বৃহস্পতিবার ● ১০ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » সংশোধন হচ্ছে ভোক্তা অধিকার আইন, দ্বিগুণ হবে জরিমানা
সংশোধন হচ্ছে ভোক্তা অধিকার আইন, দ্বিগুণ হবে জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এ যেসব অপরাধে জরিমানার বিধান রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশ দ্বিগুণ করে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন আইনে শাস্তির আওতা বাড়ছে না। শাস্তি যথেষ্ট নয়, সেজন্য আরও অনেক আইন আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অবহিতকরণ’ বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় মহাপরিচালক বলেন, ‘ভোক্তার অধিকার রক্ষায় আমরা বিভিন্ন জায়গায় র্যাপিড অ্যাকশন নিই। কিন্তু সেটা প্রশাসনিক আইন, জুডিশিয়াল আইন নয়। আইন কঠোর হওয়া প্রয়োজন এবং আমরা সেই চেষ্টা করছি। এছাড়া নতুন আইনে জরিমানার পরিমাণগুলো দ্বিগুণ করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, ভোক্তা অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো সঠিক তথ্যের অভাব। এই সংস্থার তথ্যের বৈধ উৎস নেই। ভোক্তা বা ব্যক্তিগত উৎস থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, অনেক সময় সেগুলোর সঠিকতা যাচাই করারও সুযোগ তাদের থাকে না।
সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে আমাদের আভিযান নিয়মিত চলছে। আমাদেরও বেশকিছু দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো ফিল্ড পর্যায়ে আমাদের শক্তিশালী সোর্চ বা ইনফরমার না থাকা। এ জন্য আমরা দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যেন তাদের গোয়েন্দা সোর্চ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আমাদের অবহিত করে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছি। তবে জনবল সংকট আছে। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি অপারেশন করে। তবে দেশের বাজার এতটা বিস্তৃত, এর ১০ গুণ কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তা যথেষ্ট নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, প্রসাধনীর ক্ষেত্রে প্রতারণার বিষয়টা ভয়াবহ। কেননা বৈধভাবে এ ব্যবসায় ব্যবসায়ীদের অনীহা আছে। সঠিক পরিমাণে ভ্যাট দিয়ে, অন্যান্য সব ঠিক রেখে বৈধভাবে ব্যবসা করে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না বলছেন অনেকে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও কিছু প্রোডাক্ট তৈরি করা হচ্ছে।
রেস্তোরাঁর খাবারের মান ও দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য বলতে যা বোঝায়, তা কোনো রেস্টুরেন্টই সার্ফ করে না। কোনো সুরক্ষার মানদণ্ডই তারা মানে না। কোনো না কোনো সমস্যা তাদের আছেই। অনেকেই চান ভোক্তা অধিদপ্তর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। কিন্তু আমরা এখনো সেভাবে প্রস্তুত না। প্রশাসনিক আইন জুডিশিয়াল আইন নয়। আইন কঠোর হওয়া প্রয়োজন এবং আমরা সেই চেষ্টা করছি। ভোক্তা অধিদপ্তরের অফিসাররা মাজিস্ট্রেট নন, তাদের বিচারিক ক্ষমতা নেই। তারা শুধু এ আইনে জরিমানা করতে পারেন। মামলা করতে পারেন বাদী হয়ে। নিজে শাস্তি দিতে পারেন না।
মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘ভোক্তারা প্রতারিত হতে হতে এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, এখন অধিকার খর্ব হচ্ছে, সেটাই আর বুঝতে পারে না। তথ্য অনুযায়ী তেলের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সংকট হয়েছে। কোম্পানিগুলো উৎপাদন কমিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সরবরাহ আদেশ ধরে রাখছে। এক কথায় এই বাজারে একধরনের মনোপলি বা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। একজন ভোক্তার ভোগ করার যে অধিকারগুলো আছে, তা আমরা জানতে চাই। ভোক্তা অধিকার সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে সুষ্ঠু সমাজ গড়ে উঠবে। রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণের ঠিক তেমনিভাবে ভোক্তাদেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে।’ এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে জোড়ালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা সবাই দিনশেষে ভোক্তা। বাজারে পণ্য কিনতে গেলে আমাদের নিজের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে। আইনে কী আছে, সেটা জানতে হবে। ভোক্তা আইনটি এখন সংস্কার প্রয়োজন। আইনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তবে এ সংস্থা এখন ভালো কাজ করছে, প্রতিষ্ঠানটি কোন দল দেখে না। প্রতিষ্ঠানের মালিক কে সে খোঁজ নেয় না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়। সাংবাদিকরাও একসঙ্গে একই কাজ করেন।’ তিনি বলেন, নিজের অধিকার সম্পর্কে ভোক্তাকে আরও সচেতন হতে হবে। প্রতারিত হলে অভিযোগ দিতে হবে। এই আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রচারের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা ভূমিকা রাখছেন, ভবিষ্যতেও রাখবেন; যাতে সাধারণ মানুষ প্রতারণার প্রতিকার পায়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন।
বিষয়: #দ্বিগুণ হবে জরিমানা #সংশোধন হচ্ছে ভোক্তা অধিকার আইন