মঙ্গলবার ● ২৮ মার্চ ২০২৩
প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকার তৎপর: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকার তৎপর: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশ নারীরা ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়েছে। তাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। তবে উন্নয়ন তরান্বিত ও সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টার্স্কফোর্স প্রণয়নের ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে। নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকার তৎপর রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সেগুনবাগিচায় সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে ‘তথ্য প্রযুক্তিতে নারীর অভিগম্যতা ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি’ বিষয়ক প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নারীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রেজাল্ট বেসড মূল্যায়ন বাজেটে করা হয় ৮১টি ইন্ডিকেটরের মাধ্যমে। সামষ্টিক অর্থে জেন্ডার বাজেট শুরু হয় ৪টি মন্ত্রণালয় নিয়ে ২০০৯ সালে। শুরু হওয়ার পর ৪৪ টি মন্ত্রণালয় নিয়ে তার ক্ষেত্র বর্ধিত হয়। নানাবিধ সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে প্রদত্ত বাজেট পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা যায় না বলেও উল্লেখ করে সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রতিমন্ত্রী।
স্বাগত বক্তব্যে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে মূলধারায় নারীর সম্পৃক্তকরণের জন্য সংগঠন দীর্ঘদিন আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সরকার জেন্ডার বাজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। এসডিজির ৫নং লক্ষ্য নারীর ক্ষমতায়নকে তরান্বিত করতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নারীর চাহিদা ও প্রয়োজনকে বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ টেকসই করতে হলে নারী সমাজের দক্ষতাকে কাজে লাগানো এবং নারীবান্ধব তথ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবনের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে নারীর অভিগম্যতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী। প্রতিবেদনে তিনি দেশের পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীসহ সকলে এই সেবার অন্তর্ভূক্ত করার তাগিদ দেন। নারীর নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান, বিভিন্ন সেবায় অভিগম্যতাকে গুরুত্ব দেয়ার সুপারিশ করেন। মোবাইল ব্যবহারে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও ইন্টারনেট ব্যবহারে বড় ধরনের জেন্ডার গ্যাপ আছে। ডিজিটাল অভিগম্যতা মৌলিক মানবাধিকারের একটি অংশ। আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭তম। বর্তমানে নারীর কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণের হার ৩৬%। জেন্ডার বাজেটিং টাস্কসফোর্সের মাধ্যমে রেজাল্ট বেসজ বাজেট মূল্যায়নের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
আলোচনায় সংসদ সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রুমানা আলী বলেন, গবেষণার চিত্রের চেয়ে তারা যারা ঘরে ঘরে যেয়ে কাজ করেন তাদের কাছে চিত্র একটু ব্যতিক্রম। তিনি গ্রামের নারীরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিজের আয়ের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে বলে মন্তব্য করেন। নারীর অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে সচেতনতা তৈরির ওপর তিনি জোর দেন।
বেসিস এর সাবেক সহ-সভাপতি এবং ই্উ ওয়াই সিষ্টেম লিমিটেড এর সিইও ও চেয়ার ফারহানা আনোয়ারা রহমান বলেন, উদ্যোক্তাদের প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করলে বাজেটে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীর সংখ্যা কম। সাইবার সিকিউরিটিতে নারীর হয়রানি প্রতিরোধের সেবা তরান্বিত ও সহজ করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে, সচেতনতার জন্য আলাদা বরাদ্দ দিতে হবে বাজেটে, কেন একজন উদ্যোক্তা সহজে লোন সুবধিা পায় না তার গবেষণা করতে হবে। একসেস টু ফাইনান্সে কেন নারী পিছিয়ে যাচ্ছে তা গবেষণার উদ্যোগ নিতে হবে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, সম্পত্তিতে নারীর সমানাধিকার থাকতে হবে। ভিয়েতনাম অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষার উন্নয়নে জোর দেয়া আমাদের জন্য একটা শিক্ষা। বাংলাদেশে প্রযুক্তিতে নারী পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিতে বাজেটে বরাদ্দ থাকতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটের মত প্রকৃত বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা করলে জনগণও এই বিষয়ে অবহিত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আজকে সমাজের রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের জন্য নারীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যে কোনো নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারীকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতীয় বাজেট একটি অর্থনৈতিক দলিল যা সামাজিক অগ্রগতির লক্ষ্যে তৈরি হয়। যা রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের মাধ্যমে অর্জিত হবে।
সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকণ্ডলী, গণসাক্ষরতা অভিযান এবং বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।
বিষয়: #নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকার তৎপর