বৃহস্পতিবার ● ২০ অক্টোবর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » গাইবান্ধা-৫ এর ভোটে অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে ইসি
গাইবান্ধা-৫ এর ভোটে অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে ইসি
# ঘটনা অনুসন্ধানে গাইবান্ধায় শুনানি শুরু করেছে ইসির তদন্ত কমিটি
বিশেষ প্রতিনিধি
গাইবান্ধার উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনবে নির্বাচন কমিশন। একই সাথে কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হবে। গতকাল বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর। এদিকে বন্ধ ঘোষিত গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে শুনানি শুরু করেছে ইসির গঠিত তদন্ত কমিটি।
ইসি আলমগীর জানান, এজন্য ঘটনা তদন্তে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্তে যারা কথা শোনেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পুরো এখতিয়ার ইসির রয়েছে। যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় তারা স্বেচ্ছায়, স্বউদ্যোগে এগুলো করেছে, একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুযোগ ছিল তারা নেয়নি- তাহলে তাদের চাকরিচ্যুত থেকে শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে- আমরা দুই মাস পর্যন্ত সাসপেন্ড করতে পারি। আর আইন যেটা বলে, আমরা যে শাস্তির সুপারিশ করবো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করে আমাদের জানাবে। আমরা বললে তারা করলেন বা করলেন না তা নয়। বাস্তবায়ন না করলে সেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারি। কার কেমন অপরাধ সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০, ৩০, ৪০ জন কর্মকর্তা একই অপরাধ করলে কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে সংখ্যা বিষয় নয়। বিষয়টি হলো তিনি অপরাধ করেছেন কিনা। আমাদের কাছে সব ডকুমেন্ট আছে। সব ভিডিও আছে। কিন্তু কেন করলো সেটা কিন্তু বের করতে হবে। খুন করলেই তো ফাঁসি দেন না জজ সাহেব। এটার প্রক্রিয়া আছে তো। তাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই সিদ্ধান্ত হবে।
মোহাম্মদ আলমগীর আরও বলেন, আমাদের আইন, ডিজিটাল যুগের সুবিধা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগের কমিশন কী করেছেন সেটা নিয়ে বলবো না। আমরা আইসিটির সুবিধাটা নিয়েছি। সিসি টিভির মাধ্যমে আমরা নিজেরাই দেখলাম। এখন তারা স্বেচ্ছায় (অনিয়ম) করেছে নাকি চাপের মুখে করেছে এটাই দেখার বিষয়। এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে যেহেতু নিজেরাই আমরা অনিয়ম দেখেছি, তার অর্থ বাকিগুলোতেও যে শৃঙ্খলা ছিল তা নয়। অপরাধের মাত্রা দেখে শাস্তির সিদ্ধান্ত হবো।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ইসি আল বলেন, মাঠ কর্মকর্তাদের ওপর আস্থাহীনতার কারণেই সিসি ক্যামেরা বিষয় এমন নয়। টিমের সবাই তো খারাপ না। দু’একজন হতে পারে। আমাদের ওপর যেমন তাদের আস্থা আছে, আমাদেরও তাদের ওপর আছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও তো একই ডিসি, একই এসপি, একই ভোটকর্মরত দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে তো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কাজেই একটা খারাপ হলে যে আরেকটা খারাপ হবে তা নয়।
গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের পুরো বিষয়টি তুলে ধরে মো. আলমগীর বলেন, আমরা দেখেছি যে অভিযোগটা আছে- অন্য কেউ ইভিএমে ভোটটা গোপন কক্ষে দিয়ে যায়। কুমিল্লায়, ঝিনাইদহে এটা আমরা দেখিনি। মেহেরপুরেও দেখিনি। কিন্তু গাইবান্ধায় ভোট শুরুর পরপরই তিনটা কক্ষে দেখি যে এজেন্টরা গোপন কক্ষে গিয়ে চাপ দিয়ে দেন। আমরা ক্যামেরায় দেখে প্রিজাইডিং অফিসারকে ফোন করি। আমরা পেছনে দেখতে বলি উনি কেন জানি সামনের দিকে যান। যখন ডানে যেতে বলি উনি তখন উনি বামে যাচ্ছেন। এটা আমাদের কাছে আশ্চর্য লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা তাকে (পগাপন কক্ষের অবৈধ ব্যক্তি) আইনে সোপর্দ করতে বলি, উনি (প্রিজাইডিং কর্মকর্তা) তাও করলেন না। পরপর তিনটা কেন্দ্রে এমন হলো। তারা কোনো ব্যবস্থাও নিলেন না এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তাও নিলেন না। এরপর কেন্দ্র তিনটি বন্ধ করলাম। এবং অন্যান্য কেন্দ্রের পরিস্থিতিও সিসি ক্যামেরায় দেখা শুরু করলাম। তখন যেটাই দেখি, দেখি একই অবস্থা। একই দৃশ্য। এরপর মাননীয় সিইসি ডিসি-এসপির সঙ্গে কথা বললেন। অতিসত্তর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বললেন। আমরা সোয়া ১২টা পর্যন্ত দেখলাম। এখন চোখের সামনে যেহেতু আমরা দেখেছি সিসি ক্যামেরায় বড় পর্দায় সবার সামনে, তখন তো আমরা বলতে পারি না আর্থিক অনটন কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা যেতে পারে। এটার কোনো সুযোগ আছে? যেহেতু সুযোগ নেই, আইন অনুযায়ী যা করা উচিত সে সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
অনেক কর্মকর্তা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে লিখিত দিয়েছেন, তাদের বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য দেওয়ার একটা ফরম আছে। আমাদের কাছে কিছু পাঠায়নি। কার কাছে কী দিয়েছে সেটা আমরা জানি না। আইনগতভাবে এটা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে কে দিল, কাকে দিল। এরপর আমরা দেখবো। ন্যায় করলে তো সমস্যা নেই, অন্যায় করলে তো সমস্যা হতে পারে।
গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। একটি কেন্দ্র বন্ধ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। মোট ৫১টি কেন্দ্র দুপুরের মধ্যেই বন্ধ হওয়ায় নির্বাচনের যৌক্তিকতা না থাকায় পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি।
অন্যদিকে বন্ধ ঘোষিত গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে শুনানি শুরু করেছে ইসির গঠিত তদন্ত কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ হলরুমে প্রথম দিনের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তার সঙ্গে রয়েছেন কমিটির সদস্য সচিব যুগ্ম সচিব শাহেদুন্নবী চৌধুরী ও সদস্য যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস।
শুনানির প্রথম দিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফুলছড়ি উপজেলার ১১ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৬৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট, গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালেব, ফুলছড়ি উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল সোবাহান ও ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কাওছার আলীসহ ১৩৬ জনের শুনানি গ্রহণ করেন।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন ৫০টি, রিটার্নিং কর্মকর্তা একটিসহ মোট ৫১টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে নির্বাচনের যৌক্তিকতা না থাকায় পুরো নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বন্ধ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ইসি আলমগীর জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে। আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত শুনানি করে সাতদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেবে তদন্ত কমিটি।
বিষয়: #গাইবান্ধা-৫ এর ভোটে অনিয়ম