বুধবার ● ২৯ মার্চ ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » সত্তরের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী
সত্তরের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী
বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের কিংবদন্তি ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৪০ সালের ২৬ মে যশোরের ঝিনাইদহ মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন। এরপর তার বাবা ঝিনাইদহের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসতে শুরু করেন।
ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছেড়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হোন। কিন্তু সে সময়ের ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষ সরাসরি পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি এবং শিক্ষা আন্দোলনে জড়িত থাকায় তাকে ঢাকা কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়ে পুনরায় সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। এরপর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন নূরে আলম সিদ্দিকী।
তিনি ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন ও বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রেখে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হোন। ওই সময় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কও নির্বাচিত হোন নূরে আলম সিদ্দিকী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর ভিপি পদেও নির্বাচিত হন। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর চার খলিফার জ্যেষ্ঠজন হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধে ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মুজিব বাহিনীর অন্যতম কর্ণধার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চার খলিফার একজন হিসেবে তাকে উল্লেখ করা হয়।
ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী নির্বাচনি প্রচারণা চালান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠা ও তার রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মূল্যায়নে নূরে আলম সিদ্দিকী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতার প্রশ্নে আপসহীনতাই শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু করেছে। বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে অবিচল থাকায় তিনি হয়েছেন জাতির জনক। তার রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা, নিজস্ব মতামতের ওপর শ্রদ্ধা এবং তা বাস্তবায়নে সংগ্রামই সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের ছাড়িয়ে তিনি হয়েছেন বাঙালির অবিসংবাদিত মহানায়ক, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক।’
দেশ স্বাধীনের পর তিনি ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। তবে ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-২ আসনে পরাজিত হন। এরপর থেকে দলীয় সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান।
ছয় দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ, এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা পালনসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি সক্রিয় ভূমিকা ও অবদান রাখেন। নূরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহচর ও আজীবন অনুগত। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে ১৩ বছরের কারাবাস জীবনের বিভিন্ন মেয়াদে তারা একসাথে কারাবন্দি ছিলেন।
সত্তরের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন অত্যন্ত সুবক্তা ও সুলেখক। বিভিন্ন গণমাধ্যমের টকশোতে আলোচনায় অংশ নিতেন, মাঝেমধ্যে পত্রিকায় কলামও লিখতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণমাধ্যমে লেখার সাথে যুক্ত ছিলেন।
বিষয়: #সত্তরের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী