শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
বৃহস্পতিবার ● ২৫ মে ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট আজ
প্রচ্ছদ » জাতীয় » গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট আজ
১৬৪ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২৫ মে ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট আজ

---

শাহনাজ পারভীন এলিস

রাত পোহালেই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ৮টা থেকে টানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন সিসিটিভির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে এই নির্বাচন মনিটর করবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই সিটি নির্বাচনকে অনেকে নির্বাচন কমিশনের জন্য এসিড টেস্ট হিসেবে দেখছেন। কমিশনও এই নির্বাচনকে সংসদ নির্বাচনের স্টেজ রিহার্সেল মনে করছে। তারা সিটির ভোট সুষ্ঠু করে আগাম পরীক্ষা দিতে চায়। বিষয়টি বিবেচনা করে গাজীপুরসহ ৫ সিটি করপোরেশনের ভোটকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আয়তনের দিক থেকে দেশের বৃহৎ এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন তার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রিসাইডিং অফিসাররা নির্বাচনি সামগ্রী নিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য। তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনি এলাকায় টহল দিতে শুরু করেছে।

নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। জায়েদা খাতুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় থেকে সদস্য পদত্যাগ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা। মা প্রার্থী হলেও তার নির্বাচনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন ছেলে জাহাঙ্গীর।

আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম দিকে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির হাতে সবচেয়ে বড় ভোট হচ্ছে গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। তিন দফায় এই ৫ সিটির ভোটে হবে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় হচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দ্বিতীয় দফায় আগামী ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং তৃতীয় দফায় রাজশাহী ও সিলেট সিটির ভোট হবে ২১ জুন। গত ৩ এপ্রিল এই ৫ সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।

সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস আগে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকার পরিষদের এই ভোটকে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশবাসী গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও এই ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেছে খোদ ইসি।

অল্প সময়ের ব্যবধানে অনুষ্ঠেয় ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের অধীনে সবচেয়ে বড় ভোটও বটে। বর্তমান কমিশন এর আগে বড় ভোট বলতে কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। এছাড়া তারা ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার পরিষদের কিছু ভোট এবং বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ৬টিসহ ৯টির মতো সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন করেছে। অবশ্য এর মধ্যে অনিয়মের কারণে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বাতিল করে ব্যাপক আলোচনায় আসে ইসি।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত এই ৫ সিটির ভোটে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ নেওয়ার কারণে তখন নির্বাচনগুলোর ওপর দেশবাসীর যতটা আগ্রহ ছিল, এবার ততটা দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত সব ধরনের নির্বাচন শুরু থেকেই বর্জন করে আসছে। অবশ্য কিছু নির্বাচনে দল-সমর্থিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে বুধবার (২৪ মে) গাজীপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনসহ সব বাহিনী মিলে সিটি নির্বাচনকে সফল করার জন্য কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনসহ সবার একটাই চাওয়া—যেন কমিশনকে সহযোগিতা করে। সবার সহযোগিতায় আমরা যেন গাজীপুরে ‘মডেল নির্বাচন’ জাতিকে উপহার দিতে পারি। সিটি নির্বাচনে পাঁচ স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে গাজীপুরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।’’

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে সুষ্ঠু, সুন্দর একটি নির্বাচন করতে চান দাবি করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে চাই সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মাধ্যমে যেন গাজীপুরের সিটির জনগণকে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট উপহার দিতে পারি, সেটা নিশ্চিত করবো।’

মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জনগণ আসবে, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট দিয়ে যেন চলে যেতে পারে। পুরো গাজীপুরসহ সারা বিশ্বের লোকজন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, আমরা দেখিয়ে দিতে চাই।’

এর আগে গাজীপুরে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ও সংস্থাগুলো গাজীপুরের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে—এ নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। সমগ্র জাতি, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশ, যারা তাকিয়ে থাকবে আপনাদের দিকে, ভোটারদের দিকে এবং প্রার্থীদের দিকে। আমাদের দিকে কেউ তাকাবে না। জেলা প্রশাসন, পুলিশের দিকেও কেউ তাকাবে না।’

সিটি নির্বাচনকে গাজীপুরের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্টেজ রিহার্সেল বলেও মন্তব্য করেন এই কমিশনার।

মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘সরকার এই নির্বাচনে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন কীভাবে হয়, তা দেখিয়ে দেবো। আগামী জাতীয় নির্বাচনও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুরোধ করবো, আপনারা আসুন, দেখুন কেমন নির্বাচন হয়।’

এদিকে গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। গত ২২ মে গাজীপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি অভিযোগ করে বলে যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনই ক্ষমতাসীন দলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন। গণসংযোগের সময় জায়েদা খাতুনের গাড়িতে একাধিকবার হামলার অভিযোগ উঠেছে। ফলে অন্য প্রার্থীদের প্রতি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ নিয়ে সন্দেহ, সংশয় ও শঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভোটার ও কেন্দ্রের তথ্য

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী এবং ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি। সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত ৮টি থানার মধ্যে কাশিমপুর থানায় ৪৭টি, কোনাবাড়ি থানায় ৪৩টি, বাসন থানায় ৪২টি, সদর থানায় ৪৬টি, গাছা থানায় ৫৭টি, পূবাইল থানায় ৩২টি, টঙ্গী পূর্ব থানায় ১১১টি এবং টঙ্গী পশ্চিম থানায় ৫২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।

প্রার্থীদের তথ্য

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩৩৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অবশ্য ত্রাস সৃষ্টি ভীতি প্রদর্শনের দায়ে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আজিজুর রহমানের প্রার্থিতা বুধবার বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশনার।

মেয়র পদে প্রার্থীরা হচ্ছেন—আতিকুল ইসলাম (গণফ্রন্ট-মাছ), অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান (আওয়ামী লীগ-নৌকা), এম এম নিয়াজ উদ্দিন (জাতীয় পার্টি-লাঙ্গল), গাজী আতাউর রহমান (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-হাতপাখা), জায়েদা খাতুন (স্বতন্ত্র-টেবিলঘড়ি), মো. রাজু আহম্মেদ (জাকের পার্টি-গোলাপ ফুল), মো. হারুন-অর-রশীদ (স্বতন্ত্র-ঘোড়া) এবং সরকার শাহনুর ইসলাম (স্বতন্ত্র-হাতি)

আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের ‘আইডিয়া প্রকল্পে’র প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েমের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এতে সরকারের জননিরাপত্তা বিভাগ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, বিজিবি, র‌্যাব ও আর্মড পুলিশের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। তারা আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে এই নির্বাচন মনিটর করবেন।

ভোটের সামগ্রী বিতরণ

৫টি জায়গা থেকে ভোটের আগের দিন বুধবার (২৪ মে) গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৮০টি কেন্দ্রের নির্বাচন সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে গাজীপুর সিটির ধীরাশ্রম জিকে হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১২০টি কেন্দ্রের, চান্দনা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১১৫টি কেন্দ্রের, দারুস সালাম মাদ্রাসা থেকে ৫৮টি কেন্দ্রের, আজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৬৮টি কেন্দ্রের এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১৯টি কেন্দ্রের নির্বাচনি সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। এদিন দুপুরের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসাররা উপস্থিত হয়ে এসব সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। পরে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ভোটগ্রহণকারী অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে নিজ নিজ নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে মোট ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি কেন্দ্র অতি গুরুত্বপূর্ণ। সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭ জন ম্যাজিস্ট্রেটসহ মোট ৭৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া র‌্যাবের ৩০টি টিম এবং ১৩ প্লাটুন বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর  প্রায় ১৩ হাজার সদস্য এই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে ৫৭টি মোবাইল ফোর্স, প্রতি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে ১৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতিটি থানায় একটি করে ৮টি রিজার্ভ ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে চার জন সশস্ত্র  পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন করে সদস্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারী ৫ জন পুলিশ সদস্যসহ ১৭ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।



বিষয়: #



আর্কাইভ