শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
বুধবার ● ১৬ নভেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই : অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ
প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই : অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ
৩৭৯ বার পঠিত
বুধবার ● ১৬ নভেম্বর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই : অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ

 ছবিতে- ড. আবুল বারাকাত, ড. আহসান এইচ মনসুর, ড. মোস্তাফিজুর রহমান

# কৌশলের পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ

শাহনাজ পারভীন এলিস

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আবহাওয়া পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক নানা কারণে আগামী ২০২৩ সালটি কেমন হতে পারে? আসছে বছরে দুর্ভিক্ষসহ বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি কী পর্যায়ে যেতে পারে- তা নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়েও চলছে নানা আলোচনা। সয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সভায় আগামী ২০২৩ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে কিছু শংকা ও নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সাথে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।

বৈশ্বিক এসব সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের করণীয় নানা দিক নিয়ে স্বদেশভূমির সাথে কথা বলেছেন অর্থনীতিবদিসহ বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, দুর্ভিক্ষসহ বৈশ্বিক যে কোন সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়াতে কৃষি ও শিল্পখাতে ভর্তুকি, যে কোন মূল্যে নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি মনে করছেন তারা।

ড. আবুল বারাকাত, বিশিষ্ট অর্থনীবিদ এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি

বিশিষ্ট অর্থনীবিদ এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারাকাত বলেছেন, অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সবার আগে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে মানুষের জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যক নিত্যপ্রয়োজনীয় ৮ থেকে ১০টি পণ্য চিহ্নিত করে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। ভর্তুকি দিয়ে হলেও সেসব পণ্যের দাম সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দিতে হবে। সংকট থাকলেও কৃষি ও শিল্প খাতের বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে; যাতে উৎপাদনে বিঘ্ন না ঘটে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল রাখতে হবে; যাতে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কর্মহীন না হয়ে পড়ে। ব্যয় সাশ্রয়ে নতুন করে আর কোন ধরনের মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া যাবে না। রিজার্ভ ধরে রাখা, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আনারও উদ্যোগ নিতে হবে।

অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে অনেক পরিমাণ খাদ্য আমদানি করার অনুমোদন দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় শর্তগুলো সহজ করা জরুরি। খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে উৎস করজাতীয় কিছু করের বিষয়ে নমনীয় হওয়া এবং খাদ্য পণ্যের মজুদ সবসময় ভালো অবস্থায় রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।

আসছে বছর বাংলাদেশের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বিশ্ব পরিস্থিতি- দুই দিক থেকেই ঝুঁকি আছে বলে মনে করছেন এই বিশ্লেষক। আহসান এইচ মনসুর বলেন, অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। রপ্তানি ও প্রবাস আয়ে শ্লথগতি। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদা থাকলেও কলকারখানা উৎপাদন করতে পারছে না। ডলার সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলসহ জ্বালানি তেল আমদানিতে রাশ টানা হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ সংকট হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। আবার শিল্পে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের আগে অগ্রাধিকার খাতগুলো নির্ধারণ করতে হবে।

ড. আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট

তিনি বলেন, বিপুল অঙ্কের টাকা ধার করে আমরা বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু বাজার তো ঠিকই জানে আমাদের অর্থনীতি একটা সমস্যার মধ্যে পড়েছে। আমাদের একটা ফিন্যান্সিং গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। মুদ্রাবাজারে ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার অনেক বেড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগে থেকেই একটা কৌশলগত ভুল ছিল। ভারতের মতো আমরা টাকার মান ধীরে ধীরে অবমূল্যায়ন না করে জোর করে টাকার বিনিময় হার ধরে রাখা হয়েছিল। ফলে বিশাল একটা চাপ এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছিল। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন তাই অনেক বেশি করতে হয়েছে। ভারতে যেখানে ১১ শতাংশ হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে হয়েছে ২৫ শতাংশ। আর খোলাবাজারে অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

সরকারি গুদামগুলো ভরতে হবে বাইরে থেকে আমদানি করে ধানে। এছাড়া সরকারের খাদ্য কর্মসূচিও আমদানি করা চাল দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের বাজার থেকে চাল কিনে খাদ্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গেলে বাজারের ওপর চাপ পড়বে। শতভাগ আমদানি করা চাল দিয়ে খাদ্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে মূল্যস্ফীতির উন্নতি হবে। ধান ও চাল আমদানি করতে হবে সরকারের নিজের জন্যই। সেটা আগে থেকেই করতে হবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে বা হতে পারে এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। তবে খাদ্য নিরাপত্তা আমাদেরই করতে হবে। এজন্য খাদ্যের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা দুদিকেই নজর দিতে হবে।

সবাইকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশে এখনও ক্রাইসিস তৈরি হয়নি। তবে আমরা কিছুটা ‘ডিফিকাল্ট সিচুয়েশনে’র মধ্যে আছি। ক্রাইসিস সিচুয়েশনে যাওয়ার আগেই আইএমএফের প্রোগ্রামে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য খুবই ইতিবাচক হয়েছে। আমি আশা করি, আইএমএফ-এর প্রোগ্রামের কারণে এর উন্নতি হবে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে আমরা আরও বড় আকারে অর্থ সহায়তা পাবো বলে আমি আশা করি। আমাদের এখনই কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ- সিপিডি’র বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির সংকট আগামী বছরেও যাবে না বলেই সবাই পূর্বাভাস দিচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে থাকবে না। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, কয়লা ও এলএনজির দামও শিগগিরই কমবে না। ফলে বিদ্যুৎ খাতের সংকট মিটছে না; বরং এই সংকট বেসরকারি খাতে উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে চাহিদাও হ্রাস পাওয়ায় বাজারে বিক্রি কমে গেছে। ফলে বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। তাই দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। দেশের টাকা যাতে বাইরে না যায় বা পাচার না হয় সেজন্য আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। সবমিলিয়ে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইনের প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করতে পারলে পরিস্থিতি যাই আসুক মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

দেশের মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। বর্তমানে এর হার ৯ দশমিক ১ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস হলো ২০২৩ সালে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ হবে। এর মানে, মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভবিষ্যতেও স্বস্তির খবর নেই। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) এর সাম্প্রতিক এক জরিপের তথ্য বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ পরিশোধের সংকট এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিই হচ্ছে আগামী দুই বছরের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো মূল্যস্ফীতি কমাতে যেভাবে সুদহার বাড়াচ্ছে, তাতে মন্দা অবশ্যম্ভাবী বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।



বিষয়: #



অর্থনীতি এর আরও খবর

আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর
১৩ দিনে ই-কমার্সের ক্ষতি ১৭শ’ কোটি টাকা : ই-ক্যাব ১৩ দিনে ই-কমার্সের ক্ষতি ১৭শ’ কোটি টাকা : ই-ক্যাব
গ্রামে বসেই পাওয়া যাবে বিডিটিকেটস-এর দূরপাল্লার বাসের টিকেট গ্রামে বসেই পাওয়া যাবে বিডিটিকেটস-এর দূরপাল্লার বাসের টিকেট
দারুণ অফারসহ ভিভোর নতুন স্মার্টফোন ভিভো ওয়াই১৮ দারুণ অফারসহ ভিভোর নতুন স্মার্টফোন ভিভো ওয়াই১৮
ঢাকাপ্রকাশ ও ইমপ্যাক্ট এশিয়ার সমঝোতা স্মারক ঢাকাপ্রকাশ ও ইমপ্যাক্ট এশিয়ার সমঝোতা স্মারক
বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও বীমা খাত একই সূত্রে গাঁথা বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও বীমা খাত একই সূত্রে গাঁথা
ই-কমার্স তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে : স্পিকার ই-কমার্স তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে : স্পিকার
প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফির জন্য ভিভো ভি২৯ ও ভি২৯ই প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফির জন্য ভিভো ভি২৯ ও ভি২৯ই
এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে আজ ভোটগ্রহণ এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে আজ ভোটগ্রহণ
কাগজবিহীন আন্তঃবাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: থাইল্যান্ডে বাণিজ্য সচিব কাগজবিহীন আন্তঃবাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: থাইল্যান্ডে বাণিজ্য সচিব

আর্কাইভ