বৃহস্পতিবার ● ১৭ আগস্ট ২০২৩
প্রচ্ছদ » অপরাধ » ডিডস হামলাম শিকার ৬ প্রতিষ্ঠানের সাইট
ডিডস হামলাম শিকার ৬ প্রতিষ্ঠানের সাইট
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের ৬টি প্রতিষ্ঠানে সাইবার (ডিডস) হামলার খবর নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিম বা বিজিডি ই-গভ সার্ট। তবে হ্যাকার গোষ্ঠীর আগাম হামলার খবরে গতকাল ১৫ আগস্ট ও-ই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ রাখায় কোন ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি।
এ বিষয়ে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিজিডি ই–গভ সার্ট-এর পরিচালক সাইফুল আলম। তিনি বলেন, ‘সাইবার হামলার বিষয়ে আমরা সব প্রতিষ্ঠানকে আগেই সতর্ক করেছিলাম। এখন পর্যন্ত ৬টি প্রতিষ্ঠানে অ্যাটাকের খবর পাওয়া গেছে। সাইবার হামলার মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশন তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সার্ভার বন্ধ রেখেছিল। অথচ এর আগে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার নিরাপত্তার ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দিত না।
তিনি আরও জানান, হ্যাকার গোষ্ঠী ২০ থেকে ২৫টি প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার দাবি করলেও আসলে ছয়টি প্রতিষ্ঠানে ডিডস হামলা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের ওয়েবসাইট পুনরায় ঠিক করে ফেলেছে। গুরুতর কিছু ঘটেনি। তবে হামলা শিকার প্রতিষ্ঠানের নাম তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। তবে কোন হ্যাক্যার গোষ্ঠী এই দাবি করেছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি কেউ। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাইবার হামলার তথ্য সঠিক নয়। মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠানে ডিডস (ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়েল অব সার্ভিস) হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটি সাইবার হামলার পর্যায়ে পড়ে না। এমন ঘটনায় শুধু হামলার শিকার ওয়েবাইটগুলোতে প্রবেশ করা যায় না।
হ্যাকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক প্রোগ্রামার বলেন, ‘এ ধরনের সাইবার (ডিডস) হামলার কোন ওয়েবসাইটে একসঙ্গে একাধিক ডিভাইসের মাধ্যমে ট্রাফিক পাঠিয়ে ওই সাইটের গতি ধীর বা ডাউন করে দেওয়াকে ডিডস (ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়েল অব সার্ভিস) আক্রমণ বলা হয়। এ ধরনের আক্রমণ হলে সংশ্লিষ্ট সাইটে প্রবেশ করা যায় না। কোন হ্যাকার গোষ্ঠী এই হামলা করলে তাদের নাম প্রকাশ্যে আসতো। আমরা এখনো জানি না কারা এই দাবি করেছে। আবার এমন একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা নিজেরাই হয়তো ডিডস হামলা করে বাংলাদেশের হ্যাকার গোষ্ঠীকে ভারতের বিপক্ষে ক্ষেপিয়ে তোলার অপচেষ্টা করছে।’
এ বিষয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ওয়েবসাইট তাদের সার্ভিসগুলো বন্ধ করে রেখেছে। যে কারণে কোথাও কোন হামলা হয়নি। আমার জানা মতে, দেশের কোন সাইটে হামলা হয়নি। ১৫ আগস্ট হামলা হওয়ার কথা থাকলেও সেদিনই হবে- বিষয়টি ঠিক নয়।’
১৫ আগস্টের মধ্যে দেশে বড়ধরনের সাইবার হামলার আশঙ্কা করেছিল সরকার। সেজন্য দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিম বা বিজিডি ই-গভ সার্ট এ সংক্রান্ত অ্যালার্ট জারি করে।
এই ঘটনার পর গত ৯ জুলাই আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সরকারি সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা দুর্বলতার কথার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, ই-মেইল করা হয়। দুঃখজনকভাবে কেউ কেউ জবাব দেয় না। নির্দেশনা অনুসরণ করে না। বিজিডি ই-গভ সার্টের ‘বাংলাদেশ সাইবার থ্রেট ল্যান্ডস্কেপ রিপোর্ট ২০২২–এ বলা হয়েছে, দেশে সাইবার হামলা বা হামলার চেষ্টার ঘটনাগুলোর মধ্যে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ ঘটছে দুর্বল পরিকাঠামোর কারণে।
দেশের আইসিটি খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইসিটি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) আওতাধীন বিজিডি ই-গভ সার্ট নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনেই সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে অ্যালার্ট জারি করা হয়। বিজিডি ই-গভ সার্টের প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম খান সেসময় জানিয়েছিলেন, ‘১ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে দেশে সাইবার হামলার আশঙ্কা রয়েছে। আজ আমরা সেই অ্যালার্ট দিয়েছি।’ ভারতীয় হ্যাকারদের দলটি ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে সাইবার হামলার হুমকি দিলে দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়।
এ ঘটনার পর সাইবার হামলার আশংকায় নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারটি মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে বন্ধ করে দেয়। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষে বুধবার (১৬ আগস্ট) তা খুলে পুনরায় খুলে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার বা সার্ভারে সাইবার হামলার কোন আলামত পাওয়া যায়নি।
ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রায় ১০ হাজার বিনিয়োগকারী এবং বিনিয়োগ আবেদনকারীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। যার মধ্যে বিনিয়োগকারীদের নাম, ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ও সরকারের মিউচুয়াল ফান্ডের তথ্য রয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে আদায় করা রাজস্বের পরিসংখ্যান ফাঁস হয়েছে।
তারা দাবি করে ,বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪০ হাজার রেকর্ডেট তথ্য তাদের দখলে রয়েছে। এছাড়াও ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি কর পোর্টাল, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, কয়েকটি ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও টিকেটিং ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। সাইবার হামালার আশঙ্কা থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর সহায়তায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাংকগুলো সতর্ক অবস্থানে ছিলো বলে জানায় র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খোন্দকার আল মইন।
বিজিডি ই-গভ সার্ট তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সাইবার নিরাপত্তা প্রকল্প নিয়ে কাজ করে থাকে। দুই মাসের ব্যবধানে দেশের সাইবার জগতে দ্বিতীয়বারের মতো হামলায় তথ্য নিরাপত্তার বিষয়টি আবারও সামনে চলে এসেছে। এর আগে সাইবার হামালার প্রথম ঘটনাটি ঘটে গত ২০ জুন।
বিষয়: #ডিডস হামলাম শিকার ৬ প্রতিষ্ঠানের সাইট