শুক্রবার ● ২১ অক্টোবর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » এখন বিদ্যুৎ সংকট, পরে শুনবেন খাবার নেই: জি এম কাদের
এখন বিদ্যুৎ সংকট, পরে শুনবেন খাবার নেই: জি এম কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
‘একজন শ্রদ্ধেয় অ্যাডভাইজার কিছুদিন আগে হাসি হাসি মুখে বললেন, যে আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে। এখন বিদ্যুতে দিতে পারছেন না তেল কিনতে পারছেন না বলে। আমার বিশ্বাস কয়দিন পরে আবার শুনব, ধৈর্য ধরেন খাবার দিতে পারছি না, যেহেতু খাবার কিনতে পারছি না, টাকা নেই।’
জ্বালানি সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার যেভাবে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে মানুষকে ধৈর্য ধরতে বলেছে, তেমনি অদূর ভবিষ্যতে খাবারের ক্ষেত্রেও একই কথা শুনতে হতে পারে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ ও করোনা পরিস্থিতির কারণে মন্দায় পড়ার যে কথা বলা হয়, সেটি সত্য হলেও তার চেয়েও বড় সত্য হলো, গণতন্ত্রহীনতার কারণে মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। একতরফাভাবে একশ্রেণির মানুষ বড়লোক হচ্ছে, দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে তারা বিদেশে সম্পদ গড়ছে। তার ফল স্বরূপ দেশে এখন রিজার্ভ সংকট হয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বনানী কার্যালয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের জাতীয় পার্টিতে যোগদান উপলক্ষে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের আরও বলেন, ‘একজন শ্রদ্ধেয় অ্যাডভাইজার কিছুদিন আগে হাসি হাসি মুখে বললেন, যে আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে। এখন বিদ্যুতে দিতে পারছেন না তেল কিনতে পারছেন না বলে। প্রশ্ন হলো- কেন কিনতে পারছেন না? আপনাদের রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল?
‘আমার বিশ্বাস কয়দিন পরে আবার শুনব, ধৈর্য ধরেন খাবার দিতে পারছি না, যেহেতু খাবার কিনতে পারছি না, টাকা নেই।’
বিশ্বে দুর্ভিক্ষ আসছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সতর্কতার কথা বলছেন, সেটি নিয়েও কথা বলেন জাতীয় পার্টির নেতা। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সামনে খারাপ দিন আসছে, কী করতে হবে…। এখানে যা পারবেন খাদ্যের জন্য লাগান। খাদ্য উৎপাদন করেন।
‘এগুলা তো আমরাও জানি। এসব বুদ্ধি দেয়ার জন্য কি প্রধানমন্ত্রী লাগে? এসব তো আমাকে বুদ্ধি দেয়া লাগে না। কিন্তু আপনি এই পরিস্থিতিতে আসলেন কেমন করে? কেন তেল কিনতে পারবেন না, কেন চাল কিনতে পারবেন না, তার কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে জনগণের কাছে। আপনার সরকারকে দিতে হবে।’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দোষটা যেন শুধু ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ ও করোনা পরিস্থিতি। কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি ও করোনা পরিস্থিতির তো সব দেশের মানুষই মোকাবিলা করছে। সব দেশেই কি আমাদের মতো এমন অবস্থা হয়েছে?’
সামনে কৃষি উৎপাদনে ধসের আশঙ্কাও করছেন বিরোধীদলীয় উপনেতা। তিনি বলেন, ‘রিজার্ভের অভাব এবং টাকার অব মূল্যায়নের কারণে বিদেশ থেকে সার কিনতে পারছে না। কৃষকরা স্যার পাচ্ছে না। এই কারণে আগামী দিনগুলোতে ভয়াবহ রকমের খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে টান পড়া নিয়েও কথা বলেন জাতীয় পার্টির নেতা। বলেন, ‘রিজার্ভ সংকট হলে কী হয়? টাকার অবমূল্যায়ন হয়, ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ডলার যেখানে ৮০ টাকা ছিল, এখন তা ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তাও এখন ডলার কিনতে পাওয়া যায় না।
‘ডলারের অভাবে আমাদের কোনো এলসি বিদেশে নিচ্ছে না। এই ডলার সংকটের কারণে এখন বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি তৈরি করেছে ২০ হাজার মেগাওয়াট। আমাদের দরকার মাত্র ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এখন উৎপাদন হচ্ছে কখনও নয় হাজার, কখনও তার চেয়েও কম এবং এই বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থাও ঠিক মতো করে নাই।’
বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে যথেষ্ট পরিকল্পনার ছাপ ছিল না বলেও মনে করে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ যেখানে উৎপাদন করা হচ্ছে সেখানে বিদ্যুতের চাহিদা নাই, বিদ্যুৎ যেখানে চাহিদা সেখানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নাই। এই কারণে এখন বিদ্যুতের বিভ্রাট। বিদ্যুতের বিভ্রাটের কারণে কৃষি কাজের জন্য মানুষ সেচের পানি দিতে পারছে না।’
বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার আশঙ্কায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করার কথাও জানান জি এম কাদের। বলেন, ‘ঢাকা শহরের মতো জায়গায় ৪-৫ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকে না। এটা সামনে বাড়বে বলে সরকারই আশঙ্কা করছে।
‘অনেক গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লোক আমাকে বলেছে, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি চালাতে পারছে না। জেনারেটর দিয়ে চালালে একদিনে এক লাখ টাকা খরচ করতে হয়। ফলে লাভ করতে পারবে না।
‘কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে শ্রমিকরা বেকার হচ্ছে। উৎপাদন ও রপ্তানি না করতে পারলে তো আয় আরও কমবে। কোন অবস্থায় আমরা দেশকে নিয়ে গেছি!’
দেশকে এই পরিস্থিতি থেকে টেনে তুলতে ‘রাজনীতির খরা’ কাটাতে হবে বলে মনে করেন জাপা নেতা। বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনেই কাটবে সেই খরা।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। প্রত্যেকটি মানুষের দেশের উপর যে মালিকানা তা চলে আসুক। তার জন্য আমাদের সামনে কাজ করতে হবে।
‘আমরা চাই এমন সরকার হবে যাদেরকে আমরা জবাবদিহি করতে পারি। ভালো না করলে আমরা তাকে পরিবর্তন করতে পারি। এটাই হবে আমাদের সামনের দিকে রাজনীতি।’
সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না বলেও মনে করেন তিনি।
গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের সদিচ্ছা নেই। সরকার জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকার পার পাবে না।’
বিষয়: #জি এম কাদের