বুধবার ● ২ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » খালেদা জিয়ার আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ আইনিভাবে পরীক্ষা করে দেখা হবে: সিইসি
খালেদা জিয়ার আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ আইনিভাবে পরীক্ষা করে দেখা হবে: সিইসি
# এ দফায় উপজেলা-পৌরসভা-ইউপির ভোটে কোন অনিয়ম দেখা যায়নি
# কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে গাইবান্ধা-৫ নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত জানানো হবে
বিশেষ প্রতিনিধি
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না সেটা সময় এলেই নির্বাচন কমিশন আইনিভাবে পরীক্ষা করে দেখবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বেশকিছু উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ভোট সিসিটিভিতে পর্যবেক্ষণকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেছেন তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন, সে সুযোগ আছে কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর এখন দেব না। এটা যখন হবে দেখা যাবে। সবকিছু আইন অনুযায়ী হবে। এখন অ্যাডভান্স কোন কথা বলতে পারব না।’
সিইসি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। যিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন। আপনি দাঁড়ান যে-ই দাঁড়ান আমরা তার বিষয়টি আইনানুগভাবে পরীক্ষা করে দেখব। আমাদের আইনের কিছু কাঠামো আছে। কেউ ভোট করতে চাইলে ওই কাঠামোর মধ্যে ফিটিং করতে হবে। ওদিক দেখে কী হবে তা জানি না। কাজেই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। সময় আসুক সব খতিয়ে দেখব। তখন সব জানাব। এখন এত আগে কোনো কথা বলা ঠিক নয়।’
দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। প্রার্থিতা বাছাইয়ে তার সবটিই বাতিল হয়েছিল। পরে আপিল করলেও তা টেনেনি।
এসময় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদেরও স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু এর সঙ্গে একটি বিষয় জড়িত আছে। তা হলো যারা আগ্রহী তাদের ভিসা পেতে হবে। এর সঙ্গে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সরকার স্বচ্ছ নির্বাচন চান। সে ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সহযোগিতা করবেন।’
উপজেলা-পৌরসভা-ইউপির ভোট প্রসঙ্গ
বুধবার অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের বেশকিছু উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের ভোটের ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এ দফায় ভোট গ্রহণে কোন অনিয়ম তাদের কাছে ধরা পড়েনি। ভোট বেশ ভালোই হয়েছে। কোন সহিংসতা, উচ্ছৃঙ্খলা বা এ ধরনের কোনরকম দৃশ্য আমরা দেখিনি বা অভিযোগ পাইনি। নির্বাচন কেন্দ্র বা আশপাশের এলাকায় কোন উচ্ছৃঙ্খলা দেখিনি। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সংযমের সঙ্গে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন।’
সিইসি হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে যে পর্যবেক্ষণটা করছি, আমাদের চোখে কোন অনিয়ম ধরা পড়ে নাই। সুশৃঙ্খলভাবে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রের বাহিরে এবং ভেতরে অপেক্ষমাণ দেখছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি কেন্দ্রের ভেতরে ও ভোটকক্ষে নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করে সবাই ভোট দিচ্ছেন।’
বুধবার দেশের ৭ উপজেলা, ৪ পৌরসভাসহ শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে ভোট গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে ৩ উপজেলায় সাধারণ নির্বাচন আর বাকি ৪ উপজেলায় হয় উপনির্বাচন। এছাড়া ১৯ ইউপিতে সাধারণ নির্বাচন এবং ১২ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের পাশাপাশি ৩৬ জেলার ৫২টি উপজেলার ৫৮ ইউনিয়ন পরিষদের মোট ৬০ সদস্যপদে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। তবে সিসিটিভির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা হয় কেবল ৪টি পৌরসভায় ।
কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে ৪ পৌরসভার ভোট আমরা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করছি। তবে অন্যগুলোয় আমরা সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখি নাই। সেগুলো ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবিও দেখছি। নির্বাচন বেশ শান্তিপূর্ণ ছিলো।’ সিসিটিভি থাকার কারণে ভোটকেন্দ্রের পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা দেখা সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এসব ভোটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আইডিইএ প্রকল্পের ডিপিডি কমিউনিকেশনস স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম জানান, এবারের পৌরসভা নির্বাচনও নির্বাচন কমিশনের পঞ্চম তলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটর করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনাররা সকাল থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সবমিলিয়ে মোট ৫০৫টি সিসিটিভির মাধ্যমে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এ দফায় ভোটগ্রহণ করা হয় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, জামালপুরের হাজরাবাড়ী, দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভায়। এই চার পৌরসভার ৩৬টি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছিলো ৬২টি। সব মিলিয়ে ভোটগ্রহণ করা হয় ৩৮৩টি ভোট কক্ষে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ও সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলা পরিষদেও ভোট গ্রহণ করা হয়। আর চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন হয় নেত্রকোণা সদর, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চিলমারী এবং কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায়। এছাড়া ১১ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন এবং ৫৮ ইউপির বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে উপনির্বাচনও একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়।
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন প্রসঙ্গ
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়েছি, এটা সত্য। তবে রিপোর্ট নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি এবং আমরা বসতে পারিনি। তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে আপনাদের যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় পুরো আসনের এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অনিয়মে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। সেই কমিটি গত ২৭ অক্টোবর তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বুধবারই তার দায়িত্বে যোগ দিয়েছেন। জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে পদোন্নতি দিয়ে ইসি সচিব হিসেবে ঘোষণা দেয় সরকার। অন্যদিকে আগে ইসির এই দায়িত্ব থাকা হুমায়ুন কবীর খোন্দকারকে পাঠানো হয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে।
বিষয়: #সিইসি: খালেদা জিয়া