শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
বুধবার ● ১ মার্চ ২০২৩
প্রচ্ছদ » গণমাধ্যম » অসঙ্গতিপূর্ণ আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়: বিজেসি
প্রচ্ছদ » গণমাধ্যম » অসঙ্গতিপূর্ণ আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়: বিজেসি
২৭৮ বার পঠিত
বুধবার ● ১ মার্চ ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

অসঙ্গতিপূর্ণ আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়: বিজেসি

---

টিভি চ্যানেলে সুরক্ষা জরিপের তথ্য প্রকাশ

# ৮৮ ভাগ টিভি চ্যানেলে কর্মীদের কোন নিয়োগপত্র দেয়া হয় না

# ৮ ভাগ টিভিতে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হয়

বিশেষ প্রতিনিধি

গণমাধ্যমকর্মী আইনের খসড়া ত্রুটিপূর্ণ মন্তব্য করে ও-ই আইনের আপত্তিকর ধারাগুলো সরকারকে দ্রুত সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার- বিজেসি’র নেতারা। তারা বলেছেন,  অসঙ্গতিপূর্ণ আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি আয়োজিত সেমিনারে তারা এসব মন্তব্য করেন। একই সাথে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার এবং ও-ই আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

---

পরে এসব বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইনের যেসব জায়গায় সাংবাদিকদের আপত্তি আছে সেগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। গণমাধ্যমকর্মী আইনটি এখন সংসদীয় কমিটিতে আছে। আইনটির বেশকিছু ধারা নিয়ে সাংবাদিক মহল আপত্তি তুলেছেন। তাই সেগুলো নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সঙ্গে সাংবাদিক নেতা, মালিক পক্ষ এবং প্রয়োজনে আমি থেকে সবার মতামত নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য আইন করব। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। খসড়া ওই আইনে যেসব সমস্যা রয়েছে সবার মতামত নিয়েই সেগুলো সমাধান করা হবে।’

---

গণমাধ্যমকর্মী আইনে আপত্তির ধারাগুলো সংশোধন করা হবে: আইনমন্ত্রী

সেমিনারে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইনটি আপনাদের সুরক্ষার জন্য করা হচ্ছে। এখন আপনারাই যেহেতু এ আইনের কিছু ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন, সেহেতু এগুলোর নিষ্পত্তি করেই আইন করা হবে। এই আইন তথ্য মন্ত্রণালয় করেছে, তারপরও আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সবার মতামত নিয়ে যেন আইনটি হয়, সেটি করব। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এমনভাবে সংশোধন করেই তা পাস করা হবে। গণমাধ্যম সেক্টর এখন যথেষ্ট পরিণত ও পরিপক্ক। তাই এখানে আইন, রেগুলেটরি বডি করার সময় এসেছে। তাই আমি আপনাদের স্বার্থে আইন করার পক্ষে। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

---

এসময় সমাজে ও রাষ্ট্রে চলমান মিথ্যার সাথে সত্যের যে লড়াই, সেই লড়াইয়ে সরকারকে জয়ী হতে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোদ্ধার ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যম শিল্প এখন অনেকটা প্রফেশনাল হয়েছে। তাই এটিকে নিয়ন্ত্রণে সম্প্রচার আইন প্রয়োজন। আমরাও চাই গণমাধ্যম স্বাধীন থাকুক। তবে আমাদের সাংবাদিকরা যাতে নিরাপদ থাকেন, সেটিও আমাদের অনেক বড় চাওয়া। সরকার সত্য তথ্য প্রকাশের পক্ষে, মিথ্যার বিপক্ষে। আমরা সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ নই, তাদের সহযাত্রী মনে করি। সব ধরনের সমস্যা সমাধানে গণমাধ্যকর্মীরা আমাদের সহযোগী। সত্য উদঘাটনের পাশাপাশি আপনাদের কাছে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা আশা করছি।’

---

আনিসুল হক আরও জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল, সেগুলোর সমাধান করা হচ্ছে। ওই আইনের সমস্যাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চলছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আগের মতো সাংবাদিক হেনস্তা হচ্ছে না বলে দাবি করে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের বাইরে কোন আইন করা সম্ভব নয়। এই আইন সংবাদমাধ্যমের মুখ চেপে ধরার জন্য নয়। এটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্যও করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপব্যবহার করা হয়নি, তা বলবো না। যখন সমস্যা দেখা দিয়েছিল তখন সরকার ব্যবস্থা নিয়েছিল। বর্তমানেও আমরা আবার ব্যবস্থা নিয়েছি। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। বর্তমানে এই আইনে সরাসরি গ্রেপ্তার, হেনস্তা অনেক কমেছে। দুপুর রাতে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার যে প্রবণতা হয়েছিল, এখন আর আগের মতো তা নেই।’

---

অনুষ্ঠানে বিজেসি’র করা ‘সম্প্রচার সাংবাদিকতা সুরক্ষা প্রতিবেদন-২০২৩ হিসেবে প্রকাশ এবং প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে দেশের ২৩টি টেলিভিশন চ্যানেলের কর্মীদের মৌলিক প্রাপ্যতা ও সুরক্ষা নিয়ে করা একটি জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৮৮ ভাগ টিভি চ্যানেলেই কর্মরতদের কোন নিয়োগপত্র দেয়া হয় না, মাত্র ৮ শতাংশ টেলিভিশন স্টেশনে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে কর্মীদের নিয়মিত বেতন পরিশোধ করা হয়। আর উৎসব ভাতা পায় ৫০ শতাংশে। ১৩টি স্টেশন কোন নোটিশ ছাড়াই কর্মী ছাঁটাই করে। ১৮টি টেলিভিশন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হলে ব্যয় বহন করে না। ১১ ভাগ টেলিভিশনে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি দেওয়া হয় না। এছাড়া বেশির ভাগ টেলিভিশনেই কর্মীদের অর্জিত ছুটি দেয়া হয় না।

---

আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও অ্যাটকোর ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, করোনায় যখন সব স্থবির ছিল তখন স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংবাদকর্মীরা অগ্রভাগে কাজ করেছে। যারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন। সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো ঠিক করা, সুযোগ-সুবিধা ঠিক করা প্রয়োজন। এসময় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার রায় এখনো হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৯৫ বারের মতো পেছানো হয়েছে ওই মামলার তদন্তের রিপোর্টের তারিখ। এটি বার বার পেছানো দেশের জন্য লজ্জার। এই রায় দ্রুত দেওয়ার আশা প্রকাশ করছি। একই সাথে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এর অপব্যবহার বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।

ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া। এসময় বিজেসির সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, রাশেদ আহমেদ ও জুলহাস নূরসহ বিজেসির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

---

সেমিনারে ঘোষণা করা হয়, বিজেসি ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য প্রয়াত মোহাম্মদ শাহ আলমগীরের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে এবছর থেকেই একটি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে। এবছর সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য আগামী ৪ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠান করে ‘শাহ আলমগীর এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ নামে একজন সাংবাদিককে এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে।



বিষয়: #



আর্কাইভ