে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞানসহ কোস্টগার্ড একটি উন্নত ও শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হোক।

তিনি আরও বলেন, সরকার কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে। এই স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে কোস্টগার্ডের যোগাযোগ পদ্ধতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমরা ডিজিটাল পদ্ধতি (স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন) ব্যবহার করে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি। এসময় প্রধানমন্ত্রী একটি বোতাম টিপে লক্ষ্মীপুরে বিসিজির নবনির্মিত স্থাপনা উদ্বোধন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বিসিজির মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাহিনীতে গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালকসহ বেশ কয়েকজন বিসিজি সদস্যের হাতে পদক তুলে দেন। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে। এছাড়া কোস্টগার্ডের কর্মকাণ্ড নিয়ে তৈরি করা একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও তথ্যচিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।

---

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর ও বহু নদী বরাবর বাংলাদেশের রয়েছে বিস্তীর্ণ উপকূলরেখা।তিনি বলেন, ‘আপনারা বিসিজির সদস্যরা আমাদের ব্যবসা, বাণিজ্য এবং উপকূলীয় এলাকার লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র ও নদীদূষণ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, পণ্য ও আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, মানবপাচার, জলদস্যুতা ও অবৈধ মাছ ধরা প্রতিরোধে কোস্টগার্ড সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বাহিনী ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলীয় অঞ্চলের দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং এভাবে জনগণের আস্থা অর্জন করে তাদের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। প্রধানমন্ত্রী সিলেটের সাম্প্রতিক বন্যায় কোস্টগার্ড সদস্যদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথাও স্মরণ করেন। তিনি চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার ও খাদ্যের অপর্যাপ্ততার কথাও দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন, যেন কোনো সংকট বিশেষ করে খাদ্য ঘাটতি বাংলাদেশে দেখা দিতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন দ্রুগগতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে আঘাত হানে। বিশ্ব অর্থনীতি যখন মহামারির কারণে ঘূর্ণিপাকে তখন রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এটি আবারও বিপর্যস্ত পড়ে। তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে প্রতিটি জিনিসের দাম উর্ধ্বমুখী। তাই আমাদের নতুন নির্মাণসহ প্রত্যেক বিষয়ে কৃচ্ছ্বতা সাধন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে বিসিজি কর্তৃত্বাধীন জমি চাষের পদক্ষেপ নেওয়ায় এই বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার নিজস্ব জনবল নিয়োগ কর্মকাণ্ড ও বাহিনী পুনর্গঠনের মাধ্যমে বিসিজির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এই বাহিনীকে আধুনিক ও শক্তিশালী করতে আমরা উচ্চপ্রযুক্তির জাহাজ, নৌ নজরদারি পদ্ধতি, হোভারক্রাফট ও উচ্চগতির নৌযান চালু করতে যাচ্ছি। এছাড়া, কোস্টগার্ডকে আরও চারটি ওপিভি, গভীর সমুদ্রে টহল দেওয়ার জন্যে নয়টি প্রতিস্থাপনকারী জাহাজ এবং দুটি মেরিটাইম সংস্করণের হেলিকপ্টার নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।


তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন ধরনের জাহাজ, অবকাঠামো নির্মাণ ও কোস্টগার্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ডের কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়।’ তিনি আরও জানান, ২০০৯ সালের পর দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় ও প্রত্যন্ত এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, কর্মকর্তা ও নাবিকদের জন্য ঘাঁটি, অফিসার্স ম্যাচ, নাবিকদের কোয়ার্টার, প্রশাসনিক অবকাঠামো ও কোস্টগার্ড কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। পটুয়াখালী অঞ্চলে ‘বিসিজি বেইজ অগ্রযাত্রা’ নিজস্ব প্রশিক্ষণ ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে কোস্টগার্ড সদস্যদের প্রশিক্ষণ সক্ষমতা জোরদার করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোস্টগার্ডদের বিভিন্ন জাহাজ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ডও নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার কোস্টগার্ডকে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০৩০ ও ২০৪০ সালের মধ্যে এ বাহিনীর দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতি ও গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তা রক্ষায় জাহাজ, সদস্যদের সরঞ্জাম আরও জোরদার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সমুদ্র সম্পদ ও সমুদ্রে দেশবাসীর আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘দি টেরিটরিয়াল ওয়াটারস এবং মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট’ ১৯৭৪ আইন প্রণয়ন করেন। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম এ আইন প্রণয়ন করে।

জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে এ ধরনের আইন প্রণয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ এটিকে আইনে পরিণত না করা পর্যন্ত শুধু এ অঞ্চলে নয় ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও বঙ্গবন্ধুর প্রণীত আইন অনুসরণ করে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক বজায় রেখে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে সমুদ্রে দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এ পরিণত করতে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।



বিষয়: #



আর্কাইভ