সোমবার ● ১৪ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি
খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি
নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা ফেরত না দেওয়ার কারণে বেড়েই চলেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। আর এক বছরে বেড়েছে ৩৩ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে; যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এযাবৎকালে এটিই সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের অঙ্ক। গতকাল রোববার (১৩ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এরমধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
দেশের ব্যাংক খাতে লাগামহীন খেলাপি বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে সংস্থাটির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যদিও আইএমএফের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ত্যাগ করার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের এই তথ্য প্রকাশ করলো।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির সময় ব্যাংক ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ছাড় ও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা। বছরের শুরুতে তা তুলে নেওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখন উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। কারণ, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ একলাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা বলা হলেও এর বাইরে অবলোপন করা খেলাপি ঋণ রয়েছে আরও প্রায় অর্ধলাখ কোটি টাকা। এছাড়া উচ্চ আদালতে রিট করে অনেক ঋণ নিয়মিত করে রাখা হয়েছে। ফলে আসলে কত টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য কোনও তথ্য নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক খাতের সঠিক হিসাব করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াই থেকে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বরের সঙ্গে তুলনা করলে খেলাপি ঋণ ৩৩ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বেড়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা; যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক তাদের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ড. গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়ার কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘খেলাপি কমাতে হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। ডাউনপেমেন্ট দিয়ে খেলাপি নিয়মিত করার সুযোগ দিলে খেলাপি ঋণ কমবে না। তবে যাদের সমস্যা আছে তাদের বিষয়ে ‘ম্যান টু ম্যান’ জেনে পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশে আসা আইএমএফ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন খেলাপি বাড়ছে? খেলাপি কমাতে কী উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? খেলাপিদের শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে কিনা? এসময় ব্যাংকিং খাতে সুশাসন (বাসেল-ত্রি), খেলাপি ঋণ সংজ্ঞায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করার তাগিদ দেয় আইএমএফ।
বিষয়: #খেলাপি ঋণ