শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
বৃহস্পতিবার ● ১০ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » নিউমোনিয়ায় বছরে ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যু
প্রচ্ছদ » জাতীয় » নিউমোনিয়ায় বছরে ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যু
৩২২ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১০ নভেম্বর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নিউমোনিয়ায় বছরে ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যু

---
বিশেষ প্রতিনিধি
রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি (হাইপক্সেমিয়া) বিশ্বজুড়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের অত্যন্ত জটিল একটি সমস্যা। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়া নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপক্সেমিয়ায় ভোগে। যার ফলে দেশে প্রতিবছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়; যা সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য।
গতকাল বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে ‘মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তা’ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবি’র মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৭ কোটি ৩০ লাখ মারাত্মক অক্সিজেন ঘাটতিতে ভোগেন। যার মধ্যে শিশুই তিন কোটি ২০ লাখ।
ডা. এহসানুর রহমান উল্লেখ করেন, হাইপক্সেমিয়ায় আক্রান্ত যে কোন রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসাবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিস্থিতিতে হাইপক্সেমিয়া ঘটতে পারে - শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত নবজাতক থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস এবং যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), হৃদরোগ এবং হাঁপানিসহ আরো অনেক। এনেস্থেশিয়া সহ প্রায় সব ধরনের বড় অস্ত্রোপচার কালে অজ্ঞান করবার সময়ও মেডিকেল অক্সিজেন অপরিহার্য।
তিনি বলেন, আমাদের চারপাশের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ২১ শতাংশ এবং আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিই তাতে আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমাণ শুধুমাত্র ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু যাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কম তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়।
বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসালিটি সার্ভে-২০১৭ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এক চতুর্থাংশেরও কম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে তিনটি অক্সিজেন উৎসের যে কোনো একটি রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বিদ্যমান ছিল, মাত্র ২১ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে ফ্লো-মিটারসহ অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার পাওয়া গিয়েছিল। মাত্র ৬ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে অক্সিজেন সরবরাহ বা বিতরণের ব্যবস্থা এবং পালস অক্সিমিটার ছিল।
২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে পরিচালিত আইসিডিডিআরবি’র নেতৃত্বাধীন আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৬০টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ৭২ শতাংশ হাসপাতালে পালস অক্সিমেট্রি যন্ত্রটি রয়েছে এবং মাত্র ৭ শতাংশের ক্ষেত্রে আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস এনালাইসিস (রক্তে অক্সিজেন, কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমান, অক্সিজেনের ঘনত্ব, এসিড-ক্ষারের ব্যালেন্স ইত্যাদি পরিমাপ করার পরীক্ষা) করার ব্যবস্থা রয়েছে। অক্সিজেন সিকিউরিটি প্রদানের জন্য অক্সিজেনের অন্যান্য উৎসের ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ হাসপাতালের কাছে অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর যন্ত্র, ২ শতাংশের বন্ধ স্টোরেজ ট্যাঙ্কে তরল অক্সিজেন ছিল এবং ৩ শতাংশের ক্ষেত্রে উক্ত হাসপাতালে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট ছিল।
এছাড়াও সেন্ট্রাল ও সার সেন্ট্রাল পাইপিং শুধুমাত্র ১৭ শতাংশ জেলা হাসপাতালে বিদ্যমান ছিল এবং ২০ শতাংশ জেলা হাসপাতালে পরিদর্শনের দিনে ফেল-স্প্লিটার উপস্থিত ছিল। এক-চতুর্থাংশ জেলা হাসপাতালে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনসহ লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, যেখানে মাত্র ৭% জেলা হাসপাতাল নন-ইনভেসিভ এবং ইনভেসিভ দু ধরণের ভেন্টিলেশনের সাথেই বেসিক অক্সিজেন থেরাপি প্রদান করতে পারে।
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআরবি’র নিউট্রিশন এন্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস ডিভিশনের সিনিয়র বিজ্ঞানী (হাসপাতাল) ডা. মোহাম্মাদ জোবায়ের চিশতি বলেন, যখন কোডিড-১৯ মহামারী বিশ্বে আঘাত হানে, তখন হাসপাতালে রোগীদের একটি বড় ঢেউ ভর্তি হয়েছিল অক্সিজেনের প্রয়োজনে। সারা বিশ্বেরই সকল আকার-আকৃতির স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রসমূহ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলো অক্সিজেনের আকাশচুম্বী চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিলো। যদিও ওই সময়ে বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পালস অক্সিমিটার এবং বাবল সি-প্যাপের মতো স্বল্প মূল্যের উদ্ভাবনমূলক হস্তক্ষেপ সমূহকে গ্রহণ করবার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনে ইউএসএইডের ইভালুয়েশন অ্যান্ড লিনিং অ্যাডভাইজার ও সিনিয়র রিসার্চার ড. কান্তা জামিল,  ইউএসএইডের ড. ফিদা মেহরান, আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র ডিরেক্টর (এমসিএইচডি) ডা. শামস এল আরেফিন, হেড অব রিসার্চ (এমসিএইচডি) ড. কামরুন নাহার, ডাটা ফর ইমপ্যাক্টের কান্ট্রি লিড ডা. মিজানুর রহমান এবং নলেজ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট সুস্মিতা খান।



বিষয়: #



আর্কাইভ