সোমবার ● ২৪ অক্টোবর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: উপকূলের ১৩ জেলায় আঘাতের শংকা
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: উপকূলের ১৩ জেলায় আঘাতের শংকা
# সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার গতিবেগে এগুচ্ছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং
# সোমবার মধ্যরাত বা ভোরে উপকূল অতিক্রম করবে
# মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত
# সারাদেশে লঞ্চ চলাচল ও তিন বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা
# ২৫ লাখ মানুষের জন্য ৭ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত
শাহনাজ পারভীন এলিস
বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সোমবার সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার গতিবেগে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি এলাকায় উপকূলের দিকে অগ্রসর হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই ঝড়টি গতাকল সোমবার মধ্যরাত বা ভোরের দিকে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানার আশংকা করা হচ্ছে।
অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সানাউল হক মণ্ডল সাংবাদিকদের জানান, এ ঝড়ের ব্যাস ৪০০-৫০০ কিলোমিটার। ফলে উপকূলীয় অধিকাংশ জেলা এর প্রভাবের আওতায় থাকবে। মোংলা ও পায়রার পাশাপাশি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকেও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজারের জন্য আগের মতোই ৬ নম্বর বিপদ সংকেত বহাল রয়েছে। তবে কক্সবাজারের জন্য আগের মতই ৬ নম্বর বিপদ সংকেত বহাল রয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
এজন্য মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এবং উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোকে আগের মতোই সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে এবং উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোকে আগের মতো ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
দেশব্যাপী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাব
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রায় সারাদেশেই বৃষ্টি হচ্ছে, কোথাও মাঝারি আবার কোথাও ভারী। উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টির সঙ্গে বইছে ঝড়ো হাওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি-ভারী থেকে ভারীবর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘ঝড়টি উপকূল অতিক্রমের পর মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর বৃষ্টি কমে আসতে পারে। যেহেতু খেপুপাড়া দিয়েই সিত্রাং উপকূল অতিক্রম করতে পারে, তার গতি এখনও পর্যন্ত সেদিকেই, তাই খেপুপাড়ায় বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ের প্রভাবে গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে- খেপুপাড়ায় ১৩২ মিলিমটার। এছাড়া ঢাকায় ৩৫, মাদারীপুরে ৮৬, চাঁদপুরে ৬১, হাতিয়ায় ৪৮, খুলনায় ৬৫, মোংলায় ৬০, বরিশালে ৬৭, পটুয়াখালীতে ৮৩ এবং ভোলায় ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর বাইরে রংপুর ও রাজশাহী ছাড়া দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেই কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে।
ঝড়ের প্রভাবে রাজধানীতে সকাল থেকেই চলে অব্যাহত বৃষ্টি হচ্ছে। প্রথম দিকে হালকা বৃষ্টি হলেও দুপুরের পর তা ভারী বৃষ্টিতে পরিণত হয়। সারাদিন সূর্যের দেখাও মেলেনি। ঝড়ো বাতাসের সাথে বৃষ্টিতে অফিসগামী মানুষেরা, স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরাসহ সাধারণ মানুষ যেমন বিপদে পড়ে। ছিলো রাজপথে যানবাহন সংকট। ভারী বৃষ্টির কারণে যানজটে নাকাল অবস্থা। অপরদিকে অলিগলি এমনকি অনেক বড় রাস্তায় পানি জমে ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় বিকেলেই রাতের আমেজ নেমে আসে শহরজুড়ে।
উপকূলের ১৩ জেলায় আঘাত হানার শংকা
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূলীয় ১৩ জেলায় মারাত্মকভাবে এবং দুই জেলায় হালকাভাবে আঘাত হানতে পারে বলে আশংকা জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: মো. এনামুর রহমান। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, সিত্রাং সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশে আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই। উপকূলীয় ১৩টি জেলা- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী এবং ফেনীতে সিত্রাং মারাত্মক আঘাত হানতে পারে। তবে ঝড়টি মূল আঘাত হানবে বরগুনা সদর, পাথরঘাটা এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। এছাড়া চট্টগ্রাম খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এটি আঘাত হানবে এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপ অঞ্চলগুলো বিশেষ করে মহেশখালী, সন্দীপ এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ আছে। এসব অঞ্চলের লোকদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
২৫ লাখ মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাগুলোর ৭ হাজার ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে ২৫ লাখ মানুষ ঠাঁই নিতে পারবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। তিনি জানান, সিত্রাংয়ের যে বিস্তার, তাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৩ জেলায় এ ঝড় তাণ্ডব চালাতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোয় ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিত্রাং-এর প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে চলছে তুমুল বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া। দেশের উপকূলীয় সব জেলাতেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে নোয়াখালীর উপকূলীয় তিন উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জে অন্তত ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে মানুষ। হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন জানান, দ্বীপের বান্ধাখালী, মোল্লা গ্রাম, মুন্সি গ্রাম ও মদিনা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম হোসেন জানান, সেখানে ২৪২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৩ হাজার ৫৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। হাতিয়া, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহিৃত করে ৩ লাখ লোকের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০১টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খুলনা ও বাগেরহাটে বেড়িবাঁধে ধস
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনায় বেড়িবাঁধে ধস দেখা দেয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ করে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদের যাতে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া যায়- সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঝড়ের প্রভাবে বাগেরহাটের নদ-নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বেড়িবাঁধ উপচে বা ভেঙে নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে শরণখোলা উপজেলার ৬৫ কিলোমিটার বাঁধ সুরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু মোরেলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলার দেড়শ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
মোংলা বন্দরের দেশি-বিদেশি জাহাজ ও ছোটবড় নৌযানগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জেলার ৩৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে দুই লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনা খাবার। দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য নগদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও প্রায় ৩০০ মেট্রিকটন চাল মজুদ রেখেছে জেলা প্রশাসন।
এছাড়া পিরোজপুরে প্রস্তুত ২৬০ আশ্রয়কেন্দ্র্র প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৫০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া ১৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া যাবে ১ লাখ ২৮ হাজার ২৫০ জনকে। পটুয়াখালীতে ৭০৩ আশ্রয় কেন্দ্রের সঙ্গে প্রস্তুত করা হয়েছে মুজিব কিল্লাও। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে হালকা-মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে পটুয়াখালীর উপকূল জুড়ে।
উপকূলে ১৬ লাখেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে রোববার রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলে। এর ফলে দেশের সাত জেলা এখন বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ভোলাসহ সাতটি সমিতিরই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী এই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই সময় তারা তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে চার্জ ধরে রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন।
সিত্রাং মোকাবিলায় বিদ্যুৎ বিতরণ এবং সঞ্চালন কোম্পানিকে কন্ট্রোলরুম খোলার নির্দেশ দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। একইসঙ্গে অপর এক অফিস আদেশে সব বৈদ্যুতিক স্থাপনা সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব শাকিল আহমেদের সই করা অফিস আদেশে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের আওতাধীন দফতর/সংস্থা/কোম্পানিগুলো কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আসন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ গ্রহণের আদেশ জারি করা হলো। এছাড়া ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা/তদারকির জন্য নির্মিত বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন সব বিতরণ সংস্থা/কোম্পানি ও সঞ্চালন কোম্পানিকে পৃথক পৃথক কন্ট্রোল রুম স্থাপনপূর্বক এ বিভাগকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট বন্ধ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের সর্বত্র ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সোমবার বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেছে। দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকরা সংকেত প্রচার এবং চর ও দূরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সরিয়ে আনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। সকাল থেকে টানা মাঝারি বর্ষণে বিভাগের অনেক জেলা ও উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বরিশালেও সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এতে ফোন, ইন্টারনেট যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে জরুরি রোগীদের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় সারাদেশে লঞ্চসহ সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, উপকূলীয় জেলাগুলোর নদীবন্দরে তিন নম্বর নৌ বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর অন্যান্য জেলার নদীবন্দরগুলোতে দেখানো হচ্ছে দুই নম্বর সংকেত। ঢাকায় এখন ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত রয়েছে। এই সংকেতে ৬৫ ফুটের কম দৈর্ঘের কোনো লঞ্চ চলাচল করবে না। সকালে সদরঘাট থেকে তিনটি লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, আর বরিশালের মুলাদীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় দুটি লঞ্চ। তবে ভোলা, পটুয়াখালী বা ঝালকাঠির পথে কোনো লঞ্চ ছাড়েনি।
বিআইডব্লিউটিএ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় বিআইডব্লিউটিএ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে হাসপাতালের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সিত্রাংয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত ও দুর্যোগ মোকাবেলার আশঙ্কায় পুর্ব প্রস্তুতি উপলক্ষে জরুরী ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুস্থঃ ও অসুস্থ এবংগৃহহীনদের চিকিৎসার পাশাপাশি আশ্রয় শিবিরে নেয়ার জন্য একাধিক মেডিকেল টীম গঠন করা হয়েছে। এ সকল মেডিকেল টিম হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এছাড়া দুর্গত অঞ্চলের সকল হাসপাতাল ও হেলথ কমপ্লেক্সগুলোর চিকিৎসক বয় নার্স সতর্ক রাখা ও স্বাস্থ্য সেবা সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সব জাহাজ বহির্নোঙরে
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি থেকে পণ্যবাহী ১৮টি জাহাজ বহির্নোঙরে সরিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অধিদপ্তর এই বন্দরে ৬ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বললেও সমুদ্র বন্দরের নিজস্ব সর্তকর্তা অ্যালার্ট-৩ জারি করা করা হয়েছে। বন্দরের যন্ত্রপাতি সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। সোমবার পর্যন্ত বন্দরের জেটিতে প্রায় ৩৫ হাজারের মত কন্টেইনার আছে।
সেন্ট মার্টিনে ১৩ ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত, দ্বীপে আটকা ৭০ পর্যটক
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। সোমবার সকালে বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের তোড়ে দেশের সর্বদক্ষিণের দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের উপকূলে ১৩টি ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১টি সার্ভিস ট্রলার ও ১২টি মাছ ধরার ট্রলার। তবে এতে কেউ হতাহত বা নিখোঁজ হয়নি। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেছেন, সামবার ভোর পাঁচটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব সমুদ্র উপকূলে এ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সাতটি ট্রলার সম্পূর্ণ ও ছয়টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া দমকা হাওয়ায় কিছু ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। বেশ কিছু গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দ্বীপে বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় ৭০ জন পর্যটক। কক্সবাজারগামী পর্যটকবাহী জাহাজ এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে করে মূল ভূখণ্ডে ফিরতে না পারায় তাঁরা সেন্ট মার্টিনের বিভিন্ন কটেজ ও রিসোর্টে অবস্থান করছেন।
মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মোংলা বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহনের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। বন্দরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বন্দর জটিতে থাকা সকল জাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বহির্নোঙরে।
তিন বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বিরাজমান আবহাওয়ায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার তাসনিম আহমেদ বলেছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরে সোমবার বিকাল ৩টা থেকেই তারা এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করছেন। মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ ওঠানামা করবে না। এছাড়া বিমানবন্দরগুলোতে আপৎকালীন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল
ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর কারণে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তাদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলেই ধান কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় জরুরি প্রস্তুতিমূলক সভায় এ কথা জানান কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মঙ্গলবার যেসব পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, তা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ছাড়া অন্যান্য দিনের পরীক্ষার সূচি অপরিবর্তিত রয়েছে।স্থগিত সব পরীক্ষার নতুন সূচি শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিষয়: #ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: উপকূলের ১৩ জেলায় আঘাতের শংকা