শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১
Swadeshvumi
বুধবার ● ৩১ মে ২০২৩
প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় ও বিপনণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা খুব জরুরি
প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় ও বিপনণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা খুব জরুরি
৬০৯ বার পঠিত
বুধবার ● ৩১ মে ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় ও বিপনণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা খুব জরুরি

---

সুব্রত বিশ্বাস (শুভ্র)

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আজ। প্রতি বছর ৩১ মে বিশ্বজুড়ে এই দিবসটি পালন করা হয়। তামাক সেবনের সমস্ত প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে উৎসাহ প্রদান করার উদ্দেশ্যে দিবসটি সারা বিশ্বব্যাপী পালীত হয়ে আসছে। এছাড়াও দিবসটির উদ্দেশ্য তামাক ব্যবহারের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এবং মানব স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাবের উপর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করানো। প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিবসটির একটা প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করেন। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘‘We need food, not tobacco ”।

বিশ্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে জোরালো করতে ১৯৮৭ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে বছরের একটি দিন বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস হিসাবে উৎযাপন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রথম বছর ১৯৮৮ সালের ৭ এপ্রিল  বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপিত হলেও একই বছরের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলেনে ৩১ মে তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ১৯৮৯ সাল থেকে সমস্ত পৃথিবীতে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।

তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে জনসচেতনতা বাড়াতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারীভাবে ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালন করা হয়। কিন্তু সরকারীভাবে এখনো জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন করা হয় না। উল্লেখ্য ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে জামাক বিরোধী জোট দেশব্যাপী জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন করে আসছে। সারাদেশে বিগত বছরগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রনে কর্মরত সংগঠনগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন, কর বৃদ্ধি, ধূমপানমুক্ত স্থান বৃদ্ধি, প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান, তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রধান্য দিয়ে সভা, সেমিনার, অবস্থান কর্মসূচি, র‌্যালী সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে আসছে।

তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার দিনকে দিন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে। তামাকের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার, মুখ গহবরের ক্যান্সার, ডায়াবেটিকস্, এজমাসহ নানা রোগ বাড়ছে। এসব রোগ প্রাণঘাতী, চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী। এরপরও দেশের প্রায় ৪৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। যার মধ্যে কিছু শতাংশ ধূমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করে এবং কিছু শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে। তবে সমীক্ষায় দেখা গেছে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি। ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য যেমন-জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদিও ফুসফুসের অপূরণীয় ক্ষতি করে। এর মধ্যে অতি ৩০ ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক রয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ ধরনের নাইট্রোস্যামিন পাওয়া যায়, যা ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে প্রমানিত হয়েছে। ফুসফুস ছাড়াও মুখগহবর, গলনালী এবং পাকস্থলী ক্যান্সারের জন্যও দায়ী এই ধোঁয়াবিহীন তামাক।

বাংলাদেশে সবচেয়ে কম মূল্যে তামাকজাত দ্রব্য কিনতে পাওয়া যায়। ফলে দরিদ্যদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার বেশি। এজন্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তামাকের প্রভাব অত্যান্ত নেতিবাচক। সবরকম তামাকজাত পণ্য থেকে সরকার যে পরিমান রাজস্ব আয় করে তার দ্বিগুনের বেশি অর্থ তামাকজাত রোগের চিকিৎসায় স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করতে হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে হৃদরোগ জনিত মৃত্যুর প্রায় ১২ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক ব্যবহার এবং পরোক্ষ ধূমপান। হ্রদরোগের কারণ হিসাবে উচ্চ রক্তচাপের পরেই তামাক ব্যবহারের অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দ্য ইন্সটিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)- এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০০৫ থেকে ২০১৬ সময়কালে বাংলাদেশে অকাল মৃত্যুর কারণের তালিকায় হৃদরোগ ৭ম স্থান থেকে ১ম স্থানে উঠে এসেছে এবং এই পরিবর্তণের হার প্রায় ৫৩ শতাংশ। আর এই মৃত্যুও জন্য দায়ি হিসাবে তামাকের অবস্থান চতুর্থ।

ধূমপান শুধু ব্যবহারকারীদের ক্ষতিগ্রস্থ করে না, উপরন্ত যারা তাদের আসে পাশে থাকে তারাও এর ক্ষতির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে না। তারা না চাইলেও পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হচ্ছে, স্বাস্থের ক্ষতি হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপান সংক্রামক এবং অসংক্রামক উভয় রোগ সৃষ্টি করে। বিশেষভাবে শিশু, নারী ও নারীর গর্ভের সন্তান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বর্তমানে দেশে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে যে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তার কারণে মানণীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দক্ষিন এশীয় স্পীকারদের সম্মেলনে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষনা দেন।

তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে তামাকজাক দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা জানি সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স প্রদান করে থাকে তাদের আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করে। বর্তমানে দেখা যায় মুদি দোকান থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় হচ্ছে। যখন একটি লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে তখন সুনির্দিষ্টভাবে কোন ব্যবসার লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে সেটা উল্লেখ করা থাকে। তাই মুদি দোকানের জন্য লাইসেন্স নিয়ে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে পারে না। এক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন ঘটে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যদি তার আওতাধীন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশণা প্রদান করে যে, তারা যে লাইসেন্স গুলি প্রদান করেছে তা সঠিকভাবে তদারকির জন্য। তাহলে তামাকজাত দ্রব্য যত্রতত্র বিক্রয় অনেকাংশে কমে আসবে।

তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে ও বিপনণের জন্য বাংলাদেশে কোন সুনির্দিস্ট নীতিমালা নেই। এমনকি তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের সাথে সম্পৃক্তদের নির্ধারিত কোন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহনের ব্যবস্থা নাই। যে কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকা, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খাবারের দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্নস্থানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে তামাকজাত পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। সহজ লভ্যতা ও সহজ প্রাপ্যতার কারণে যত্রতত্র তামাকজাত পণ্যের বিপণন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। উৎকন্ঠার বিষয় এ সকল দোকানের সংখ্যা দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এর বিক্রয়ে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা প্রনয়ণ করে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এবারের মতো বিড়ি, সিগারেটসহ সব ধরনের তামাক কোম্পানীর পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি বন্ধ না হলেও ভবিষ্যতে একদিন বাংলাদেশে সকল ধরণের তামাকজাত পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন বন্ধ হবে বলে আমরা আশাবাদী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে ঘোষনা দিযেছেন তা বাস্তবায়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

লেখক: সমন্বয়ক, মিডিয়া সেল টু ভাইস-চ্যান্সেলর এবং 

কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বিএসএমএমইউ



বিষয়: #



অর্থনীতি এর আরও খবর

আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর
১৩ দিনে ই-কমার্সের ক্ষতি ১৭শ’ কোটি টাকা : ই-ক্যাব ১৩ দিনে ই-কমার্সের ক্ষতি ১৭শ’ কোটি টাকা : ই-ক্যাব
গ্রামে বসেই পাওয়া যাবে বিডিটিকেটস-এর দূরপাল্লার বাসের টিকেট গ্রামে বসেই পাওয়া যাবে বিডিটিকেটস-এর দূরপাল্লার বাসের টিকেট
দারুণ অফারসহ ভিভোর নতুন স্মার্টফোন ভিভো ওয়াই১৮ দারুণ অফারসহ ভিভোর নতুন স্মার্টফোন ভিভো ওয়াই১৮
ঢাকাপ্রকাশ ও ইমপ্যাক্ট এশিয়ার সমঝোতা স্মারক ঢাকাপ্রকাশ ও ইমপ্যাক্ট এশিয়ার সমঝোতা স্মারক
বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও বীমা খাত একই সূত্রে গাঁথা বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও বীমা খাত একই সূত্রে গাঁথা
ই-কমার্স তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে : স্পিকার ই-কমার্স তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে : স্পিকার
প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফির জন্য ভিভো ভি২৯ ও ভি২৯ই প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফির জন্য ভিভো ভি২৯ ও ভি২৯ই
এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে আজ ভোটগ্রহণ এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে আজ ভোটগ্রহণ
কাগজবিহীন আন্তঃবাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: থাইল্যান্ডে বাণিজ্য সচিব কাগজবিহীন আন্তঃবাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: থাইল্যান্ডে বাণিজ্য সচিব

আর্কাইভ